তারাকান্দা, ময়মনসিংহ প্রতিনিধি। : আগামী জাতীয় ২৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন ঘিরে সরগরম তারাকান্দা উপজেলা। তবে ১০টি ইউপির ভোটের দিন যতই এগিয়ে আসছে, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠাও বাড়ছে। বিএনপি নির্বাচনে প্রার্থী না দিলেও আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। ফলে দলের মনোনীত প্রার্থী থাকলেও বিদ্রোহীদের কারণে তাঁরা কোণঠাসা। এই বিদ্রোহী প্রার্থীরা এখন আওয়ামী লীগের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, তারাকান্দার ১০টি ইউপিতে ৬৩ জন চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা পথসভা, জনসভা, উঠান বৈঠক, গণসংযোগ, মতবিনিময়সহ ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
দলীয় ও নির্বাচন কার্যালয় সূত্র জানায়, প্রতিটি ইউপিতে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। ফলে অনেক ইউপিতে নৌকার বিজয় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে উপজেলা আওয়ামী লীগ বিদ্রোহীদের সতর্ক বার্তা দিয়েছে। এ ছাড়া বিদ্রোহীদের বহিষ্কারের জন্য জেলা আওয়ামী লীগের কাছে সুপারিশ করেছে।
তবে অধিকাংশ বিদ্রোহী প্রার্থী তাঁদের অবস্থানে অনড়। তাঁরা জোর প্রচারণাও চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক ইউপিতে বিদ্রোহীদের নিয়ে বিপাকে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। প্রচার চালিয়েও সুবিধা করতে পারছেন না তাঁরা।
চরপাড়া গ্রামের ভোটার হেলাল সরকার বলেন, যাঁরা সৎ, যোগ্য এবং মানুষের মঙ্গলের জন্য কাজ করে তাঁদের আমরা ভোট দেব।
কামারগাঁও গ্রামের শাহজাহান নামে আরেক ভোটার বলেন, বিঘত সময়ে আপদে-বিপদে যে পাশে রয়েছে তাঁকে ভোট দেওয়ার বিষয়ে চিন্তাভাবনা করছি।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের অনেককে আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতারা সমর্থন দিচ্ছেন। এতে সংঘর্ষ-সহিংসতা বাড়তে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন ভোটাররা। উপজেলার বিসকা ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুছ ছালাম মন্ডল। তাঁর বিপক্ষে রয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাকির আহমেদ বাবুল, সহসভাপতি আহাম্মদ আলী খান ও সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সাঈদ।
তারাকান্দা ইউপিতে নৌকা নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে রয়েছেন খাদেমুল আলম শিশির। এখানে বিদ্রোহী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হারুনূর রশীদ, কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান মিজান ও উপজেলা তাতী লীগের সভাপতি সায়ের আলমগীর টুটুল।
রামপুর ইউপিতে নৌকা পেয়েছেন আজিজুর রহমান। আর বিদ্রোহী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন উপজেলা কৃষক লীগের আহ্বায়ক ও আওয়ামী লীগের সদস্য এমরান হোসেন আকন্দ।
বানিহালা ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আলতাব হোসেন খন্দকার। তাঁর সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ.লীগের সহ- সভাপতি আবুল হাসনাত আসমত।
কাকনী ইউপিতে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছেন বর্তমান চেয়ারম্যান মশিউর রহমান রিপন। তার সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল খালেক তালুকদার।
ঢাকুয়া ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইকরামুল হক তালুকদার। এখানে বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেজবাহ উদ্দিন মন্ডল।
বালিখাঁ ইউপিতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামছুল আলম। তাঁর সঙ্গে বিদ্রোহী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. সিদ্দিক হোসেন।
কামারগাঁও ইউনিয়নে আ.লীগের প্রার্থী হয়েছেন.দুই বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম। তার সাথে বিদ্রোহী হিসাবে স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন,রফিকুুল ইসলাম বাদল ও নাইমুর রহমান উজ্জল।
এ বিষয়ে একজন বিদ্রোহী প্রার্থী বলেন, ‘বিগত পাঁচ বছর সারা ইউনিয়নে মানুষের কাছে গিয়েছি, কথা বলেছি। আশা করি ভোটে এর প্রতিফলন পাব।’
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি প্রদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, দলীয় পদে থেকে যাঁরা ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, তাঁদের দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া দলীয় পদে থেকে যাঁরা নৌকার বিরুদ্ধে অন্য প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছেন, তাঁদের সতর্ক করা হয়েছে।
তারাকান্দা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এ. কে. এম সাইদুজ্জামান জানান, উপজেলার ১০টি ইউপির মধ্যে তারাকান্দা, গালাগাঁও, কাকনী ও ঢাকুয়ায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে। মোট ভোটার দুই লাখ ৩৬ হাজার ৬৮৪ জন। আর ভোট কেন্দ্র রয়েছে ৯৬ টি