গৌরীপুরে স্কুল ভবন নির্মাণে অনিয়ম-দুর্নীতি, আর্কিটেকটার ভিউ মুছে ফেলার অভিযোগ
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তদারকিহীন কাজে ধীরগতি ॥
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধিনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার সরকারি-বেসরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের নির্মাণ কাজ তদারকিতে এ বিভাগের কোন কর্মকর্তাকে খোঁজে পাওয়া যায়নি।
ভবন নির্মাণে নিম্নমানের সুরকি, রড, ইট ও নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন থাকলেও নির্মাণাধীন প্রকল্প এলাকায় স্থাপন হয়নি ‘প্রজেক্ট প্রোফাইল।’
এদিকে শনিবার (১২ জুন/২০২১) গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন সংস্কার ও মেরামত কাজ চলছে। সাবেক শিক্ষার্থী আবিদ হাসান অভিযোগ করেন প্রাচীন নির্দশন ও বিদ্যালয়ের কারুকার্য্য সংরক্ষণ না করে সেগুলো মুছে ফেলা হয়েছে।
শতবছরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়রে সংস্কার ও মেরামত কাজ চলাকালে প্রকৌশল অধিদপ্তরের কোন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। এ দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।
অপরেিদক পৌর শহরে অবস্থিত গৌরীপুর পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণের কাজ করতে দেখা যায় নির্মাণ শ্রমিকরা। তাদের নিকট নেই কাজের কোন নকশা বা ডিজাইন। ২০১৯সালের ২২ আগস্ট নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহমেদ এমপি। প্রায় দুই বছর ধরে নির্মাণ কাজ চলমান। নির্ধারিত সময় অতিক্রম করলেও কবে নাগাদ শেষ হবে তা কেউ জানে না।
এ প্রসঙ্গে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. এনামূল হক সরকার জানান, জুলাই মাসের দিকে শেষ হবে। নির্মানাধীন ভবনের ভিম, পিলারে ঢালাইয়ে অবহেলার কারণে অসংখ্যা স্থানে ছিন্দ্র দেখা গেছে। ভবনের নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত সুরকী অত্যন্ত নিম্নমানের। ‘প্রজেক্ট প্রোফাইল’ আজও স্থাপিত হয়নি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সুমাইয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্ত্বাধিকারী মো. ফিরোজ আহম্মেদ জানান, নভেম্বরের দিকে কাজ শেষ হতে পারে।
এ দিকে গৌরীপুর আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কার ও মেরামত কাজে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে। সরকারের নেয়া এসব প্রকল্পের বিষয়টি সর্বসাধারণকে অবগত করার জন্য ‘প্রজেক্ট প্রোফাইল’ স্থাপন বাধ্যতামূলক। তবে এ প্রকল্পেও স্থাপন করা হয়নি। বিদ্যালয়ে সংস্কার ও মেরামত কাজে জন্য বরাদ্দ ৯লাখ ৪৯হাজার ৯শ ৮৫।
প্রকল্পের নির্ধারিত মাপের চেয়ে কম ও ওজনে কম এবং উচ্চতায় কম সীমানা প্রাচীর করার অভিযোগ রয়েছে। বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সূত্রে জানা যায়, ডেমেজ পলেস্তারে দেয়া হয়েছে জোড়াতালি। পলেস্তার ও ইটের গাঁথুনিতে বালুর অনুপাতে সিমেন্ট কম দেয়া হয়েছে। রডের এ্যাঙ্গেল ৬মিলিমিটারের স্থলে ৩মিলিমিটার, এমএস ৩৮ বাই ৩৮ এর স্থলে ৩২বাই ৩২ ব্যবহার করা হয়েছে।
গর্তে ১৫০মিলিমিটারের স্থলে ৭৫মিলিমিটার করা হয়েছে। কাঁটাতার ১২ গেজের স্থলে ১৬ গেজ ব্যবহার করা হয়েছে। কাঁটাতারের বেড়া উচ্চতায়ও কম করা হয়েছে। সংস্কার ও মেরামত কাজে অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেন প্রধান শিক্ষক লুৎফা বেগম।
এদিকে উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের লালখান উচ্চ বিদ্যালয়ের পাঁচটি শ্রেণিকক্ষ ভেঙ্গে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০২০সালের ৫ জানুয়ারি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ৪তলাবিশিষ্ট ভবনের প্রাক্কলিক ব্যয় ২ কোটি ৮৮লাখ টাকা। নির্মাণ কাজে ধীরগতি। প্রকৌশল বিভাগের কোন কর্মকর্তাও কাজ তদারকি করতে দেখা যায়নি। ফলে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, ম্যানেজিং কমিটি ও এলাকাবাসী হতাশ।
এ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক মোঃ মঞ্জুরুল হক বলেন, পাঠদান শুরু হলে কাসরুমের চরম সংকট দেখা দিবে। এছাড়াও উপজেলার ভুটিয়ারকোনা আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, সহরবানু বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, লামাপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, শাহগঞ্জ মনির উদ্দিন দাখিল মাদরাসা নির্মানাধীন ভবনের কাজ চলমান রয়েছে। নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও নির্মাণ কাজ শেষ হয়নি। প্রকল্প এলাকায় প্রকৌশল বিভাগের কোন তদারকি কর্মকর্তার দেখা মিলেনি।
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী মো. সাব্বির আহমেদ বলেন, প্রত্যেকটি ভবনের নির্মাণ কাজ সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে। আরকে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সংস্কারে রড, এ্যাঙ্গেল ও তার কম দেয়ার বিষয়টি পরবর্তীতে জানা গেছে। এখানে মাল কম দেয়ায় এ টাকা দিয়ে বিদ্যালয়ে দেয়ালের রঙসহ অন্যান্য কাজ করে দেয়া হবে।