মো. আবুল কালাম আজাদ :
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট, আপিল বিভাগের বিচারক বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন। ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব মো. গোলাম সারওয়ার স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান’কে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে রাষ্ট্রপতি এই নিয়োগ দিয়েছেন। এই নিয়োগ শপথ গ্রহণের তারিখ থেকে কার্যকর হবে। বাংলাদেশের ২৪ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বিদায়ী প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর স্থলাভিষিক্ত হবেন। বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ২৫ সেপ্টেম্বর। সরকারি একটি সুত্রে জানা গেছে, ২৬ সেপ্টেম্বর নতুন প্রধান বিচারপতির শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে পারে। বৃহত্তর ময়মনসিংহের নেত্রকোনা জেলার হাওর উপজেলা খ্যাত মোহনগঞ্জ উপজেলা তথা ভাটির জনপদের আলোকিত মানুষ ওবায়দুল হাসান ।
সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংগঠিত মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর একজন সদস্য হিসেবে ২০১২ সালের ২৫ মার্চ যোগদান করেন এবং ১৩ ডিসেম্বর ২০১২ তারিখে এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত হয়ে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ কর্মরত থাকাকালীন ১১টি মামলার রায় প্রদান করেছিলেন তিনি। তিনি ২০২০ সালের ৩ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
প্রধান বিচারপতি হিসেবে সদ্য নিয়োগ প্রাপ্ত বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। ভাটির জনপদ খ্যাত মোহনগঞ্জের কৃতি ব্যক্তিত্ব মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, বঙ্গবন্ধুর একনিষ্ঠ সহচর, গণপরিষদ সদস্য ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রবিধান তথা সংবিধানের স্বাক্ষরকারী প্রয়াত জননেতা ডাক্তার আখলাকুল হোসাইন আহমেদ এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ওবায়দুল হাসান ।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে আইনজীবী হিসেবে জেলা বারের সনদপ্রাপ্ত হন। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের আইনজীবী হিসেবে এবং ২০০৫ সালে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। তিনি সহকারি এটর্নি জেনারেল এবং ডেপুটি এটর্নি জেনারেল হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে ৫ বছর দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে ২০০৯ সালের ৩০ জুন যোগদান করেন এবং ২০১১ সালের ৬ জুন একই বিভাগে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৯১ সালে হংকং এ অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে সিঙ্গাপুরে একটি আইন সম্মেলনে যোগদান করেন এবং আর্জেন্টিনার বুয়েন্স আয়ার্স এ আন্তর্জাতিক অপরাধ বিষয়ক একটি কনফারেন্সে বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। এছাড়াও ২০১৫ সালের আগস্ট মাসের শেষ দিকে নেদারল্যান্ডস এর হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এ তৎকালীন যুগোস্লোভিয়ার বিচারকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় যোগদান করেন। তিনি ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র : একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ও অন্যান্য’, ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ : একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু, রবীন্দ্রনাথ ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ’ শীর্ষক তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ব্যক্তিজীবনে এক পুত্র সন্তানের জনক এবং তাঁর সহধর্মীনি মিজ নাফিজা বানু বেপজার সদস্য। তাঁর এক সহোদর সাজ্জাদুল হাসান প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনের পরপরই বিমান বাংলাদেশে এয়ারলাইনসের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে কাজ করেছেন এবং বর্তমানে তিনি নেত্রকোনা-৪ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য। অপর সহোদর সাইফ উল হাসান প্রেজটিজিয়াস টেলিকম কোম্পানী গ্রামীণ ফোনের জেনারেল ম্যানেজার ।
বিচারপতি ওবায়দুল হাসান এর বাংলাদেশের ২৪ তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্তিতে নেত্রকোনা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলাসহ বিভিন্ন উপজেলায় সকল শ্রেণিপেশার জনমানুষ আনন্দ উচ্ছ্বাসে মেতে উঠেছে। প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের সংবাদে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সহ তার পিতা ডাক্তার আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ও তার পুরো পরিবারে প্রতি সকল শ্রেণিপেশার মানুষ অভিনন্দন জানিয়েছেন।