দুর্গাপুরে শতবর্ষী সরকারি পদ্মপুকুর ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণ, প্রশাসন নিরব!

হাইকোর্টের নির্দেশ উপেক্ষিত

প্রকাশিত: ৯:৩১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৭, ২০২০

কলিহাসান, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা)প্রতিনিধি:
নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর সদরের বাগিচাপাড়া’র শতবর্ষী সরকারি পদ্ম পুকুরটি এখন রাতের আঁধারে ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের মহোৎসব চালাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী বিপ্লব কর্মকার।

 

দখল কার্যক্রমে স্থানীয়রা বাঁধা দিয়ে আসলেও কার্যত কোন সুফল মিলছে না। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছে! প্রশাসনিক কোন বাঁধাই মানছেন না প্রভাবশালী এ বিপ্লব কর্মকার।

 

তাঁর এ ক্ষমতার খুটির জোর কোথায়! বিপ্লবের মনগড়া কর্মকান্ডে অতিষ্ট জীবন পার করছে স্থানীয়রা। ইউএনও,ডিসি’র কাছে লিখিত অভিযোগ করেও সুফল পাচ্ছেন না স্থানীয় ভূক্তভোগী সাবেক পৌর মেয়র কামাল পাশা।

শনিবার বিকেলে সরেজমিনে ঘুরে সরকারি এ পদ্ম পুকুরটি দখল ও ভরাট করে স্থাপনা নির্মাণের মহাযজ্ঞের এ চিত্র চোখে পড়ে!
দখল কার্যক্রম বন্ধে প্রশাসনের হস্তপে কামনা করে স্থানীয় প্রেসকাবে সংবাদ সম্মেলন করেও কোন সুফল পাননি এ ভুক্তভোগী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার চন্ডিগর ইউনিয়নের মৃত বিমল কর্মকারের পুত্র বিপ্লব কর্মকার। সরকারি এ পদ্ম পুকুরটি ৬১ শতাংশ ভূমিতে শত বছর পূর্বে নির্মিত হয়।

এ পুকুরটি ১৯৬৫-১৯৬৬ সালে সরকার একোয়ার করে নেন। আরএস ও আরওআর পদ্মপুকুর হিসেবে চিহ্নিত করা আছে। সর্বশেষ ভুমি জরিপে পুকুরটি কৌশলে বিমল কর্মকারের নামে করে নেন। বাগিচা পাড়ায় বিদ্যমান শতবছরের পুরনো সরকারি জলাশয় পদ্ম পুকুরটি যেন ছিলো কালের সাক্ষী। সৌন্দর্য্য মন্ডিত পদ্ম পুকুরটি এখন প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাওয়ায় জনমনে দেখা দিয়েছে ধ্রুমজাল।

জনস্বার্থে পরিবেশের ভারসাম্যের সহায়ক শতবর্ষী পদ্ম পুকুরটি রায় আইনানুসারে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পৌরসভা, উপজেলা পরিষদ ও উপজেলা প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করে অভিযোগ দিলেও কাঙ্খিত সুফল পাননি ভূক্তভোগী।
পরিবেশ সংরণ আইন ১৯৯৫(সংশোধিত-২০১০) এর ৬(ঙ)অনুযায়ী জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোন ব্যাক্তি প্রতিষ্টান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারী এমনকি স্বায়ত্ত¦শাসিত প্রতিষ্ঠান বা ব্যাক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে।

পরিবেশ সংরণ আইন ২০১০ সালে সংশোধিত অনুযায়ী যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পুর্ন নিষিদ্ধ এবং ভরাট কারির বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জীব বৈচিত্র্য নষ্ট করে পরিবেশগত তি ও বিধ্বংসী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।

জলাধার সংরণ আইন ২০০০ অনুযায়ী কোন পুকুর, জলাশয়, নদী, খাল ইত্যাদি ভরাট করা বেআইনি। আইনের ৫ ধারা মতে জলাধার হিসাবে চিহ্নিত জায়গার শ্রেণি পরিবর্তন করা যাবে না। সম্প্রতি হাইকোর্টের এক রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, পৌর এলাকাসহ দেশের সব পৌর এলাকায় অবস্থিত ব্যক্তিমালিকাধীন হিসেবে রেকর্ডভুক্ত পুকুরগুলো ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনের ২(চ) ধারায় প্রাকৃতিক জলাধারের সংজ্ঞাভুক্ত করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকার যেখানে পুকুর জলাশয় ভরাটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। আর সেখানে বিপ্লব কৃষ্ণ রায় সরকারি পুকুর ভরাট করে স্থাপনা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্ষাই করছেন না। পরিবেশ, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য ও জীববৈচিত্র্য রায় জরুরী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

দখল উচ্ছেদ বন্ধে স্থানীয় বাসিন্দা সাবেক পৌর চেয়ারম্যান কামাল পাশা এ প্রতিবেদককে জানান, ৬১ শতাংশ জমি নিয়ে সরকারি পদ্ম পুকুরটি বিস্তৃত ছিলো। স্থানীয় ভূমিদস্যু বিপ্লব কর্মকার কর্তৃক ওই সরকারি পুকুরটি লিজ নেয়ার নাম করে জোরপূর্বক ভরাট ও দখলের মহোৎসব চালিয়ে আসছে। বিভিন্ন সময়ে বাঁধা দিলেও ভরাট বন্ধ করা যায়নি। অদৃশ্য শক্তির জোরে সরকারি এ পুকুরটি কিভাবে ভরাট করে যাচ্ছে। সরকার সংশ্লিস্ট কর্তাদের লিখিত অভিযোগ দিয়েও কোন ধরণের সুরাহা মিলছে না। সরকারি সম্পত্তি রায় আমি প্রতিবাদ করলেও সরকার সংশ্লিস্টদের এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করেণ তিনি।

সরকারি পদ্মপুকুরটি ভরাট ও স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে বিপ্লব কৃষ্ণ রায় এ প্রতিবেদককে জানান, এ পুকুরটি আমার দখলে রয়েছে। সরকারিভাবে আমার বাবা বন্দোবস্ত নেন। আমিতো এ জায়গায় ভরাট ও ভবন নির্মাণের কাজ করতেই পারি। পরকর্তীতে এ জমি মামলা নিন্ম আদালত, জজ কোর্ট ও উচ্চ আদালতের ডিগ্রি রয়েছে তাঁর বলে দাবী করেণ তিনি।
এ ব্যাপারে ইউএনও ফারজানা খানম মুঠোফোনে প্রতিবেদককে জানান, সরকারি এ পুকুরটি নিয়ে দুপরে মাঝে টানাটানি চলছে। তবে পুকুরটির দ্বন্দ্ব নিরসনে বিজ্ঞ আদালত রায় দিয়েছে। ওই রায় নিয়েই মাটি ভরাট করছে। লিজ মানির রেকর্ডও তাঁদের রয়েছে। লিজ গ্রহিতা বিপ্লব কৃষ্ণ রায় প্রতি বছর খাজনা পরিশোধ করছে। তবে এ বিষয়টি আমি আরো গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি।