■ শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল থেকে :
ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন আশরাফুল ইসলাম নামে এক যুবকের মাথার ব্যান্ডেজে লেখা ‘চাপ দিবেন না, হাড় নেই’। গুরুতর আহত আশরাফুলের অবস্থা সংকটাপন্ন। তার ছোট ভাই মাসুদও গুরুতর আহত হয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের পূর্ব অরণ্যপাশা গ্রামে আহত এই দুই ভাইয়ের বাড়ি। আহত আশরাফুল (২০) স্থানীয়ভাবে একটি চায়ের দোকান চালানোর পাশাপাশি একটি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার ছোট ভাই মাসুদও একটি চায়ের দোকান চালায়।
গত শনিবার (১৮ জুন) বিকালে বাড়ির পাশের এক জলাশয়ে ছোট মাছ ধরা নিয়ে আশরাফুলের ছোট ভাই মাসুদের সাথে একই বাড়ির নবী হোসেনের ছোট ছেলে জুনায়েদের ঝগড়া ও হাতাহাতি হয়।
এক পর্যায়ে এ নিয়ে মাসুদের বড় ভাই আশরাফুল ঘটনাস্থলে গেলে প্রতিপক্ষ নবী হোসেন (৬৫) ও তার ছেলে সুমন মিয়া, রুবেল, রিপন, জুনাইদ সহ অন্যান্যরা ধারালো দা, শাবল ও লাঠিসোঁটা নিয়ে হামলা চালায়। উপর্যুপরি আক্রমণে আশরাফুল মাথা সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুরুতর জখম হয়। এ সময় মাসুদকেও কুপিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করা হয়।
স্থানীয়রা ঘটনার পরপরই আশরাফুল ও মাসুদকে উদ্ধার করে নান্দাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ও পরে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। আশরাফুলের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়া হলে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথা থেকে আশরাফুলের খুলি আলাদা করে ব্যান্ডেজ করা হয়। আলাদা করা খুলি সংরক্ষণ করা হয় সাভারের একটি ল্যাবরেটরিতে।
আশরাফুলের সাথে থাকা প্রতিবেশি শরীফ নামে একজন জানান, চিকিৎসক জানিয়েছেন ৩ মাস পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে আবারো অস্ত্রোপচার করে তার মাথার খুলি সংযুক্ত করা হবে। মাথায় ৪৪টির মত সেলাই দেওয়া হয়েছে।
আশরাফুলের বাবা মঞ্জিল মিয়া কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান, আমার দুই ছেলে দুই হাসপাতালে ভর্তি। এদের চিকিৎসা নিয়ে দৌঁড়াদৌড়ি করতে করতে খুবই পেরেশানির মধ্যে আছি। আমি গরীব মানুষ ওদের চিকিৎসার খরচ যোগাতে হিমশিম খাচ্ছি। আমার ছেলেদের বাঁচাতে চাই। এ ঘটনায় দায়ীদের শাস্তি চাই। তবে তিনি এখনো থানায় মামলা করার মত সময় পাচ্ছেন না বলে জানান।
সরজমিন গেলে নবী হোসেন সহ তার পরিবারের কাউকে বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ঘরের দরজায় তালা লাগিয়ে নারী-পুরুষ সবাই বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে। প্রতিবেশিরা জানান, নবী হোসেনের ছেলে রুবেল, জুনাইদ ও রিপনও স্থানীয়ভাবে চায়ের দোকান চালাত। তারাঁ এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চান।
উপজেলার বাঁশহাটি গ্রামের বাসিন্দা আশরাফুলের নানা আব্দুল বারী ( ৬৫) বলেন, এই ঘটনার পর থেকে বাড়ি খালি থাকায় আমি পূর্ব অরণ্যপাশা গ্রামে মেয়ের বাড়িতে এসেছি। তিনি জানান, ঘটনার পরদিনও নবী হোসেনের পরিবারের লোকজন বাড়িতে থাকলেও রাতে হঠাৎ করে সবাই বাড়িঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছে।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. আসাদুজ্জামান নয়ন জানান, ঘটনাটি শুনেছি। অনেক বেশি মারামারি হয়েছে। তবে এটি দুঃখজনক। আহত একজন ঢাকা হাসপাতাল, আরেকজন ময়মনসিংহে আছে। আরো আহত আছে, অন্যরা কোথায় আছে বলতে পারছি না।
নান্দাইল মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মিজানুর রহমান আকন্দ জানান, এ বিষয়ে কেউ থানায় কোন অভিযোগ জমা দেননি। ঘটনাটি সম্পর্কে আমি অবগত নই।