ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়নের বগার বাজার-গুজিয়াম ১১’শ মিটার কাঁচা সড়ক পাকাকরণের কাজ শুরু হয়। কিন্তু এক কোটি ৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ওই সড়কের নির্মাণকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে নিন্মমানের ইটের খোয়া। এবিষয়ে স্থানীয়রা মৌখিকভাবে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করলেও মিলছে প্রতিকার।
দেশ স্বাধীনের পরবর্তী সময়ে ত্রিশাল উপজেলার আমিরাবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের তৎকালীন চেয়ারম্যান আবদুল হামিদ আমলে বগার বাজার-গুজিয়াম গ্রামের সরু সড়কটি মাটি ভরাট করে প্রশস্তকরণ হয়েছিল। এরইমধ্যে উপজেলার অনেক গ্রামীন কাঁচা সড়ক পাকাকরণ হলেও স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বগার বাজার-গুজিয়ামের ওই সড়কটি পায়নি উন্নয়নের কোন ছোঁয়া। দীর্ঘ প্রতিক্ষার ক্ষণ শেষে আলোর মুখ দেখেন স্থানীয় এলাকাবাসি।
গত বছরের ১৫ জুলাই থেকে বগার বাজার-গুজিয়াম ১.১ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি পাকাকরণে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এক কোটি ৬ লাখ টাকা বরাদ্দে ওই সড়কের নির্মাণকাজ পান মেসার্স হৃদয় এন্টারপ্রাইজ নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। এবছরের ১৪ জানুয়ারির সড়ক নির্মাণকাজের সময়সীমা অতিক্রম করে ২য়দফায় সময় বর্ধিত হয়েছে জুন পর্যন্ত। ওই সড়কের নির্মাণকাজে নিন্মমানের ইটের খোয়া ব্যবহৃত হলে, এবিষয়ে মৌখিকভাবে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ এলজিইডি কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান সড়ক নির্মাণকাজের গুনগত মান নিশ্চিত করতে সড়ক থেকে নিন্মমানের খোয়া অপসারণের জন্য মেসার্স হৃদয় এন্টারপ্রাইজের নামে চিঠি প্রেরণ করেন। কিন্তু ওই প্রভাবশালী ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান উপজেলা প্রকৌশল বিভাগকে তোয়াক্কা না করে সড়কে নিন্মমানের ইট ব্যবহার অব্যাহত রেখেছে।
সরেজমিন বগার বাজার-গুজিয়াম সড়কে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ অংশে ব্যবহার করা হয়েছে ৩ নাম্বার ইট। পিকেট ইটের সঙ্গে মিশ্রিত আছে ঝামা। গত এক বছরে ১.১ কিলোমিটার সড়কের অর্ধেকেরও কম অংশে পড়েছে সাবব্যাচ ও মেকাডমের খোয়া। বাকি অংশে বালু না ফেলার ফলে কর্দমাক্ত সড়কে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন চলাচলকারীরা।
আবদুস সালাম মাষ্টার, কৃষক রফিকুল ইসলাম, কাঁচামাল ব্যবসায়ি আতাউর রহমান, চা-দোকানী মনু মিয়াসহ স্থানীয়রা জানান, দেশ স্বাধীন হওয়ার বছর দেড়েক পর হামিদ চেয়ারম্যানের আমলে মাটি ভরাট করে ছোট সড়ক বড় করা হয়েছিল। স্বাধীনতার এত বছর পর সড়কের পাকাকরণের কাজ শুরু হলেও নির্মানাধীন সড়কে ১ নাম্বার ইটের সংখ্যা খুব কম। উপজেলা প্রকৌশল বিভাগে জানানো হলেও নেই কোন প্রতিকার। ৩ নাম্বার ইট দিয়েই কাজ চলছে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ কর্তৃক গুনগত মান নিশ্চিতকরণ চিঠি সম্পর্কে জানতে মেসার্স হৃদয় এন্টারপ্রাইজের সত্বাধিকারি জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিবেদককে উল্টো প্রশ্ন করে বলেন, নিন্মমানের ইট ব্যবহার করলেই কি আপনার কাছে সেটার জবাবদিহি করতে হবে ? আপনি কে ? এইসব দেখার কাজ কি আপনার ? উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারসহ কয়েকজন কর্মকর্তা কাজ দেখছে। তারা যদি কাজের মান খারাপ না বলে, তাহলে আপনার সমস্যা কোথায় ?
সরেজমিন ওই সড়কে ৩ নাম্বার ইটের খোয়া দেখে আসলেও উপ-সহকারী প্রকৌশলী শওকত হোসেন সমকাল প্রতিবেদককে জানান, নিন্মমানের ইট অপসারন করানো হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান জানান, স্থানীয়দের অভিযোগের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি সড়ক নির্মাণকাজের গুনগত মান নিশ্চিত করতে মেসার্স হৃদয় এন্টারপ্রাইজকে লিখিত চিঠি প্রেরণ করা হয়েছে। তারপরও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সড়কে যদি নিন্মমানের ইট ব্যবহার অব্যাহত রাখে, তবে পরিদর্শন সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।