স্কুল ব্যাংকিং এক নতুন ডাইমেনশন – মো. আবুল কালাম আজাদ

প্রকাশিত: ৭:৫৫ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৭, ২০২০

মো. আবুল কালাম আজাদ

স্কুল ব্যাংকিং প্রথা বাংলাদেশের ব্যাংকিং ইতিহাসে একটি নতুন ডাইমেনশনের নাম। ১৯৬০ এর দশকে মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংক সর্বপ্রথম স্কুল ব্যাংকিং শুর করেছিল।

কিন্তু এটি দীর্ঘ সময় চলেনি। তারপর ২০০৩ সালে চট্টগ্রামের সানশাইন স্কুলে আরব বাংলাদেশ ব্যাংক লিমিটেড স্কুল ব্যাংকিং সেবা চালু করে। আবারও সেটি বন্ধ হয়ে গেলে ২০১০ সালে বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করার জন্য সকল তফসিলি ব্যাংককে পরামর্শ প্রদান করে এবং এরই পরিপ্রেেিত ২০১৩ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম নীতিমালা চালু করে।

আমরা সকলেই অবগত রয়েছি যে, দেশের আর্থিক অন্তর্ভুক্তি উন্নত করা, অর্থ সঞ্চয়ের মাধ্যমে ব্যাংকিং কার্যক্রমে স্কুলের ছাত্র ছাত্রীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা এবং আধুনিক ব্যাংকিং সেবা ও প্রযুক্তিতে ছাত্র ছাত্রীদেরকে অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তাদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব তৈরি করা ও সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করাই স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের মূল লক্ষ্য।
শিশু এক অপার বিস্ময়ের নাম। একজন শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ ও সুন্দর জীবন গড়ার প্রত্যাশা থাকে প্রত্যেক বাবা মায়ের। তাদেরকে পরিপূর্ণভাবে গড়ে তুলতে চেষ্টার কমতি রাখেননা বাবা-মা। উন্নত জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন সুন্দর পরিবেশ, যেখানে শিশুরা নির্বিঘে বেড়ে উঠতে পারে।

পারিবারিক ও সামাজিক শান্তি শৃঙ্খলা এবং সেহ ভালবাসায় শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথ উন্মুক্ত হয়। শিশুদের মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা বাবা মা তথা পরিবারের প্রত্যেকের কর্তব্য। ভাল অভ্যাসের মাধ্যমেই শিশুর মধ্যে দায়িত্ববোধ গড়ে তোলা সম্ভব।

শিশুকে মানসিকভাবে দৃঢ় করে গড়ে তোলার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে ছোটবেলা থেকে তাদের নীতি-নৈতিকতা বোধ জাগ্রত করা এবং একইসাথে সৃজনশীল ও ইতিবাচক কাজের প্রতি আগ্রহী করে তোলার চেষ্টা করা। বাবা মা সহ পরিবার ও শিকদের কাছ থেকে নৈতিক শিা, সহায়তা এবং উৎসাহ পেয়ে একটি শিশু সমাজের দায়িত্ববান ও আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। শৈশবকাল থেকে শিশুকে মিতব্যয়ী হওয়ার শিা পরিবার থেকেই দিতে হবে।

তাদের সঞ্চয়ী হওয়ার মনোভাব গড়ে তুলতে হবে।
একটি সময় এমন ছিল যে, আমাদের দেশে মাটির ব্যাংকে পয়সা ফেলে শিশু-কিশোরদের সঞ্চয় করার প্রবণতা ল করা যেত। গ্রামীণ নারীরা রান্নার চাল থেকে একমুঠো চাল রেখে তা একমাস বা দুমাস পর বিক্রি করে কিছু অর্থ সঞ্চয় করত এবং পরিবারের দুর্যোগকালে তা ব্যয় করত। এখন এ ধরণের পয়সা জমানোর পদ্ধতি নেই বললেই চলে। ব্যাংকিং সেবা হাতের নাগালে চলে এসেছে। প্রত্যন্ত জনপদের মানুষও সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকিং সুবিধা পাচ্ছে।

 

সরকার সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে আর্থিক সেবার আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। এরই অংশ হিসেবে স্কুল শিার্থীদের স্কুল ব্যাংকিং সুবিধার েেত্র অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। ব্যাংক হিসাব থাকায় ছোটবেলা থেকেই শিার্থীদের সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে উঠছে। স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমের জনপ্রিয়তা অব্যাহতভাবে বাড়ছে এবং সরকারি-বেসরকারি সকল ব্যাংকের অংশগ্রহণ খুবই সন্তোষজনক। শিার্থীরাও ব্যাংক একাউন্ট খুলে ব্যাংকিং কার্যক্রমের সুফল ভোগ করে আনন্দিত।

স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতে এরই মধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করার ফলে জনপ্রিয়তা অব্যাহতভাবে বাড়ছে।
পরিসংখ্যান বলছে ২০১০ সালে স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু হলেও শিার্থীরা টাকা জমা রাখার সুযোগ পায় ২০১১ সালে । প্রথম বছর স্কুল ব্যাংকিং হিসাব ছিল ২৯ হাজার ৮০ টি। ২০১২ সাল সালের ডিসেম্বরে ১ লাখ ৩২ হাজার ৫৩৭ টি এবং বর্তমানে ১৫ লাখ ছাড়িয়ে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ হাজার ৭ শত কোটি টাকা।
দেশের মোট জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ স্কুলগামী ছাত্রছাত্রী। স্কুল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে গড়ে উঠা সঞ্চয়ের অভ্যাস ছেলেমেয়েদের মধ্যে আর্থিক শৃঙ্খলা আনবে, যা তাদের সুশৃঙ্খল জীবন গঠনে সহায়ক হবে। একটি কর্মম জাতি গঠনে প্রথাগত শিার পাশাপাশি এখন থেকেই শিশুদের মধ্যে ব্যাংকিং জ্ঞান, অভিজ্ঞতা এবং দূরদর্শিতা তথা আর্থিক সঞ্চয় প্রবণতা বাড়ানোর শিা দিতে হবে।

আমরা বিশ্বাস করি প্রাতিষ্ঠানিক শিার পাশাপাশি শিার্থীরা নান্দনিক ও সৃজনশীল চর্চায় যতবেশি ঝুঁকে পড়বে ততবেশি তারা শুধু পেশাজীবী হওয়ার পরিবর্তে পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে তার নিজেকে গড়ে তুলতে পারবে। এবং এই শিশুরাই নিজেদেরকে যোগ্য, দ ও পরিশীলিত নাগরিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাঙলা বিনির্মাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।
স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আমরা যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্লোগান দিচ্ছি সেখানে আমাদের তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলার সুযোগ নেই। সময়ের প্রয়োজনে সময় এবং পরিপার্শ্ব বিবেচনায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাঙলা আজ ডিজিলটাল বাংলাদেশের রুপ পরিগ্রহ করেছে মাত্র। দেশ, দেশের মানুষ, মাটি-আলো-বাতাস তথা প্রতিটি উপদানের প্রতি আমাদের প্রত্যেকের দায়িত্ববোধ থেকে ভালবাসা দেখাতে হবে। তাহলেই কেবল ত্রিশ ল শহিদের আত্ম শান্তি পাবে এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অর্থবহ হবে।

মো. আবুল কালাম আজাদ
জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা
সোনালী ব্যাংক লিমিটেড, জেনারেল ম্যানেজারস অফি‘স, ময়মনসিংহ।