ফুলবাড়িয়া ( ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
ফুলবাড়িয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়ার্ডের বেডে শুয়ে কাতরাচ্ছে ৮ বছরের শিশু তানিয়া আক্তার । সারা শরীরে তার ব্যাথা। ৫ মাস পর মাকে দেখতে পারলো সে। সারা শরীর তানিয়ার ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলা হয়েছে, ব্লেড দিয়ে আছরানো অন্তত কয়েকশো দাগের চিহ্ন চোখে পড়বে যে কারোরই ।
হৃদয় বিদারক ন্যক্কার জনক ঘটনাটি ঘটে ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার কুশমাইল ইউনিয়নের পানের ভিটা গ্রামের হতদরিদ্র চা বিক্রেতা তাজিম উদ্দিনের ৮ বছরের ছোট্ট মেয়েটির সাথে। প্রায় পাঁচ মাস বিনা পারিশ্রমিকে গৃহ পরিচারিকার কাজ করিয়ে টাকা তো দেইনি উল্টো পাঁচ মাস আটকে রেখে অমানুষিক্র নির্যাতন করে বলে অভিযোগ উঠে গৃহকর্তা সাইফুল ইসলামের স্ত্রী আসমার বিরুদ্ধে। নির্যাতনকারী আছমার স্বামী সাইফুল ইসলাম ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্মচারী বলে জানাগেছে । আছমা ও সাইফুল দম্পতির ময়মনসিংহ শহরের ভারাটিয়া বাসায় তানিয়া নির্যাতনের শিকার হয় গত ৫ মাস ধরে।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে শিশু তানিয়া বলেন, আমারে যহন খুশি তখনই মারধর করতো। মারনের সময় হাতে একটা বেলেড (ব্লেড) লইয়া আমার শরীরে আঘাত করতো। আর কইতে মজা দিমু তুই আরো আঘাত করতে দে, পাঁচ মাস ধইরা আমারে এই রকম করে নির্যাতন করছে আসমা আপায় আরও এক মাইয়া। আমার গোপন জায়গায় বেলেড দিয়া কাটছে, আমারে ঠিক মত খাইতেও দেয় নাই। কাইলকাও এই হাতে বেলেড দিয়া টান দিয়া হাত কাটছে।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অসুস্থ অবস্থায় শিশু তানিয়াকে বাড়ির কাছে ফেলে রেখে পালিয়ে যায় এই দম্পতি। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তানিয়ার বাবা-মাকে খবর দেয়া হয় এবং ট্রিপল নাইনে ফোন করলে ফুলবাড়িয়াা থানা পুলিশ এসে অসুস্থ অবস্থায় তানিয়েকে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। হাসপাতালের কত্যব্যরত চিকিৎসক ডাঃ সাবিনা ইয়াছমিন বলেন, শরীরেরতো অসংখ্য দাগ রয়েছে এছাড়াও তার গোপনাংগেও ব্লেডের কাটা দাগ রয়েছে।
এ ঘটনা বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুত্রবার রাতেই ময়মনসিংহের কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি ফুলবাড়িয়া থানা পুলিশের সহায়তায় আইনী সহায়তা প্রদানে নির্যাতিত শিশু তানিয়াসহ তার বাবাকে ময়মনসিংহ শহরের কোতয়ালী মডেল থানায় নিয়ে আসেন। রাতেই শিশু তানিয়ার বাবা তাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে নির্যাতনকারী আসমা আক্তার কে প্রধান আসামি করে মোট ৩ জনের নামে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলার অন্যান্য আসামিরা হলেন আসমার বোন নিটু ও সোহাগ।
মামলার প্রধান আসামি আসমা আক্তার গর্ভবতী থাকায় তিনি পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন এবং অন্যান্য আসামিরা পলাতক রয়েছেন বলে জানায় ময়মনসিংহ কোতয়ালী থানা পুলিশ।
এ বিষয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি শাহ কামাল আকন্দ জানায়, গতকাল শুক্রবার রাতে শিশু তানিয়ার নির্যাতনের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার প্রধান আসামি আসমা সহ তিন জনের নামে মামলা হয়। কিন্তু আসামি আসমা গর্ভবতী থাকা এবং তার ডেলিভারি ডেট রোববার হওয়ায় তাকে এই মুহূর্তে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। তিনি আমাদের নজরদারিতে আছেন এবং মামলার বাকি আসামিদের ধরার জন্য জোর প্রচেষ্টা চলছে।