ধোবাউড়ায় উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবার বেহাল দশা!
““রোগীদের সুস্থ্য করার হাসপাতাল যখন নিজেই অসুস্থ্য””
জালাল উদ্দিন সোহাগ, ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ – ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায় ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে বেহাল দশা! বারবার অবমাননা করা হচ্ছে জাতীয় পতাকা। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলার কারণে ময়লা আবর্জনার মাঝে মেঝেতে ফেলে রাখাসহ প্রায় দিন’ই টানানো হচ্ছে না জাতীয় পতাকা।
এছাড়াও কাগজে কলমে কর্মরত চিকিৎসকগন উপস্থিত থাকলেও হাসপাতালে থাকছেন অনুপস্থিত। প্রতিদিন প্রায় ৪ থেকে ৫শ রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের পরিপূর্ণ সেবা নিশ্চিত করার দায়িত্বে কাগজে কলমে রয়েছেন পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাসহ ১১ জন মেডিকেল অফিসার। প্রতিদিন ২ থেকে ৩জন মেডিকলে অফিসার উপস্থিত থাকলেও বেশিরভাগ চিকিৎসক’ই থাকেন অনুপস্থিত। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন স্বাস্থ্য-কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা। ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। অপরদিকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সে টানানো হচ্ছে না জাতীয় পতাকা।
কিছুদিন পূর্বে স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্বহীনতায় কমপ্লেক্সের মঝেতে ময়লা আবর্জনার মধ্যে অবহেলায় ফেলে রাখা ছিলো রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জাতীয় পতাকা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশে সমালোচনার তীব্র ঝড় বইলেও টনক নড়েনি উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের।
দায়িত্বরত বেশীরভাগ চিকিৎসকের অনুপস্থিতিতে ২ থেকে ৩ জন চিকিৎসকের উপস্থিতিতে করোনার এই মহামারীতে সামাজিক দুরত্ব কিংবা নিরাপত্তা ছাড়াই চিকিৎসকের কক্ষের সামনে ঝুকি নিয়ে ভীড় করে চিকিৎসা নিচ্ছেন উপজেলার সাধারণ মানুষ। অনেকই আবার চিকিৎসা না নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতায় চাপা ক্ষোভ নিয়ে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বুধবার বেলা ১১টা! স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চত্বরে টানানো হয়নি জাতীয় পতাকা। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলা স্বাস্থ্য পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দায়িত্ব অবহেলায় প্রায়’ই টানানো হয় না জাতীয় পতাকা। এব্যপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও মিলছে না কোন স্থায়ী সুরাহা। জরুরী বিভাগে নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে চলছে রোগীদের সার্জারী। আউটডোরে চিকিৎসকের কক্ষও রয়েছে তালাবদ্ধ। মাখড়সার ঝালে ফুটে উঠেছে দীর্ঘদিন কক্ষ না খুলার চিত্র।
হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত চাদরে বালিশ ব্যতীত শুয়ে আছেন বেশীরভাগ রোগী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালে ডেলিবারী করা এক রোগী অভিযোগ করে বলেন, লেবার ওয়ার্ডে ডেলিবারীর করতে চিকিৎসকেরা রোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিচ্ছেন। দাবীকৃত টাকা না দিলে নানা তালবাহানায় চিকৎসায় করা হয় অবহেলা।
অপরদিকে ৩ থেকে ৪শ রোগীর চিকিৎসায় উপস্থিত থাকছেন মাত্র ৩/৪ জন চিকিৎসক। এনিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মরত এক কর্মচারী জানান, সপ্তাহে ২-৩ দিন হাসপাতালে আসেন পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা আবু হাসান শাহীন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন স্টাফ এর সাথেও নেই তার কোন সু-সম্পর্ক। এছাড়াও কর্মরত মেডিকেল অফিসার ডাঃ কনক দে, ডাঃ মিজানুর রহমান, ডাঃ আতাউর রহমান খান সবুজসহ ডাঃ মাহবুবা আজমেরী জেরিন মাঝে মধ্যে সপ্তাহে দু-একবার আসেন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এসে হাজিরা খাতায় একদিনে সব স্বাক্ষর দিয়েই চলে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মাঝে ৬ ইউনিয়নে দায়িত্বে থাকা ৬ জন মেডিকেল অফিসার মাসে একবারও যান না ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতে। যার ফলে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলোতেও ব্যহত হচ্ছে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা। চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে প্রতিটি ইউনিয়নের দরিদ্র অসহায় মানুষ।
কর্মরত চিকিৎসকদের অনুপস্থিতির বিষয়টি জানতে পরিবার কল্যাণ কর্মকতা আবু হাসান শাহীন এর অফিস কক্ষে গিয়ে দেখা যায় তিনি অফিসে নেই। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন,মাঠে কাজ করার জন্য অফিস থেকে বের হয়েছেন।
সত্যতা যাচাই করতে তার ব্যক্তিগত গাড়ীর ড্রাইবারকে কল দেওয়া হলে ড্রাইবার জানায়, ময়মনসিংহে নিজ বাসায় যাচ্ছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আবু হাসান শাহীন। প্রধান সহকারী আলী হোসেনের অফিস কক্ষে হাজিরা খাতায় দেখা যায়, বেশীরভাগ দিন’ই অনুপস্থিত থাকা চিকিৎসকসহ প্রত্যেক চিকিৎসকের বুধবার ব্যতীত প্রতিদিনের উপস্থিতি স্বাক্ষর দেওয়া রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কোন জাবাব মেলেনি প্রধান সহকারী আলী হোসেনের কাছে।
এ ঘটনায় সিভিল সার্জন ডা. মশিউল আলম এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে কোন কথা না বলে ব্যস্ততা দেখিয়ে বিষয়টি এড়িয়ে যান। এ নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান ডেভিড রানা চিসিম বলেন, পতাকা অবমানার বিষয়টি উপজেলা প্রশাসনসহ আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছি! তদন্তপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।