মাশরাফির ঝড়ে ফাইনালে জেমকন খুলনা

প্রকাশিত: ১০:১৭ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৪, ২০২০

স্বজন ডেক্স : পুরনো সেই মাশরাফিই যেন ফিরে এলেন! প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানদের মনে কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া যে মাশরাফি গড়ে দিতেন ব্যবধান। গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যিনি আবির্ভূত হতেন ত্রাতা হিসেবে। জেমকন খুলনা আজ (সোমবার) তার সবই পেলো সাবেক অধিনায়কের কাছ থেকে। মাশরাফি পেলেন ৫ উইকেট, আর খুলনা জিতলো ৪৭ রানে। ফল, প্রথম দল হিসেবে বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের ফাইনালে খুলনা।

শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে প্রথম কোয়ালিফায়ারে ব্যাটিংয়ের পর বল হাতে দাপট দেখালো মাহমুদউল্লাহরা। গোটা টুর্নামেন্টে দুর্দান্ত পারফর্ম করা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামকে ঘায়েল করলো ‘আসল’ ম্যাচে। এই দলটিকে হারিয়েই ফাইনালে জায়গা করে নিয়েছে খুলনা। জহুরুল ইসলামের ঝড়ো ৮০ রানে ভর দিয়ে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে খুলনা স্কোরে জমা করেছিল ২১০ রান। কঠিন এই লক্ষ্যে খেলতে নেমে মাশরাফির দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে ১৯.৪ ওভারে ১৬৩ রানে অলআউট চট্টগ্রাম।

হারলেও অবশ্য ফাইনালে ওঠার আশা শেষ হয়ে যায়নি চট্টগ্রামের। তাদের আরেকটি সুযোগ আছে। আগামীকাল (মঙ্গলবার) দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে মোহাম্মদ মিঠুনরা মুখোমুখি হবে এলিমিনেটর জিতে আসা বেক্সিমকো ঢাকার। এই ম্যাচের জয়ী দল শুক্রবার ফাইনালে মুখোমুখি হবে খুলনার।

ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং, তিন বিভাগে দুর্দান্ত পারফর্ম করে ফাইনালে খুলনা। মাশরাফি করলেন টি-টোয়েন্টির ক্যারিয়ারসেরা বোলিং। ৪ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে তার শিকার ৫ উইকেট।

কঠিন লক্ষ্যে শুরুটা একদমই ভালো হয়নি চট্টগ্রামের। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে দলের দুই প্রাণভোমরা লিটন দাস ও সৌম্য সরকার বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। দুজনই মাশরাফির শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরেছেন। মাশরাফির প্রথম ওভারে মিডউইকেটে খেলতে গিয়ে শামীম হোসেনকে ক্যাচ দিয়ে রানের খাতা না খুলেই বিদায় নেন সৌম্য। নিজের দ্বিতীয় ওভারে লিটনকে (২৪) বোল্ড করেন মাশরাফি। তৃতীয় উইকেটে মাহমুদুল হাসান ও মিঠুন মিলে প্রাথমিক বিপর্যয় সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের ৭৩ রানের জুটিতে ১০০ ছাড়ায় চট্টগ্রাম।

মাহমুদুল ২৭ বলে ৩১ রান করে মাশরাফির তৃতীয় শিকারে পরিণত হন। তবে মিঠুন টুর্নামেন্টের প্রথম হাফসেঞ্চুরি পেয়েছেন। আউট হওয়ার আগে ৩৫ বলে ৩ চার ও ৩ ছক্কায় নিজের ৫৩ রানের ইনিংসটি সাজান এই উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান। এরপর মোসাদ্দেক ১৪ বলে ১৭ রান করে আউট হলে চট্টগ্রামের বিপদ আরও বাড়ে।

টুর্নামেন্টের প্রায় প্রতি ম্যাচেই মিডল অর্ডারে ঝড় তোলা শামসুর আজও ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। কিন্তু ১০ বলে ১৮ রান করতেই থামতে হয় মাশরাফির সামনে। বদলি উইকেটকিপার এনামুল হকের দুর্দান্ত ক্যাচে সাবেক অধিনায়ক পান চতুর্থ উইকেট। ওই ওভারের শেষ বলে মোস্তাফিজুর রহমানকে ফিরিয়ে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৫ উইকেট পূর্ণ করেন মাশরাফি।

শামসুরের আউটের পরই আসলে খুলনার জয় সময়ের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। শেষ পর্যন্ত ২ বল বাকি থাকতে চট্টগ্রাম অলআউট হয় ১৬৩ রানে।

স্বভাবতই খুলনার সবচেয়ে সফল বোলার মাশরাফি। ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতা এই পেসার চলতি টুর্নামেন্টে অফ স্পিনার রবিউল ইসলামের পর দ্বিতীয় বোলার হিসেবে ৫ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন। ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি থেকে অসবর নেওয়া ৩৭ বছর বয়সী মাশরাফি বুঝিয়ে দিলেন, তিনি এখনও ফুরিয়ে যাননি!

