আতাউর রহমান মিন্টু, গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) ঃ
৫ অক্টোবর, সোমবার গফরগাঁওয়ের স্থানীয় শহীদ দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক্বাহিনীর সাথে সম্মুখ যুদ্ধে উপজেলার মশাখালী ইউনিয়নের শিলা বাজারের কাছে ৫ বীর মুুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের একই গণকবরে সমাহিত করে সহযোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধারা।
জানা গেছে ১৯৭১ সালের ৫ অক্টোবর শীলা ব্রীজ ও শীলা বাজারের সম্মুখ যুদ্ধে শহীদ হন ১৪ বছরের কিশোর মুক্তিযোদ্ধা ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের মনিহরপুর গ্রামের এবি সিদ্দিক, গফরগাঁও উপজেলার মশাখালী গ্রামের আব্দুল আওয়াল জানু, দরিচাইরবাড়িয়া গ্রামের মজনু মিয়া, মুখী গ্রামের চাঁন মিয়া ও আবুল হোসেন।
ঐ যুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেওয়া বেঁচে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধা, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক কমান্ডার ও মশাখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান সেলিম আহাম্মেদ স্মৃতিচারন করে বলেন, ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢালু ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন বালজিৎ সিং এর নির্দেশনা অনুযায়ী ঢাকা-ময়মনসিংহ রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল উপজেলার প্রসাদপুর গ্রামের ওমর আলী তালুকদারের বাড়িতে অবস্থান নেয়। মশাখালী-কাওরাইদ রেলষ্টেশনের মধ্যবর্তী হাওয়াখালী রেলব্রীজ বোমা মেরে উড়িয়ে দেওয়া হয়।
এ সময় মান্নান নামে একজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। এরপর আমরা শীলা বাজার সংলগ্ন শীলা ব্রীজের দখল নেই। ৫ অক্টোবর সকাল ১০ টার দিকে ৬০/৭০ জনের পাক হানাদার বাহিনী শীলা নদীর পূর্বপাশ দিয়ে এসে আমাদের ১০/১২ জনের ক্ষ্রদ্র মুক্তিযোদ্ধা দলের উপর হামলা চালিয়ে ঘেরাও করে ফেললে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে আমাদের যুদ্ধ শুরু হয় ।
যুদ্ধে এবি সিদ্দিক নামে ১৪ বছরের একজন কিশোর থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে পাক সেনাদের মোকাবেলায় নামে। এক পর্যায়ে পাক হানাদার বাহিনী চাইনিজ এলএমজির একটানা ব্রাশফায়ারে হঠাৎ গুলিবিদ্ধ হয়ে তার মুখমন্ডল ও শরীর ঝাঝরা হয়ে যায়।
তার সেই মৃত্যু আমাদের মাঝে নতুন প্রতিশোধ গ্রহনের জন্ম দেয়। তার লাশ সাথে নিয়েই আমরা যুদ্ধ চালিয়ে যাই। সেইদিন আরও ৪ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন এবং মশাখালী গ্রামের হাবিবুর রহমান নামে আরও একজন মুক্তিযোদ্ধা আহন হন। বিকাল ৪টার দিকে পাক হানাদার বাহিনী স্থান ত্যাগ করলে ঐ দিন রাতেই শীলা ব্রীজের অল্প দুরে আওলাজুর গ্রামে একটি কবর খুড়ে সেই কবরেই ৫ শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়। এরপর আহত মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমানকে নিয়ে আমরা পাশ্ববর্তী বদলী গ্রামে আশ্রয় নেই।
মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পরেও আওলাজুর গ্রামে ৫ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গণকবর আজো অবহেলিত, অনাদ্রিত ও উপেতি। গণকবরে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ফলক পর্যন্ত নেই। বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এই ৫ শহীদ মুক্তিযোদ্ধার গণকবরের খবর জানেই না। ২০০৫সালে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গৌতম কুমারের ব্যক্তিগত উদ্যোগে গণকবরটি পাকা করা হয়।
গণকবরে দেয়ালে ৫টি ছোট মিনার দিয়ে ৫জন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে স্মরন করা হয়েছে। গণকবরের উপরে পূর্ণ বয়স্ক ৪জন মুক্তিযোদ্ধার শরীরের মাপে ৪টি ও শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধার শরীরের মাপে একটি কবরের পাকা অবয়ব দেওয়া হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের দাবী ছিল, এখানে একটি স্থায়ী স্মৃতিসৌধ নির্মানের। মুক্তিযোদ্ধাদের সে দাবী আজও বাস্তবায়িত হয়নি।