স্ত্রীকে দিয়ে ফেইজবুকে ফাঁদ, আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল
স্বামী-স্ত্রী চক্রের ৭ সদস্য র্যাবের হাতে আটক
স্বজন ডেস্ক : ফেইজবুকে নারীর সাথে পরিচয়, পরিচয়ের সুত্র ধরে ডেকে নিয়ে বাসায় বা আবাসিক হোটেলে আটকিয়ে স্ত্রীকে দিয়ে ছবি বা আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে মোটা অংকের টাকা আদায়। স্বামী-স্ত্রী চক্রের ৭ সদস্যের র্যাবের হাতে আটক।
ধনাঢ্য ও করপোরেট ব্যক্তিদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মেয়েদের আইডি থেকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হতো। এরপর বন্ধুত্ব গড়ে কখনো ডেকে নেওয়া হতো বাসায়, কখনো হোটেলে। টার্গেট করা ব্যক্তিদের জোরপূর্বক বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করা হতো।
দুই নারী এ অপকর্মের সহযোগী। তাদের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে গেল দুই বছরে অন্তত ৫০ জন ধনাঢ্য ও করপোরেট ব্যক্তির আপত্তিকর ছবি ও ভিডিও ধারণের পর ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি।
এমন এক ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান চালিয়ে দুই নারীসহ চক্রের সাত জনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১ এর একটি দল।
গ্রেপ্তাররা হলেন— আল মাহমুদ ওরফে মামুন, আকরাম হোসেন ওরফে আকিব, মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া, তানিয়া আক্তার, মো. রুবেল, মো. মহসীন ও মো. ইমরান। এসময় তাদের কাছ থেকে আপত্তিকর ছবি ও গোপন ভিডিও ধারণ কাজে ব্যবহৃত ১৪টি মোবাইল ফোন ও দুটি ল্যাপটপ জব্দ করা হয়।
মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি একজন ভুক্তভোগী র্যাব-১ এ অভিযোগ করেন, গত ২২ জুলাই তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে মাস্তুরা আক্তার প্রিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ হয়। গত ১০ আগস্ট প্রিয়া কৌশলে রাজধানীর একটি অভিজাত আবাসিক এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় নিয়ে যায়।
রুমের ভেতরে প্রবেশ করার পর পরিকল্পিতভাবে প্রিয়া ও তার সহযোগীরা জোরপূর্বক ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে আপত্তিকর ভিডিও ধারণ করে। পরে ক্যামেরায় ধারণ করা এসব আপত্তিকর ভিডিও দেখিয়ে ভুক্তভোগীর কাছে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে।
ভুক্তভোগীর বিকাশের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক এক লাখ টাকা ও ব্যাংক চেকের মাধ্যমে চার লাখ টাকা জোরপূর্বক হাতিয়ে নেয় চক্রটি। লোকলজ্জার ভয়ে ভুক্তভোগী ঘটনা চেপে যান। কিন্তু এ ঘটনার এক সপ্তাহ পর আবারও গ্রেপ্তার আল মাহমুদ ওরফে মামুন ভুক্তভোগীর কাছে আরও দুই লাখ টাকা দাবি করেন। দাবি করা দুই লাখ টাকা না দিলে ধারণ করা ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে আবারও ভয় দেখায়।
ভুক্তভোগী নিরুপায় হয়ে র্যাব-১ এর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করে আইনগত সহায়তা চান। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ছায়া তদন্ত ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর একটি দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর ভাটারার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা ও দক্ষিণখানে অভিযান পরিচালনা করে সাত জনকে গ্রেপ্তার করে।
লে. কর্নেল মোমেন বলেন, গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সক্রিয় সদস্য। এ চক্রের মূলহোতা আল মাহমুদ ওরফে মামুন, তার নারী সহযোগী তানিয়া আক্তার ও মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া।
এই দুই নারী সদস্যের ছবি ও ভুয়া পরিচয় ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রলোভন দেখিয়ে নির্দিষ্ট কোনো আবাসিক ফ্ল্যাট বা হোটেলে আমন্ত্রণ জানানো হতো। ভুক্তভোগীরা ওই স্থানে উপস্থিত হলে পরিকল্পিতভাবে অন্য সদস্যরা ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের জিম্মি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আদায় করত।
চক্রটি গত দুই বছরে অর্ধ শতাধিক ব্যক্তিকে ব্ল্যাকমেইল করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা র্যাবের কাছে স্বীকার করেছে। অসদুপায়ে অর্জিত টাকায় গ্রেপ্তাররা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকায় বিলাসবহুল জীবনযাপন করে আসছিল।
গ্রেপ্তার দুই নারী সম্পর্কে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার আল মাহমুদ ওরফে মামুনের স্ত্রী গ্রেপ্তার তানিয়া আক্তার। তারা দুজনে পরিকল্পিতভাবে এ কাজে জড়ায়। এছাড়া গ্রেপ্তার মাস্তুরা আক্তার প্রিয়া একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত।
ফেসবুকে বন্ধুত্বের ডাকে সাড়া দিয়ে অপরিচিত কিংবা নির্জন স্থানে না যাওয়ার পরামর্শ দেন র্যাব কর্মকর্তা লে. কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন