স্বজন ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সকল সঙ্কীর্ণতা, কূপমণ্ডূকতা পরিহার করে উদারনৈতিক জীবন-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পহেলা বৈশাখ আমাদের অনুপ্রাণিত করে। মনের ভেতরের সকল ক্লেদ, জীর্ণতা দূর করে আমাদের নতুন উদ্যোমে বাঁচার শক্তি যোগায়, স্বপ্ন দেখায়।
তিনি বলেন, আমরা যে বাঙালি, বিশ্বের বুকে এক গর্বিত জাতি; পহেলা বৈশাখের বর্ষবরণের মাধ্যমে আমাদের মধ্যে এই স্বাজাত্যবোধ এবং বাঙালিয়ানা নতুন করে প্রাণ পায়, উজ্জীবিত হয়।
বুধবার (১৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেয়া এক ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
পয়লা বৈশাখের বর্ষবরণ বাঙালির সর্বজনীন উৎসব উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আবহমানকাল ধরে বাংলার গ্রাম-গঞ্জে, আনাচে-কানাচে এই উৎসব পালিত হয়ে আসছে। গ্রামীণ মেলা, হালখাতা, বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন ছিল বর্ষবরণের মূল অনুষঙ্গ।
‘ব্যবসায়ীরা আগের বছরের দেনা-পাওনা আদায়ের জন্য আয়োজন করতেন হালখাতা উৎসবের। গ্রামীণ পরিবারগুলো মেলা থেকে সারা বছরের জন্য প্রয়োজনীয় তৈজসপত্র কিনে রাখতেন। গৃহস্থ বাড়িতে রান্না হতো সাধ্যমত উন্নতমানের খাবারের।’
ঢাকা শহরের বিভিন্নস্থানে পয়লা বৈশাখ উদযাপনের চল ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, আজিমপুর, ওয়ারী, ওয়াইজঘাট, মৌলভীবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে হালখাতা উৎসব হতো, মেলা বসতো, মেলায় পণ্য বেচাকেনা, গান-বাজনা, যাত্রা-সার্কাস ইত্যাদির আয়োজন হতো। ষাটের দশকে রমনার বটমূলে সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানটের বর্ষবরণ সঙ্গীত পরিবেশন শুরু হয়।
‘আজ শুধু দেশে নয়, বিশ্বের যে প্রান্তেই বাঙালি তার বসবাস গড়ে তুলেছেন, সেখানেই বাঙালির হাজার বছরের লোক-সংস্কৃতিকে বয়ে নিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন। বর্ষবরণসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা জানান দেন, তারা বাঙালি। আর এর মাধ্যমেই পৃথিবীজুড়ে তৈরি হচ্ছে বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে অন্য সংস্কৃতির সেতুবন্ধ।’
করোনাভাইরাসের কারণে বিগত দুই বছর জনসমাগম করে উন্মুক্ত স্থানে পয়লা বৈশাখের অনুষ্ঠান না করার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘বর্তমানে করোনাভাইরাসের প্রকোপ অনেকটাই কমেছে। তাই এবার সীমিত আকারে হলেও বহিরাঙ্গণে অনুষ্ঠানের আয়োজন হবে।’
‘তবে করোনাভাইরাস একেবারে নির্মূল হয়নি। নতুন রূপে করোনাভাইরাস আবার যেকোনো সময় যেকোনো দেশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আমি সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এসব অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অবশ্য যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত আছি। ইতোমধ্যে প্রায় ৯০ শতাংশ টিকা পাওয়ার যোগ্য মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। টিকা প্রদান অব্যাহত রয়েছে। দ্বিতীয় ডোজের পর এখন বুস্টার ডোজ দেওয়া হচ্ছে।’
‘এই মহামারি শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। মানুষের জীবনযাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। মহামারিজনিত ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠার জন্য আমার সরকার সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত আমরা ২৮টি প্যাকেজের মাধ্যমে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি। এতে প্রায় ৬ কোটি ৭৪ লাখ মানুষ উপকৃত হয়েছেন এবং প্রতিষ্ঠান উপকৃত হয়েছে প্রায় ১ লাখ ১৮ হাজার।’