তরুণরা আর চাকরি খুঁজবে না, চাকরিদাতা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে

ময়মনসিংহে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী পলক

প্রকাশিত: ১০:০৯ অপরাহ্ণ, জুন ২২, ২০২২

মোঃ কামাল হোসেন : তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেছেন, ‘বাংলাদেশের তরুণরা আর চাকরি খুঁজবে না, তারা চাকরিদাতা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে। ডলার আয়ের জন্য আর বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি।

বুধবার (২২ জুন) দুপুরে ময়মনসিংহ নগরীর টাউন হল সংলগ্ন অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে সদরের কিসমত রহমতপুরে আনুষ্ঠানিক ভাবে আইটি/’হাই-টেক পার্ক’-এর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

 

এসময় গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ এমপি, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য মনিরা সুলতানা মনি এমপি, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র মোঃ ইকরামুল হক টিটু, বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস, রেঞ্জ ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পরে নগরীর টাউন হল এড. তারেক স্মৃতি অডিটোরিয়ামে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ ময়মনসিংহে হাই-টেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা আর আমদানীকারক দেশ থাকতে রাজি নই। দেশে এখন বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ বিরাজ করছে পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজ করার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছে। ওয়ালটন-সনির‌্যাংগস-সামস্যাং-নোকিয়াসহ বিভিন্ন দেশি বিদেশি প্রতিষ্ঠান এখন হাই-টেক পার্কগুলোতে ল্যাপটপ, মোবাইল ফোন, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন, এয়ার কন্ডিশনার (এসি), হোম এন্ড কিচেন এপায়েন্সেস, এমনকি অত্যাধুনিক ইলেক্ট্রনিক ভেইকল তৈরি করতে যাচ্ছে। আইসিটি বিভাগের এসব চমৎকার যে কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়নে যেকোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হলে অত্র এলাকার সন্তান হিসেবে আমি এবং এই এলাকার জনগণ পাশে আছি।

ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, আমরা আশা করছি খুব দ্রুত এই হাই-টেক পার্কের নির্মাণ কাজ শেষ হয়ে যাবে এবং দুই বছরের মধ্যে এখানে আমরা কার্যক্রম শুরু করবো। এখান থেকে এক হাজার তরুণ তরুণি প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারবে। এই তরুণ-তরুণীরা ময়মনসিংহ এর প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসেই ইউরোপ আমেরিকার বিভিন্ন মার্কেটপে¬সে কাজ করে ডলার আয় করবে। নিজেরা উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের তরুণরা আর জব সিকার নয়, জব ক্রিয়েটর হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করবে। ডলার আয়ের জন্য এখন আর বিদেশে পাড়ি দেওয়ার প্রয়োজন নাই। এটাই শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশের সুফল। বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার উদীয়মান অর্থনৈতিক শক্তি, কাজেই বাংলাদেশকে শ্রীলংকা পাকিস্তান বা অন্য কোনো ব্যর্থ রাষ্ট্রের সাথে তুলনার সুযোগ নেই।
প্রতিমন্ত্রী পলক আরো বলেন, তারুণ্যের মেধা ও প্রযুক্তির শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের তরুণরা চাকরি করবে না চাকরির ক্ষেত্র তৈরি করবে। দেশের তরুণদের উদ্যোক্তা ও আত্মনির্ভরশীল হতে পারে সেজন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর আইসিটি বিষয়ক মাননীয় উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ব্রেন চাইল্ড শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার, স্কুল অব ফিউচার, ডিজিটাল এডুটেইনমেন্ট সেন্টারসহ দেশে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আগামীতে আমাদের মেধাবী তরুণরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তি রোবটিক্স, আইওটি, সাইবার সিকিউরিটি টুলস তৈরি করে বিদেশে রপ্তানি করবে। সরকার সেই সুযোগ সৃষ্টি করে দিতে নিরলস কাজ করছে।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশন এর মেয়র ইকরামুল হক টিটু ময়মনসিংহে হাই-টেক পার্ক স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহন করায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। এই হাই-টেক পার্ক ময়মনসিংহের তরুণ প্রজন্মের কর্মসংস্থানের ঠিকানা হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ময়মনসিংহবাসীর উন্নয়নে সরকার নিরলস কাজ করে যাচ্ছে। এই হাই-টেক পার্কের মাধ্যমে এখানকার তরুণ-তরুণীদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হলো। এর ফলে ময়মনসিংহের আর্থ-সামাজিক অবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে বলে আমি মনে করি।

আইসিটি বিভাগের সিনিয়র সচিব এন এম জিয়াউল আলম বলেন, বর্তমানে দেশের ১২টি জেলায় হাই-টেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পে ভারত সরকার ঋণ প্রদান করছে। এরই অংশ হিসেবে আজ ময়মনসিংহে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলো। এই হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হলে ময়মনসিংহ হয়ে উঠবে ডিজিটাল ডিভাইস উৎপাদনের হাব। ফলে এই অঞ্চলের আর্থ সামাজিক অবস্থার ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। ভারত সরকারের লাইন অব ক্রেডিট এবং বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
স্বাগত বক্তব্যে বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (গ্রেড-১) ডা. বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেন, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ এর মাধ্যমে বর্তমানে সারা দেশে ৯২টি হাই-টেক পার্ক/সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক/আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টার স্থাপনের কাজ চলমান রয়েছে, ইতোমধ্যে ০৯টি পার্ক স্থাপনের কাজ সমাপ্ত হয়েছে যেখানে ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত হাই-টেক পার্কসমূহে ১৯০টি প্রতিষ্ঠানকে স্পেস ও প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে ১২৩টি প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে এবং ১৫১টি স্থানীয় স্টার্টআপ কোম্পানিকে বিনামূল্যে স্পেস/কো-ওয়ার্কিং স্পেস বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

প্রকল্প পরিচালক এ, কে, এ, এম, ফজলুল হক জানান, প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ নগরীর কিসমত রহমতপুরে প্রায় ৭.০০ একর জমিতে এই হাই-টেক পার্ক স্থাপনের কাজ শেষ হলে এখানে প্রায় ৩০০০ জনের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় ১০০০ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে।

হাই-টেক পার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিভাগীয় কমিশনার মোঃ শফিকুর রেজা বিশ্বাস, রেঞ্জ ডিআইজি শাহ আবিদ হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক, পুলিশ সুপার মোহাঃ আহমার উজ্জামান, মহানগর আওয়ামীলীগ সভাপতি এহতেশামুল আলম প্রমুখ। এসময় আইসিটি বিভাগ ও বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তাগণ এবং বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, আওয়ামীলীগ ও অংগ সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শেষে লার্নিং এন্ড আর্নিং ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহ জেলায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের মধ্যে প্রতি ব্যাচের সর্ব্বোচ্চ উপার্জনকারী (২জন করে) মোট ১৮ জন ফ্রিল্যান্সারকে ল্যাপটপ প্রদান করা হয়।