গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
উচ্চ শিক্ষার বিদ্যাপিঠে পা রাখতে যাচ্ছে সেই সালমা। এবার ২০২০সনে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ২.৬৭ পেয়ে উর্ত্তীণ হয়েছে। বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধিনে ময়মনসিংহের গৌরীপুর ইসলামবাদ সিনিয়র মাদরাসা থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়। আজ বিশ^ প্রতিবন্ধী দিবস। এ দিবসে তার আকুতি ‘অবহেলা নয়, সুপরিকল্পিত উদ্যোগ’ প্রতিবন্ধীদের সনির্ভর করে তুলতে পারে। তিনিও লেখাপড়া শেষ করে ‘অফিসার’ হতে চান। সব বাঁধা পেরিয়ে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নে বিভোর সালমার অগ্রযাত্রায় প্রধান বাঁধা অর্থনৈতিক সচ্চলতা।
তার বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার মইলাকান্দা ইউনিয়নের লামাপাড়া গ্রামে। পাঁচ ভাইবোনের মাঝে সে সবার ছোট। কথা বলতে পারেন না। কানেও শোনেন না! ছবি আঁকেন। জীবনের গল্প লিখেন। পরিবারের দৈনন্দিন কাজও পরিপাটিভাবে করেন সালমা আক্তার। জে.ডি.সি ও দাখিল পরীক্ষাও উর্ত্তীণ হন এই তরুণী। শিক্ষক ও সহপাঠী আর এলাকাবাসীর নিকট ‘ বিস্মৃয়কর বালিকা’ হিসাবে পরিচিত।
সালমা অন্যান্য সহপাঠীদের চেয়েও দ্রুত পরীক্ষার খাতায় উত্তর লিখেন। হাতের লেখাও স্পষ্ট ও সুন্দর। এ প্রতিনিধি বলতেই চমৎকার একটি ছবি এঁকেও দেখান। কাগজের ফুল, বাঁশ-বেতের সৌখিন জিনিসপত্র তৈরিতেও পারদর্শী সালমা আক্তার।
শৈশবে সালমা আক্তার বর্ণমালার হাতেখড়ি নেন তার মা মোছা. মুমিনা খাতুনের হাতে। সহযোগী ছিলেন তার ভাই মো. শফিকুল ইসলাম। এরপরেই অন্যদের সঙ্গে ছুটে যান ব্র্যাক পরিচালিত প্রাক-প্রাথমিক স্কুলে। চক-সিলেটে অন্যদের দেখে দেখে নিজের করণীয় শিখে নেন তিনি। ছবি আঁকা, নৃত্য আর খেলাধূলাও পারদর্শী হয়ে উঠেন।
তারপর ৭নং দক্ষিণ লামাপড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিইসি ও নামাপাড়া বালিকা দাখিল মাদরাসা থেকে ২.৮৮জিপিএ নিয়ে জেডিসি ও জিপিএ ২.৯০ পেয়ে দাখিল (এস.এস.সি) পাশ করেন। নামাপাড়া বালিকা দাখিল মাদরাসার সহকারী মৌলভী হারুন অর রশিদ জানান, অধ্যয়নকালে ক্লাসে কোনদিন অনুপস্থিত ছিলো না। তার বিরুদ্ধে সহপাঠীদের কখনও কোন নালিশও ছিলো না। বরং সে ক্লাসের অন্যদের ক্ষেত্রে সহযোগী ছিলো। খেলাধূলাও পারদর্শী ছিলো। তিনি আরো জানান, আমি বিস্মৃত! কানে শোনে না, কথা বলতে পারে না আবার ক্লাসের পড়া ও পরীক্ষায় প্রশ্ন দেখে উত্তর দিতে পারে।
সালমা আক্তার জানায়, গৌরীপুর ইসলামাবাদ সিনিয়র মাদরাসায় আলিম অধ্যয়নকালে বছরের ৬মাস চলে গেলেও বই কিনতে পারেনি সে। বাবা চিরবিদায় নেন প্রায় ৭বছর আগে। সংসারে ২ ভাই আর ৩ বোন। মা মুমিনা খাতুনও প্রায়শ অসুস্থ্য থাকেন। মায়ের সেবা ও পুরো সংসারটিও গোছাতে হচ্ছে তাকে। শ্রেণি শিক্ষক মাহবুবুল আলম জানান, ক্লাসে নিয়মিত ছাত্রছাত্রীদের তালিকায় শীর্ষে সালমা আক্তার। ক্লাসে অন্যদের মাঝে উদাহরণ ছিলো ‘সালমা’। মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মো. এমদাদুল হক জানান, আমাদেরও আগে জানা ছিলো না, সত্যিই আমরা অবাক হয়েছি, তার মনোবিকাশ ও ইচ্ছাশক্তি দেখে।
তার ভাই মো. শফিকুল ইসলাম জানান, মাদরাসা থেকে বাড়ির দুরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। আমি ঢাকার একটি গার্মেন্টে কাজ করি। বাবা নেই ও মাও অসুস্থ্য। সহায় সম্বল বলতে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু আছে। তারপরেও বোনের অদম্য সাহস ও লেখাপড়া করার আকাঙ্খা দেখে মাদরাসায় ভর্তি করেছিলাম। তার সফলতায় আমরা উৎফুল্ল।