ভালুকা প্রতিনিধি, (ময়মনসিংহ) ॥ ময়মনসিংহের ভালুকায় বিস্তির্ণ ফসলি জমি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লগোয়া ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে লাইসেন্সবিহিন ১৪/১৫ টি ইটভাটা। কোন নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রশাসনকে ম্যানেজ করে এসব ইট ভাটায় কয়লার পরিবর্তে দেদাড় পোড়ানো হচ্ছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল কেটে আনা লাকড়ী। ফলে মারাত্মক হুমকীর মুখে পড়েছে ফসলি জমি ও প্রাকৃতিক পরিবেশ। উজাড় হচ্ছে বনাঞ্চল।
ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ মতে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও উন্নয়নের স্বার্থে আধুনিক প্রযুক্তির ইটভাটা অর্থাৎ জিগজ্যাগ ক্লিন, হাইব্রিড হফম্যান ক্লিন, বার্টিক্যাল শফট ক্লিন, টানেল ক্লিন বা অনুরূপ উন্নততর কোনো প্রযুক্তির ইটভাটা স্থাপন করতে হবে। তাছাড়া আবাসিক, জনবসতি, সংরক্ষিত এলাকার বনভূমি ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবেনা এবং সরকারী বনাঞ্চলের সীমারেখা হতে দুই কিলোমিটার দুরত্বে স্থাপন করতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর হতে ছাড়পত্র, জেলা প্রশাসকের অনুমোদন বা লাইসেন্স না নিয়ে ইটভাটা চালু করা যাবেনা। আর এই আইন অমান্য করলে ১০ বছরের কারাদন্ড ও ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আইন অনুযায়ী ইটভাটা তদারকি করার জন্য জেলা প্রশাসকের নির্দেশে স্থানীয় বনবিভাগ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার বিধান থাকলেও তাদের রহস্যজনক নিরবতার কারণে ভালুকার অধিকাংশ ইটভাটা মালিকগণ এসব আইনের তোয়াক্কা না করে সংশ্লি¬¬ষ্টদের ম্যানেজ করে তাদের অবৈধ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আশপাশ এলাকার আবাদি জমির উর্বরতা হ্রাসসহ বিভিন্ন প্রজাতীয় ফলজ, বনজ গাছপালাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকীর সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার মেদিলা বাহির পাথর এলাকায় চারটি, ধলিয়া পলাশতলী তিনটি, উড়াহাটি এলাকায় দুইটি, খারুয়ালী, আশকা, মাহমুদপুর, পুরুড়া, শান্তিগজ্ঞ ও মেদুয়ারী গ্রামে একটি করে ইটভাটা রয়েছে। ধলিয়া পলাশতলী এলাকার তিনটি ইট ভাটায় একবারে একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সীমা ঘেষা। মেদিলা, মাহমুদপুর, উড়াহাটি, আশকা এলাকায় স্থাপিত ইটভাটাগুলো বিস্তির্ণ ফসলি এলাকায় অবস্থিত। ঘনবসতি এলাকায় অবস্থিত খারুয়ালী ও পুরুড়ার ইটভাটা।
এসব ইটভাটায় স্থানীয় বিভিন্ন গাছের কাঠ পুড়ানো হচ্ছে। ইটভাটার চারপাশে মজুদ করে রাখা হয়েছে শ শ মন লাকড়ি। চিমনী দিয়ে প্রচন্ড বেগে বের হচ্ছে কালো ও সাদা ধোয়া। আর সেই ধোয়ায় কোমলমতি শিশু সহ আশপাশের জনগণের শ্বাসকষ্টজনিত নানা রোগের জন্ম নিচ্ছে। অপরদিকে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, এসব ইটভাটার দু’একটি ছাড়া কোনটিরই হালনাগাদ লাইসেন্স নবায়ন বা পরিবেশের ছাড়পত্র নেই। অধিকাংশ ইটভাটায় শিশু ও নারী শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো হয়ে থাকে। এছাড়াও সঠিক মাপে ইট তৈরী করা হয়না। ইট তৈরীতে ৩ থেকে ৪ ধরণের ডাইস ব্যবহার করা হয়। ইটের সাইজ ছোট-বড় করে প্রতিনিয়তই ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করা হয়ে থাকে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ইটভাটা মালিক জানান, ভালুকার কোন ভাটারই লাইসেন্স নেই। কিভাবে চলে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, জেলা প্রশাসক ও বনবিভাগ থেকে শুরু করে প্রতিটি দপ্তর ম্যানেজ করেই ভাটা পরিচালনা করা হয়ে থাকে। আর এসব ম্যানেজ করে থাকেন উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি ও সেক্রেটারী।
ইটভাটা মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি আফজাল হোসেন মন্ডল জানান, সকল ইটভাটারই হালনাগাদ লাইসেন্স নেই, এটি সত্য, তবে সার্বিকদিক ম্যানেজ করেই বরাবর যেভাবে চালানো হয়, এ বছরও সেভাবেই ভাটাগুলো পারিচালিত হয়ে আসছে। একটি বিষয় পরিস্কার যে, সকল ভাটার মালিকগণই নিয়মিত ভ্যাট পরিশোধ করেন।
ভালুকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল বাকিউল বারী জানান, ইতোমধ্যে একটি ভাটায় অভিযান চালিয়ে জরিমানা আদায় করা করা হয়েছে। কোন কোন ভাটার পরিবেশের ছাড়পত্র নেই এবং ভাটা আইন অমান্য করে কার্যক্রম পরিচালনা করছে, খোঁজ নিয়ে অভিযানের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।