স্টাফ রিপোর্টার : ময়মনসিংহ বিএনপির গণঅবস্থান কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, আজকে পত্রিকায় দেখলাম বলা হয়েছে যে- ধাক্কা দিলেই পড়ে যাব, তা হবে না। ঠিক আছে ধাক্কা দিলে যদি না পড়েন তাহলে যা করলে পড়বেন আমরা এর সবটাই করব। আন্দোলনকে পরিপূর্ন ভাবে সফল করার জন্য যা করার দরকার আমরা তাই করব। আন্দোলনকে আমাদের এগিয়ে নিতে হবে এবং যথা সময়ে যথাযোগ্য কাজটি করতে হবে। ১০দফা আদায় ছাড়া এদেশের মানুষের মুক্তি হবে না। গতকাল বুধবার(১১ জানুয়ারি) বেলা ৩টায় ময়মনসিংহ নগরীর হরিকিশোর রায় সড়কে বিএনপির বিভাগীয় গণঅবস্থান কর্মসূচীতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ১০ দফায় আমরা বলেছিলাম- এই সরকার অন্যায় ভাবে গরীবের উপর জুলুম করার জন্য গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানিসহ সব কিছুর মূল্যবৃদ্ধি করে দিয়েছে। এমনকি ঔষধের দামও বৃদ্ধি করেছে। হালাল উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করা কঠিন হয়ে পড়েছে। শুধু ভালো আছে তারা, যারা ঘুষ খায়, চাদাঁবাজী করে, অন্যায় ভাবে লুটপাট করে, তারা ভালো আছে। কিন্তু তাদের ভালো করার জন্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করি নাই। দেশ স্বাধীন করেছিলাম সাধারন মানুষের মুক্তির জন্য, তাদের কল্যাণের জন্য। এখন আবার সরকার শতকরা ১৫ ভাগ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিচ্ছে।
আমরা এর প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাই। ১০ দফা দাবি এবং বিদ্যুতের মূল্য কমানোর দাবিতে আগামী ১৬ জানুয়ারি সোমবার সারাদেশের মহানগর জেলা-উপজেলা, পৌরসভায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করব-ইনশাল্লাহ। এর আগের দিন ১৫ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির সভা আছে। ওই সভা থেকে আমরা পরবর্তী কর্মসূচি নিব এবং ১৬ জানুয়ারি জানিয়ে দেওয়া হবে এর পরের কর্মসূচি কি। ইনশঅল্লাহ দেশনায়ক তারেক রহমানের নেতৃত্বে আরেকবার আমরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুর্নপ্রতিষ্ঠা করে যাব। সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন, আজকের মত উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে প্রোগ্রাম সফল করুন। আল্লাহ আমাদেরকে সফল করবেন।
নজরুল ইসলাম খান আরও বলেন, আমরা এই সভা থেকে ময়মনসিংহের যুবদলের সভাপতি রোকন, লিটন আকন্দ, ওলামাদলের এখলাছ বাদলের মুক্তি দাবি করছি। মুক্তি দাবি করছি রুহুল কবীর রিজভী, খাইরুল কবীর খোকন, টুকু, এ্যানিসহ সব নেতাদের। কিন্তু আন্দোলন যত জোরদার হবে, তত আমাদের নেতারা মুক্তি পাবে। আন্দোলন যত শক্তিশালী হবে, তত সরকার ভয় পাবে।
এর আগে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, যারা নিরীহ মানুষকে গুম, খুন ও হত্যা করে তাদের ক্ষমতায় থাকার কোন অধিকার নেই। তারেক রহমানের ধাক্কা ছোট না। সহসাই ডাক আসছে। আর টিকতে পারবেন না। চূড়ান্ত আন্দোলনে এই সরকারকে বিদায় করা হবে।
আরেক উপদেষ্ঠা অ্যডিভোকেট ফজলুল রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান গণতন্ত্রের সূর্য্য উদিত করেছিলেন। এরশাদ গণতন্ত্র হোন্ড গুন্ডায় ঠান্ডা করে দিয়েছিল। এখন নিশি রাতের অবৈধ হাসিনা সরকারকে উৎখাত করতে চাই। সে আন্দোলনে আমরা জিতব।
সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, গনঅবস্থানে আন্দোলনের নবতর পর্যায়ের সূচনা হয়েছে। এরপর গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় করব, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করব, তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসব।
সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক শরীফুল আলম বলেন, আর সময় নয়, অচিরেই হাসিনা সরকার উৎখাতের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হোক। আমরা জীবনবাজী রেখে রাজপথে বুকের রক্ত ঢেলে দিয়ে যে কোন কর্মসূচি সফল করব।
আরেক সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ওয়ারেছ আলী মামুন বলেন, গত ১৬ বছরে অনেক বড় বড় বক্তব্য শুনেছি, আর শুনতে চাই না। এই বেহায়া সরকার, ভোট ডাকাত সরকার হত্যা গুম খুন করে ক্ষমতায় টিকে থাকা সরকারের কাছে আবেদন নিবেদন করে কোন লাভ নেই। তারেক রহমান বলেদিয়েছেন-দেশ যাবে কোন পথে ফয়সালা হবে রাজপথে।
সভায় সাবেক এমপি নিলুফার চৌধুরী মনি বলেন, অহিংস আন্দোলনে নেমেছি, কিন্তু সারা জীবন অহিংস থাকব তা তো বলিনি। এক দফা এক দাবি, শেখ হাসিনা কবে যাবি, একাই দেশের মনিুষ শুনতে চায়।
ময়মনসিংহ মহানগর বিএনপির আহবায়ক অধ্যাপক শফিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে যৌথ ভাবে এই গণঅবস্থান কর্মসূচির সঞ্চালনা করেন মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক আবু ওয়াহাব আকন্দ, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহবায়ক জাকির হোসেন বাবলু ও উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক মোতাহার হোসেন তালুকদার।
এছাড়াও বক্তব্য রাখেন বিএনপির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক আব্দুল বারী ড্যানী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহবায়ক ডা: মাহাবুবুর রহমান লিটন, মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক শেখ আমজাদ আলীসহ ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের র্শীষ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশে বৃহত্তর ময়মনসিংহ বিভাগের সকল জেলার বিপুল সংখ্যাক নেতাকর্মী সহ কেন্দ্রিয় বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। অবস্থানের পূর্বে বিভিন্ন জেলা থেকে সকল বাধা অতিক্রম করে নেতাকর্মীরা ব্যানার ফেস্টুন নিয়ে মিছিল সহকারে অনুষ্ঠান স্থলে এসে উপস্থিত হয়। এদিকে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে এবং আইনশৃংখলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয। পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।