ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
আপোষে জমি বিক্রি না করায় আদালতের নিষেধাজ্ঞার পরও নারকীয় তান্ডব চালিয়ে ফার্মেসীসহ ৪ দোকান ও ২০ টি বসতঘর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার মোক্ষপুরে আকিজ সিরামিক্স কোম্পানীর বিরুদ্ধে। এতে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে ২৫ পরিবার। জেলার ভালুকা অঞ্চলের ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের উপস্থিতিতে স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ওই তান্ডব চালিয়েছে জানিয়েছেন ভোক্তভোগীরা। পরে ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলে ঘটনাস্থলে ত্রিশাল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে বন্ধ হয় ওই তান্ডব। অবশ্য তার আগেই শেষ হয় ধ্বংসলীলা।
স্থানীয় এলাকাবাসি সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মোক্ষপুর ইউনিয়নের মোক্ষপুর এলাকায় আকিজ সিরামিক্সের বিপরিতে আবুল কালাম তার পৈতৃক সম্পত্তিতে দীর্ঘদিন যাবত বাড়িঘর নির্মান করে বসবাস করে আসছিলেন। কিছু রুম আকিজসহ অন্যান্য ফ্যাক্টরিতে কর্মরত শ্রমিকরা ভাড়ায় বসবাস করেন। বসতবাড়ির সামনের দিকে ফার্মেসীসহ ৪ টি দোকানে ক্ষুদ্র ব্যবসাও করছিলো। বেশ কয়েক বছর আগে আকিজ গ্রুপ আবুল কালামের বসতবাড়ির পিছনে জমি ক্রয় করে স্থাপনা নির্মাণ করে অবকাঠামো সম্প্রসারিত করে। মাঝখানে পড়ে যান আবুল কালাম। আর আবুল কালামের ওই জমি নিজেদের দখলে নিতে আকিজের স্থানীয় দালালরা নানাভাবে হুমকি দিয়ে যাচ্ছিলো। জমির বৈধতার কোন কাগজপত্র ছাড়াই গত তিনমাস পূর্বে ওই জায়গা ছাড়ার জন্য আবুল কালামকে নোটিশ প্রদান করে আকিজ গ্রুপ। উপায়ন্তর না পেয়ে আবুল কালাম ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদালতের শরাপন্ন হয়ে নিষেধাজ্ঞার আবেদন করলে আদালত কোন প্রকার হয়রানি না করার নির্দেশ দেন।
আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে শনিবার সকাল ১১টার দিকে আকিজ কোম্পানীর জমি বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত স্থানীয় মধ্যস্থতাকারী প্রভাবশালী দালালরা গুন্ডা বাহিনী নিয়ে ডাকাত সর্দার আতিকুল, শফিকুল, শাহী, আলাল, জসিম উদ্দিনের সহযোগিতায় তিনটি বোল্ডডোজার নিয়ে ভেঙে গুড়িয়ে দেয় কালামের ঘরবাড়ি ও দোকানপাট। এসময় ভোক্তভোগি অসহায়রা অন্ততঃ মালামাল সরানোর ঘন্টাখানেক সময় চেয়ে আহাজারি করলেও উপস্থিত ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের সদস্যরা তাদের ধাওয়া করে। পরে আবুল কালামের ছেলে মাহবুব ৯৯৯ নাম্বারে কল দিলে ঘটনাস্থলে যান ত্রিশাল থানা পুলিশ। ত্রিশাল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে থামে তান্ডব। ঘটনাস্থল থেকে সরে যায় হামলাকারীরা। ভাংচুরের সময় লুট হয় বসতঘর ও চারটি দোকানের মালামাল। ফ্রিজ, টিভি ও অন্যান্য আসবাবপত্রসহ ভাংচুর ও লুটে কোটি টাকার ক্ষতির সম্মূখীন হন সেখানে বসবাসকারীরা।
সরেজমিন ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, আবুল কালামদের বসতবাড়ির দু’পাশে আকিজ গ্রুপের বিভিন্ন স্থাপনা। কে বা কারা দোকানপাটসহ বসতবাড়ি গুড়িয়ে দিয়েছে। ফ্রিজ টিভিসহ আসবাবপত্র গুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে।
এ সময় দোকান ভাড়াটিয়া সিদ্দিক, মোজাম্মেল, আসাদ জানান, বলা নেই, কওয়া নেই, আচমকা প্রায় শতাধিক লোকের বাহিনী এসে অস্ত্রের মুখে আমাদেরকে দাঁড় করিয়ে মালামালসহ দোকানপাট ভেঙে গুড়িয়ে দেয়।
মাজহারুল, হোসেন, রাসেল, রনি ও শিউলিসহ অন্যারা ভাড়াটিয়ারা জানান, আমরা সকালে অফিসে চলে গেলে হঠাৎ করে বোল্ডডোজার দিয়ে আমাদের বসতঘরের সবকিছু ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে। ভাংচুরকারীরা যদি জমির প্রকৃত মালিকও হয়, তবে নোটিস না দিলেও মালামাল সরানোর সময়টুকু তো দিতে পারতেন।
জমির মালিক আবুল কালাম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় দালালদের সহযোগিতায় আমার জমি দখলের চেষ্টা করছিলো আকিজ কোম্পানী। স্থানীয় প্রভাবশালীদের মাধ্যমে হুমকিও দিয়ে আসছিল। আদালতের সহায়তাও চেয়েছি। আদালত হয়রানি বন্ধের নির্দেশও দিয়েছে। তবু আজকে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশ ও ত্রিশাল পৌর মেয়র এবিএম আনিছুজ্জামানের উপস্থিতিতে স্থানীয় প্রভাবশালী আতিকুল, শফিকুল, আলাল ও জসিম উদ্দিন ভাড়াটিয়া গুন্ডাপান্ডা নিয়ে বোল্ডডোজার দিয়ে বাড়িঘর ও দোকানপাট ভাংচুর ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে সবকিছু লুট করে নিয়ে গেছে। পরে ৯৯৯ ফোন দিলে থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে এলেও তার আগেই সব শেষ হয়ে গেছে।
এ ব্যাপারে আকিজ সিরামিক্সের কর্মকর্তা মামুনের (০১৮১৬-৩৭১১৫৬) নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে জানতে শিল্প পুলিশের এসপি মিজানুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, গত বৃহস্পতিবার আকিজ সিরামিক্স আইনশৃংখলা বিঘ্ন ঘটার সম্ভাবনার কথা বলে সহযোগিতা চাওয়ায় আমরা টিম পাঠিয়েছি। পুলিশ যদি নিরীহ মানুষের ঘর ভাঙচুরে সহযোগিতা করে থাকে তাহলে তদন্তে করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ত্রিশাল থানা ওসি (তদন্ত) সুমন চন্দ্র রায় বলেন, আমি ৯৯৯ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাংচুর দেখতে পেয়েছি। তবে ঘটনাস্থলে কাউকে পাইনি। বাদীর অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।