কলিহাসান, দুর্গাপুর (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি :
অবিরাম বৃষ্টি ও পাহাড়ী ঢলে নতুন করে সোমেশ্বরী নদীর ভাঙনে চোখের পলকেই বিলীন হচ্ছে নানা স্থাপনা। নেত্রকোনার দুর্গাপুর পৌর সদরের শিবগঞ্জ, ডাকুমারা, কুল্লাগড়া ইউনিয়নের কামারখালী, বহেরাতলী, বড়ইকান্দি, রানীখং, ও দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ফারংপাড়া, বিরিশিরি ইউনিয়নের চৈতাটি,বারইপাড়া গ্রামের বেশ কিছু অংশ ভেঙ্গে গেছে। ফসলি জমি, বসতভিটা, রাস্তা-ঘাট ও শিাপ্রতিষ্ঠান কিছুই ভাঙন থেকে রা পাচ্ছে না। সোমেশ্বরীর ভাঙনে গতদুই বছরে বিলীন হয়েছে ওই এলাকার শত শত পরিবার। শুক্রবার বিকেলে এমনটাই জানালেন কামারখালী এলাকার শত শত ভুক্তভোগী মানুষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্থায়ী কোন বেরিবাঁধ না থাকায় ভাঙন আতঙ্কে দিন পার করছে ওই এলাকার ৮ গ্রামের মানুষ। থামছে না নদী ভাঙন, বাড়ছে সাধারণ মানুষের কান্না। সোমেশ্বরীর করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে যাচ্ছে মানুষের মাথা গোঁজার শেষ সম্বলটুকু। দুঃশ্চিন্তায় পড়েছেন নদীর পাড়ে বসবাসকৃত আদিবাসী সহ হাজারো মানুষ। নতুন করে নদীর পানি বৃদ্ধিতে হুমকির মুখে রয়েছে মসজিদ, মন্দির, বিদ্যালয়সহ ঐহিত্যবাহী রানীখং ধর্মপল্লী।
২০১৯-২০অর্থবছরে ভাঙন রোধে প্রায় আট কোটি টাকা ব্যয়ে ৯শ মিটার ভাঙন এলাকায় ৬টি প্যাকেজের মাধ্যমে জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ শুরু হলেও ধীরগতিতে কাজ করায় এখনো তা শেষ হয়নি। নয়শত মিটার কাজের মধ্যে মাত্র ২শত মিটার কাজ সম্পন্ন হলেও মুখ থুবড়ে পড়ে আছে বাকী কাজগুলো। ভাঙন এলাকা গুলোতে বালু ভর্তি জিও ব্যাগ ফেলানোর জন্য ভরে রাখা শত শত ব্যাগ পড়ে থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ট্রাক্সফোর্স এর তদারকি না থাকায় তা নষ্ট হচ্ছে বলেন জানান এলাকাবাসী। ওই কাজে নিয়োজিত বেশ কয়েকটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে বর্ষা শুরু হওয়ার আগ থেকে বারংবার তাগিদ দেয়া হলেও তা কোন প্রকার আমলে নেয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে ওই এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হক বলেন, আমার বলার ভাষা নাই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের এই বিমাতা সুলভ আচরণ দেখে। আমরা এ দেশের নাগরিক কিনা, ঘৃনা হচ্ছে নিজেদের প্রতি। যে কাজ ৩ মাসে শেষ হওয়ার কথা, তা ১বছরেও শেষ হচ্ছে না। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় আতঙ্কে রয়েছি আমরা।
পানি উন্নয়ন বোর্ড এর নেত্রকোনা জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহন লাল সৈকত প্রতিবেদককে জানান, নদীতে নতুন করে পানি আসার ফলে ভাঙন দেখা দিয়েছে। পাউবো নিয়োজিত টাক্সফোর্স ভাঙন এলাকায় ফেলানোর জন্য বস্তা গুলো গুনে না দিলে ঠিকাদার ফেলতে পারবেনা বিধায় কাজে ধীরগতি সৃষ্টি হয়েছে। অফিসের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা হয়েছে দু-তিন দিনের মধ্যেই নতুন করে বস্তা ফেলার কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রাজীব-উল-আহসান জানান, সোমেশ্বরী নদীর ভাঙন ঠেকাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা প্রশাসন, জেলা প্রশাসক মহোদয়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় ভাঙন রোধে ওই এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানোর কাজ শুরু হয়েছে। পাহাড়ী ঢলে নতুন করে ভাঙন দেখা দেয়ায় এলাকা পরিদর্শন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত কাজ সম্পন্ন করতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। আশা করছি দু‘একদিনের মধ্যেই কাজ শুরু হবে।