এছাড়া আরিফুল হক ২৬ রানে ২টি ও হাসান মাহমুদ ৩৫ রানে ২ উইকেট নিয়েছেন। আর সাকিব ৩২ খরচায় পেয়েছেন ১ উইকেট।

গোটা টুর্নামেন্টে জেমকন খুলনার ব্যাটসম্যানরা হতাশ করলেও ফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে জ্বলে উঠলেন তারা। দুর্দান্ত গতিতে ছুটে চলা গাজী গ্রুপ চট্টগ্রামের বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় মেতে উঠেছিলেন খুলনার ব্যাটসম্যানরা। যেখানে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়ালেন জহুরুল ইসলাম। ওপেনিংয়ে নেমে ৫১ বলে খেলেছেন তিনি ৮০ রানের ইনিংস। তাতে জেমকন খুলনার সংগ্রহ দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২১০ রান। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টিতে এটাই খুলনার সর্বোচ্চ ইনিংস। আগের সর্বোচ্চ ছিল ফরচুন বরিশালের বিপক্ষে ১৭৩।

মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা খুলনার শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। স্কোরবোর্ডে ৭১ রান যোগ করে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান ১৬ রান করা জাকির হাসান। এক ম্যাচ দলের বাইরে থাকা ইমরুল কায়েস ফিরে দারুণ কিছু করার ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন। কিন্তু বড় শটস খেলতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে মাহমুদুল হাসানের তালুবন্দী হন ১২ বলে ২৫ রান করে।

গোটা টুর্নামেন্টে ব্যাটিংয়ে সংগ্রাম করা সাকিব আল হাসান কিছুটা হলেও নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ১৫ বলে খেলে যান ২৮ রানের ঝড়ো ইনিংস। ২ চার ও ২ ছক্কায় দ্রুত রান যোগ করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন মোস্তাফিজুর রহমানের বলে বোল্ড হয়ে।

সাকিবের বিদায়ের আগে তার চেয়েও বেশি ভয়ঙ্কর ছিলেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। শরিফুলের এক ওভারে পরপর তিনটি ছক্কা মেরে শুরু হয় মাহমুদউল্লাহ ঝড়। পরের ওভারে সঞ্জিত সাহাকেও মারের পরপর দুই চার। ডানহাতি স্পিনার সঞ্জিতের তৃতীয় বলে মিডউইকেটের ওপর দিয়ে খেলতে গিয়ে সৌম্য সরকারের তালুবন্দী খুলনা অধিনায়ক। আউট হওয়ার আগে ৯ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে করেন ৩০ রান।

.

“>যদিও মাহমুদউল্লাহ-সাকিবকেও ছাপিয়ে গেছেন জহুরুল। ওপেনিংয়ে নেমে এই ব্যাটসম্যান খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। শুরুতে তার ঝড়েই মূলত বড় সংগ্রহের ভিত পায় খুলনা। দারুণ ব্যাটিংয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে জহুরুল খেলেছেন ৮০ রানের ঝলমলে ইনিংস। ৫১ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৫ বাউন্ডারি ও ৪ ছক্কায়।

এছাড়া শেষ দিকে আরিফুল হকের ৯ বলে ১৫ ও মাশরাফি মুর্তজার এক ছক্কায় ২ বলে ৬* রানে ভর দিয়ে ২১০ রানের বড় সংগ্রহ দাঁড় করায় খুলনা।

চট্টগ্রামের সবচেয়ে সফল বোলার মোস্তাফিজ। বাঁহাতি পেসার ৩.৪ ওভারে ৩১ রান দিয়ে পেয়েছেন ২ উইকেট। নিজের চতুর্থ ওভারে দুটি বিমার মারায় বোলিং থেকে বহিষ্কার হন মোস্তাফিজ। বাঁহাতি এই পেসারের বাকি ২ বল করেন সৌম্য সরকার। এছাড়া সঞ্জিত সাহা ও মোসাদ্দেক হোসেন একটি করে উইকেট নিয়েছেন।