শূন্যতা, তবে নয় বিষন্নতা ! মো. আবুল কালাম আজাদ

প্রকাশিত: ৮:৫৮ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৮, ২০২১

—- অপেক্ষার প্রহর গুণতে গুণতে অতঃপর আমি কেটে ফেলেছি গোলাপ গাছটি। এখন আর একটিও গোলাপ ফোটেনা। আমিও দরজায় দাঁড়িয়ে একবারও গাছটির কথা ভাবিনা। ভাবিনা তোমার কথাও। অনেক ভাবনার ফল আমাকে বিষিয়ে তুলেছে এখন। তাই, ভাবতে চাইনা আর। কখনো মনে হয়েছ বোধহয় তুমি এখন আর আমার নও।

আমার এই বোধ সত্য কি মিথ্যা আমি জানিনা। হয়তোবা সঠিক, হয়তোবা তা নয় বটে। যা আমি জানিনা, জানতে আর বুঝতে চাইনা, চাইনি। এ হতে পারে শূন্যতা, তবে তা বিষন্নতা নয় নিশ্চয়। শেষবার যখন তোমার কাছে থেকে বিদায় চলে আসি, তুমি ভালো করে কিছুই বলতে পারনি। কপাট অল্প একটু ফাঁক করে চেয়ে দাঁড়িয়েছিলে। তারপর দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়।

এভাবে কেটে গেছে কতশত ক্ষণ, কতশত মুহূর্ত। তোমার নাম্বার থেকে কোন কল নেই। কলের অপেক্ষাও আমার নেই। কখন, কীভাবে তোমার সেল নাম্বার আমার মুঠোফোন থেকে মুছে গেছে আমি জানিনা। জানবার চেষ্টাও করিনি কখনো । কাল ভোরে যখন তোমার নাম্বার থেকে আমার মুঠোফোনে কল আসে তখন অনেকটাই বিরক্তি এসেছে। অচেনা নাম্বার থেকে কলের শব্দে আমার ঘুম ভাঙ্গে তাই আমার বিরক্তি।

হয়তোবা পরিচিত কারও প্রয়োজনে কল এসেছে ভেবেই ফোন রিসিভ করি। কোন ভূমিকা ছাড়াই তুমি বলে যেতে থাকলে ‘—– আমি কাল মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে আসছি। তুমি স্টেশনে থেকো।’ এই তুমি আমাকে কিছু বলবার সুযোগ না দিয়েই লাইন কেটে দিলে। আমি খুশি না বেজার, ব্যথিত কি উচ্ছ্বসিত নিজেই বুঝতে পারিনি।

অনুধাবন করবার চেষ্টা করলাম যে, তোমার আগমন আমার মনে-মস্তিস্কে কোন ধরণের পরিবর্তন বইছে কি-না। কোন কিছুই আন্দাজ করতে পারিনি। আমি আমার নিজের মধ্যে কোন পরিবর্তন দেখতে পারিনি। ভাবতে ভাবতে ট্রেন স্টেশনে পৌঁছার সময় প্রায় সমাগত। চোখে-মুখে কোনরকম একটু পানি দিয়ে ছুটে যাই স্টেশনের উদ্দেশ্যে।

আবারো প্রতীক্ষার পালা। তবে তা বেশি নয়। হুইসেল বাজিয়ে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ফ্ল্যাটফরমে প্রবেশ করেছে মাত্র। ইঞ্জিন আমাকে ক্রস করার পরপরই প্রতিটি জানালায় আমার তীক্ষন্ন দৃষ্টি নিক্ষিপ্ত করতে থাকলাম। হঠাৎ একটি হাতের ইশারায় আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট হলো। এইতো তুমি এলে বলে।

এই স্টেশন মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসের শেষ গন্তব্য বলে সবাই নামতে শুরু করলো। এক দুই তিন করে মানুষের নেমে যাওয়ার মধ্যে এক হাতে ট্রলি ব্যাগ অন্য হাতে আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ভীর ঠেলে তুমি নেমে এলে। সেই চেনা মুখ, চেনা হাঁসি। মুহূর্তেই বিষাদের ছাপ কেটে গেল । আমার মনোজগৎ ফিরে পেল হারানো মায়ার পুরনো ছটা।

আমি ভাবতেও পারিনি এই মায়া আমাকে আবারো তার আবেশে আবদ্ধ করবে। ‘কেমন ছিলে, আমাকে একবারের জন্য কল করনি কেন, নাকি অন্যকোন মোহ আমার তোমাকে আমার থেকে আলাদা করে দিয়েছে — !’ এমন হাজারো প্রশ্ন আমার প্রতি তোমার। আমি কিছুমাত্র না বলে শুধু শুনে যেতে থাকলাম নীরা‘র সমস্ত অনুযোগ। আমার যেন কোন অভিযোগ নেই, নেই অনুযোগও। যেন তার কোনই দুষ ছিলনা। দায় শুধুই আমার। ভালবাসা কি এমনই! আমার এই ভাবনা অমূলক কিছু নয়।

যে আবেশে নীরা আমাকে আবদ্ধ করে এতগুলো সময় কোন যোগাযোগ না করে অজানা কষ্ট দিয়ে আমার মস্তিস্কে-মনে এতটা যন্ত্রণা দিয়ে আজ আমাকেই দায়ী করছে সেই নীরা আবারো যে তার স্বভাবসুলভ আচরণ দেখাবেনা সে ভাবনা এতক্ষণে আমাকে পেয়ে বসেছে। এমন ভাবনায় আনমনা হতেই নীরা আমাকে সেই চেনা রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেল।

নীরা আমাকে বুঝানোর চেষ্টায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। যেন সে আর কখনো এমনটি করবেনা ! কখনোই না! দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বিষণè মন আমার কিছুতেই যেন বুঝ মানছেনা। পেয়ে হারিয়ে ফেলার কষ্ট বড়ই বেদনার। তার থেকে কিছু নেই, কেউ নেই, ছিলনা এমনতর ঢের ভালো। অন্তত আমার কাছে বটে।

মো. আবুল কালাম আজাদ
বাংলাদেশ টেলিভিশন বিতার্কিক