মজিবুর রহমান, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় পাকিস্তান-ভারতের বাসমতির সমমানের বাংলাদেশের বিআর-৫০ বাংলামতি ধান চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন উপজেলার কান্দিউড়া ইউপির তেঁতুলিয়া গ্রামের মো.আব্দুল মান্নান ভূঞা। কেন্দুয়ার বিশাল জালিয়ার হাওড়ের বুকে সৌরভ ছড়াচ্ছে এখন সুগন্ধি বিআর-৫০ বাংলামতি। চাষী
মো.আব্দুল মান্নান ভূঞা পেশায় একজন শিক্ষক। তিনি কেন্দুয়া সরকারি কলেজের উৎপাদন ব্যবস্থাপনা ও বিপণন বিভাগের প্রভাষক। বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের মহামারির ফলে কলেজ বন্ধ রয়েছে করোনাকালের দুর্যোগ সময় কাটানোর জন্য নিজের জমিতে কৃষিকাজে মন দেন। এবছরে বোরো মৌসুমে ৫০ শতক জমিতে সুগন্ধি বাংলামতি বি-ধান-৫০ আবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বাংলামতি ধান গাছ কিছুটা ছোট আকারের। তবে গোছায় অনেক ধান। প্রতিটি ধান বেশ লম্বা ও সরু। ধানে সোনা রং ধরেছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে ঘরে তুলবেন স্বপ্নের সোনালী ফসল। এখন ক্ষেতের চারপাশে শুধুই বাংলামতি ধান ম-ম গন্ধ ছড়াচ্ছে, যা আশপাশের কৃষকদের বিমোহিত করেছে। শুধু ধানের গন্ধেই নয় বাংলামতি ধান ক্ষেতের চারপাশের হাইব্রীড ও অন্যান্য জাতের ধানি জমি যখন প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিট শকে পুড়ে ছারখার সেখানে বাংলামতি ধানের হাসির ঝিলিক সবাইকে বিমোহিত ও হতবাক করছে।
আব্দুল মান্নান ভূঞা শুধু বাংলামতি নয় নতুন জাতের বি-ধান-৮৮ ও বি-ধান-৮৯ আবাদ করেছেন। তিনি ১ একর ৯০ শতক জমিতে বি-ধান-৮৮ এবং ৫ একর জমিতে বি-ধান-৮৯ আবাদ করেছেন। এসব ধান ফলন ভাল হয়েছে। দুই/চার দিনের মধ্যেই স্বপ্নের ফসল ঘরে তুলবেন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিট শকে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। অথচয় পাশের জমি পুড়ে ছারখার। নতুন জাতের ধান আবাদ করে আশানুরূপ ফলন হওয়ায় আব্দুল মান্নান বেশ খুশি।
আব্দুল মান্নান ভূঞা বলেন,দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে কলেজ বন্ধ হয়ে যায়। এই সময় কেমনে কাজে লাগানো যায়
এই বিষয়টি নিয়ে কেন্দুয়ার সাবেক কৃষি অফিসার ও বর্তমানে বগুড়া জেলা বীজ প্রত্যয়ন অফিসার হাসান ইমামের সাথে শেয়ার করি। তিনি জানতে আমাদের আবাদ করার মতো প্রচুর জমি আছে। সেই থেকে নতুন জাতের ধান চাষের পরামর্শ দেন। হাসান ইমাম স্যারের পরামর্শে ও স্থানীয় কীটনাশক বিক্রেতা ওয়াসিমের সহযোগীতায় বোরো আবাদ শুরু করি। সবাই যেহেতু বি-২৮,২৯ ও হাইব্রীড ধান চাষে ব্যস্ত আমি নেই ভিন্ন চিন্তা। হাসান ইমাম স্যারের পরামর্শ ক্রমে সুগন্ধি জাতের বি-ধান-৫০ বাংলামতি ও বি-ধান-৮৮ ও ৮৯ ধানের বীজ সংগ্রহ করি গাজীপুর ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে। নিয়মানুযায়ী ধানের চারা উৎপাদন করে জমিতে রোপন করি। তবে বীজ সংগ্রহ করতে যতেষ্ট বেগ পোহাতে হয়েছে বলেও জানান তিনি। তিনি আরো বলেন, চারপাশে বোরো ধানের ক্ষেত। মাঝে ৫০ শতকের ছোট্ট এক টুকরো জমিতে বাংলামতি ধানের চাষ করছি। অন্যান্য ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ সার প্রয়োজন হয়, বাংলামতি বেলায় কম লাগে। বাংলামতি ধানের খ্যাতি অনেক আগে থেকে শুনে আসছি । আর এখন নিজের হাতে বাংলামতি ধান চাষ করছি। সবমিলিয়ে বাংলামতি ধান চাষে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর আশা করছেন এটুকু জমিতে অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ মন ফলন পাবেন।
কোন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আগামী ৭-৮ দিনের মধ্যে ফসল ঘরে তুলবেন। বি-ধান-৮৮ ও ৮৯ মাড়াই চলছে। এই দু’টি জাতের ভাল ফলন হয়ে। হিট শকে ৩-৫% ধান নষ্ট হতে পারে। তার জমির ফসল দেখে অন্যরাও এই ধান চাষ করতে আগ্রহ প্রকাশ করছে বলে জানিয়ে আব্দুল মান্নান জানান, উৎপাদিত ধানের কিছু অংশ পরিবারের খাওয়ার জন্য রাখবেন। বাকিটা বীজ ধান হিসেবে রাখবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার একেএম শাহজাহান কবির বলেন, দেশের কৃষিবিজ্ঞানীদের আবিষ্কার করা সুগন্ধি জাতের বিআর ৫০ ধান কেন্দুয়া চাষ হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। মান্নান সাহেব যদি এ ধানের চাষ করে থাকে, তবে তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।