শাহ্ আলম ভূঁইয়া, প্রধান প্রতিবেদক, নান্দাইল আঞ্চলিক অফিস :
বিশ্বসেরা গবেষকদের তালিকায় স্থান পেয়েছেন ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার কৃৃতি সন্তান ড. মো. আমিনুল হক আকন্দ।
তিনি নান্দাইল উপজেলার শেরপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের মরহুম আব্দুল কাদের আকন্দ ও মরহুমা রাশেদা বেগমের পুত্র। ড. মো. আমিনুল হক আকন্দের ডাক নাম হেলাল। গ্রামবাসী তাঁকে ওই নামেই চিনেন।
অ্যালপার ডগার (এডি) সায়েন্টিফিক ইনডেক্স নামের একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা সারা বিশ্বের ২০৬টি দেশের ১৩,৫৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ লাখেরও বেশি বিজ্ঞানীর সাইটেশান ও অন্যান্য ইনডেক্সের ভিত্তিতে ১২টি ক্যাটাগরিতে সম্প্রতি একটি তালিকা প্রকাশ করে। এতে বাংলাদেশের মোট ১ হাজার ৭৮৮ জন গবেষক স্থান পেয়েছেন। তারমধ্যে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক রয়েছেন ৩৪ জন। উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি হিসেবে ওই তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন নান্দাইলের কৃৃতি সন্তান ড. মো. আমিনুল হক আকন্দ।
১৯৭৬ সালের ৩০ এপ্রিল আমিনুল হক আকন্দ ওরফে হেলাল নান্দাইলের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত নান্দাইল লেখাপড়া করেন।
নান্দাইল উপজেলার চন্ডীপাশা উচ্চ বিদ্যালয়ে (বর্তমানে সরকারি) ৮ম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশুনার পর চলে যান ভৈরব রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়ে। ওই বিদ্যালয় থেকে তিনি ১৯৯১ সালে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে প্রথম শ্রেণিতে এসএসসি পাশ করেন।
১৯৯৩ সালে তিনি নান্দাইলের শহীদ স্মৃতি আদর্শ (ডিগ্রি) কলেজ ( বর্তমানে সরকারি) থেকে প্রথম বিভাগে এইচএসসি পাশ করেন।
তারপর তিনি ভর্তি হন খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট) এ ইলেকট্রিক্যাল এবং ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ( EEE) বিভাগে। সেখান থেকে ১৯৯৯ সালে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রি লাভ করেন। পরে ওই বিশ্ববিদ্যালয়েই তিনি শিক্ষকতা পেশায় যোগদান করেন।
২০০৩ সালে তিনি জাপান সরকারের বৃত্তি নিয়ে জাপানে যান। জাপানের ফুকুই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২০০৬ সালে মাস্টার্স এবং ২০০৯ সালে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। ড. মো. আমিনুল হক আকন্দের কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য জাপান সরকার তাঁকে চাকুরি দিতে চাইলে তিনি তা গ্রহণ করেননি, চলে আসেন মাতৃভমির টানে দেশে পূর্বের পেশায়। সেখানে (কুয়েট) ২০১৪ সালে অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন।
২০১৮-২০১৯ সালে সাফল্যের সাথে ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিএসই বিভাগের বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। এরমধ্যে ২০১৭ সালে জাপানের ফুকুই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিজিটিং অধ্যাপক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। দেশ-বিদেশের বহু সাময়িকী ও জার্নালে তাঁর অনেক গবেষণালব্ধ লেখা প্রকাশিত হয়েছে। লেখক হিসেবে তিনি CSE বিভাগের মাস্টার্স ক্লাসের জন্য Deep Learning Fundamentals (A Practical Approach to Understanding Deep Learning Methods) নামে একটি বই লিখেছেন। বইটি প্রকাশ করছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (UGC)।
বর্তমানে ড. মো. আমিনুল হক আকন্দ কুয়েটে অধ্যাপনার পাশাপাশি সমাজ উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কাজে নিয়োজিত আছেন।
তিনি নান্দাইলের গ্রামের বাড়ি
শেরপুর পশ্চিমপাড়া বাইতুল শরীফ জামে মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। দুইবার পবিত্র হজ্বব্রতও পালন করেছেন। নান্দাইলবাসী এই কৃতি সন্তান নিয়ে গর্ববোধ করছেন।