কলিহাসান,দুর্গাপুর(নেত্রকোনা)প্রতিনিধি
নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলার সোমেশ্বরীর নদীর বিভিন্ন বালু মহাল থেকে স্তুপ করা পাথর সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাতের আঁধারে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে পাথরখেকো কতিপয় চক্ররা। গত (২৫ এপ্রিল) রোববার দিনগত গভীর রাতে পাথর বুঝাই ট্রাক দেখা গেছে।
জানাগেছে, সোমেশ^রী নদীতে ৫টি বালু মহাল রয়েছে। এর মধ্যে ১৪২৮সনে ১বছরের জন্য ৫টি ঘাটের শুধু বালু উত্তোলনের জন্য ইজারা কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বালুর সাথে উত্তোলিত পাথর কোন ইজারা না দেয়ায় সেগুলো সরকারি হাওলাতেই থেকে যায় প্রতি বছর। উত্তোলিত পাথর গুলো বছরের কোন এক সময় উপজেলা প্রশাসন সরকারি ভাবে নিলামে বিক্রি করেন।
ইতোমধ্যে ৫টি বালু মহালের ৪টি মহাল চালু হলেও ১নং মহাল চালু না হওয়ায় ওই ঘাট থেকে জমাকৃত পাথরগুলো রাতের আঁধারে চুরি করে নিচ্ছে পাথর খেকো একটি চক্র। বালু মহালের ইজারাদার একেক সময় একেক জন থাকলেও পাথর চুরির উৎসব কখনও বন্ধ হয় না বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। পাথরের ব্যবসার সাথে প্রভাবশালীরা ছাড়াও উপর মহলের হাত রয়েছে বলে জানান বেশ কয়েকজন বালু ব্যবাসায়িরা।
সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভিন্ন পন্থায় প্রায় রাতেই ৫ থেকে ৬ ট্রাক পাথর ১নং বালু মহাল থেকে চুরি হচ্ছে বলে বাজারের এক ব্যবসায়ির দোকানের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে। নদীতে পাথর খেকো চক্রটি বেপরোয়া হওয়ায় ওই চক্রের কাছে নদীর পাড়ের মানুষ অসহায়। চক্রটি এতোটাই প্রভাবশালী যে তাদের বিরুদ্ধে নদীর পাড়ের কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না।
সরকারি ভাবে বালুর ইজারা নিয়ে জমাকৃত বালু খনন করে নেয়ার কথা থাকলেও বাংলা ড্রেজার বসিয়ে ভুগর্ভস্থ থেকে বালু উত্তোলনের ফলে বালুর সাথে উঠে আসে অসংখ্য ছোট ও বড় পাথর। যে যার মতো নদীরপাড়ে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বিশাল গর্ত করে বালু উত্তোলন করছে। এই বালু উত্তোলনের প্রতিবাদ করলেই রয়েছে নানা বিপদ ঘটে প্রতিবাদকারীদের।
আত্রাখালী ঘাটের ১নং বালু মহাল এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানান, মাঝে মধ্যে স্থানীয় প্রশাসনের কর্তারা, লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করলেও কোন কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না অপরিকল্পিত বালু-পাথর উত্তোলন। এসব অভিযানে কিছু ড্রেজার আটক বা আগুন দিলেও নেপথ্যের কারিগররা থাকছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আমরা হয়তো একদিন থাকবো না। এই বালু উত্তোলনের জের বুঝতে পারবে এলাকাবাসী বড় ভুমিকম্প হলে।
ঘাট এলাকার কয়েকজন দোকানদার বলেন, পত্রিকায় নাম লিখলেই বাড়িতে এসে মারপিট করবে বালু ও পাথর লুটের চক্র। রাতভর অত্র এলাকা দিয়ে বালু-পাথরের ট্রাক আসা যাওয়া ও হাইড্রোলিক হর্নের বাজানোতে আমরা কানে হাটকালা হওয়ার পথে। প্রতিবাদ করলে মারধর করবে।
যার কারনে এখন আর কেউ প্রতিবাদ করেনা। তারা আরও বলেন, নদীর পাড়ে নাম মাত্র জমি কিনে বালু পাথর তুলে এখানে কোটিপতি হয়েছেন রাজনৈতিক নেতা ছাড়া আরো বেশকিছু প্রভাবশালীরা। এতে খেটে খাওয়া মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হয়নি। প্রভাবশালীরা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এ লুটতরাজ করে আসছে প্রতিনিয়ত।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার(ইউএনও)মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান এ প্রতিবেদককে জানান, আমি এই উপজেলায় নতুন যোগদান করেছি। ইতোমধ্যে অন্যান্য মহাল গুলো চালু হলেও ১নং মহাল এখনো চালু হয়নি। পাথর চুরির বিষয়টি আমি শুনেছি। পুলিশি প্রহরা জোরদার করে পাথর চুরির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।