স্বজন ডেস্ক : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সরকারের বহুমুখী কার্যক্রম সমন্বয় ও তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে ক্ষমতার অপপ্রয়োগ যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবা দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। এটাকে দয়া বা অনুগ্রহ মনে করার কিছু নেই। আশা করি, আপনারা কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব ও ক্ষমতার পার্থক্য সচেতনভাবে বজায় রাখবেন।’
রাষ্ট্রপতি বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে ‘জেলা প্রশাসক সম্মেলন ২০৩০’-এর তৃতীয় দিনে ডিসিদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
দুর্নীতি দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় অন্তরায় উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘নিজে দুর্নীতিমুক্ত থাকবেন এবং অন্যরাও যাতে দুর্নীতির সুযোগ না পান, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। দুর্নীতির কারণে টেকসই উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই মাঠ প্রশাসনের প্রতিটি স্তরে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।’
জনকল্যাণে ও মানবাধিকার সমুন্নত রাখতে ডিসিদের মেধা ও দক্ষতা ব্যবহার করারও নির্দেশনা দেন আবদুল হামিদ। তিনি আশা প্রকাশ করেন, জেলা প্রশাসকরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে দেশাত্মবোধ ও একাগ্রতার সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে যাবেন।’
রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদের সম্মানিত সদস্যদের কাছ থেকে প্রাপ্ত মূল্যবান পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে ডিসিদের আন্তরিক হওয়ার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি।
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে খাদ্যদ্রব্য, ভোজ্যতেল ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধিসহ জাতীয় জীবনে নানান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের সবসময়ই জনগণের পাশে থাকার নির্দেশনা দেন তিনি। আবদুল হামিদ বলেন, বৈশ্বিক পরিস্থিতি মাথায় রেখে সরকারি সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার, ব্যয় সংকোচন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নে আপনাদের আরও যত্নশীল হওয়ার অনুরোধ করছি।
পরিবেশবান্ধব গ্রামোন্নয়নে আবাসন, শিক্ষা, কৃষিনির্ভর শিল্পের প্রসার, চিকিৎসাসেবা, বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানীয়জল ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থার মাধ্যমে উপজেলা সদরে ও বর্ধিষ্ণু শিল্পকেন্দ্রগুলোকে আধুনিক শহর-উপশহর হিসেবে গড়ে তুলতে সরকারি উদ্যোগের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয় ঘটাতে জেলা প্রশাসকদেরও কার্যকরী ভূমিকা রাখার নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি।
ভূমি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জনগণের সরাসরি সম্পৃক্ততার কথা উল্লেখ করে তিনি দক্ষ, আধুনিক, জনকল্যাণমুখী ও টেকসই ভূমি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং ভূমিসংক্রান্ত জনবান্ধব ডিজিটালাইজ সেবা নিশ্চিতকরণে ডিসিদের আরও বেশি কৌশলী ও তৎপর হওয়ার তাগিদ দেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এসব ব্যাপারে জেলা প্রশাসকদের আরও কঠোর হতে হবে। এসিল্যান্ডসহ তৃণমূল পর্যায়ের ভূমি অফিসগুলো দুর্নীতিমুক্ত রাখতে হবে।’
জেলা ই-সার্ভিস সেন্টার, পৌর ডিজিটাল সেন্টার ও ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে তথ্যপ্রযুক্তি সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে ডিসিদের কার্যকরী ভূমিকা রাখার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি।
দুর্যোগপ্রবণ বাংলাদেশে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সামাজিক বনায়ন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন, জলাভূমির উন্নয়ন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিহ্রাস ও দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের চলমান কর্মসূচি বাস্তবায়নে ডিসিদের আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দেন রাষ্ট্রপতি।
যুবসমাজের মেধা, সৃজনশীলতা ও প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে সরকার যুবসমাজকে সুসংগঠিত ও উৎপাদনমুখী করতে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচিসহ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রীর ১০টি বিশেষ উদ্যোগ বাস্তবায়নে কার্যকর অবদান রাখার পরামর্শও দেন রাষ্ট্রপতি।
এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার ড. মুহাম্মদ মোশাররফ হোসেন, টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন হায়দার প্রমুখ। পরে রাষ্ট্রপতি বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে ফটোসেশন এবং চা পানে অংশ নেন।