অন্তর্ধানের ৩২ বছর পর বাড়ি ফিরলেন বৃদ্ধ জোয়াদ!

প্রকাশিত: ৯:০৮ অপরাহ্ণ, মে ১৭, ২০২২

শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল থেকে :

স্বেচ্ছায় অন্তর্ধানের দীর্ঘ ৩২ বছর পর নিজ বাড়ি ফিরেছেন আশিউর্ধ্ব জোয়াদ মিয়া! ছোট ছোট তাঁর পাঁচ সন্তান আজ পরিণত বয়সে পৌঁছে গেছে। যুবতী স্ত্রী রেজিয়া খাতুনও এক বৃদ্ধা নারী। বদলে গেছে গ্রাম, রাস্তাঘাট ও পরিবেশ জোয়াদ মিয়ার চোখে। এই ঘটনাটি ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার গাংগাইল ইউনিয়নের নিভিয়াঘাটা গ্রামে।

 

সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, জোয়াদ মিয়া নিভিয়াঘাটা গ্রামের একজন স্বচ্ছল গৃহস্থ ছিলেন। তিনি ৩২ বছর আগে কিছু জমিজমা বিক্রি করে টাকা-পয়সা সাথে নিয়ে নাবালক পাঁচ সন্তান ও স্ত্রী রেখে স্বেচ্ছায় নিরুদ্দেশ হন। এই দীর্ঘ সময়ে তাঁর পরিবার পরিজন কোন খোঁজ-খবর না পেয়ে ধরে নিয়েছে তিনি আর বেঁেচ নেই। বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই বাড়ি আসতেন, নূন্যতম চিঠিপত্র সহ যে কোনভাবে পরিবারের সাথে যোগাযোগ রাখতেন। ফলে সন্তানরা তাদের জাতীয়পত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্রে পিতাকে মৃত জোয়াদ মিয়া হিসেবে লিখেছেন।

 

চলমান মে মাসের ৮ তারিখ জোয়াদ মিয়া ট্রেনে করে মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সিবাজার গ্রাম থেকে মো. আতাউর রহমান নামে এক ব্যক্তির সহায়তায় নান্দাইলের নিভিয়াঘাটা গ্রামের বাড়িতে এসে উপস্থিত হন। তাঁকে দেখে স্ত্রী, সন্তান সহ আশপাশের লোকজন অবাক। এ খবর ছড়িয়ে পড়ায় আত্মীয়-স্বজন সহ স্থানীয় লোকজন জোয়াদ মিয়াকে দেখতে বাড়িতে এসে ভিড় করছে।

 

জোয়াদ মিয়ার সাথে আসা মো. আতাউর রহমান এলাকাবাসীকে জানান, তিনি জোয়াদ মিয়ার মেয়ের জামাতা। জোয়াদ মিয়া কমলগঞ্জের মুন্সিবাজার গ্রামে বসবাস করার সময় সেখানে একটি কওমি মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করতেন। তারপর ঘরজামাই হিসেবে সেখানে তিনি একটি বিয়ে করেন। সেই সংসারে দুই ছেলে ও ছয় মেয়ের বাবা হন তিনি। ইতোমধ্যে ৪ মেয়ের বিয়েও হয়েছে।

অসুস্থ জোয়াদ মিয়া এখন কম কথা বলেন। তিনি জানান, তাঁর স্মৃতিভ্রম হয়ে পড়েছিলেন। আগের বিয়ে করেছেন কিনা একথা তাঁর মনে ছিল না। কিছুদিন আগে হঠাৎ নান্দাইল তাঁর বাড়ি স্ত্রী, সন্তানদের কথা মনে পড়ে। এ কথা সেখানে সবাইকে জানালে মেয়ের স্বামী তাঁকে নান্দাইলের বাড়িতে এসে পৌঁছে দিয়ে গেছে। তিনি এখন দুই সংসারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে সময় করে তাদের সাথে থাকতে চান।

 

সাক্ষাতকারে আরও কথা বলতে চাইলে তাঁর প্রথম পক্ষের সন্তান পোষাক শ্রমিক মো. লিটন মিয়া (৪০) বলেন, আমার বাবা যখন চলে গিয়ে ছিলেন, তখন আমার বয়স ছিল ৮ বছর। বাবাকে পেয়ে আমরা খুশি আছি। তিনি যেভাবেই হোক অসুস্থ অবস্থায় ফিরে এসেছেন। আমরা এ বিষয়টি নিয়ে বেশি মানসিক চাপ দিতে চাই না যাতে করে আবার তিনি স্মৃতিশক্তি হারিয়ে ফেলেন। বিষয়টি নিয়ে নানান জন অনেক রকম কথা চলছে। এতে আমরা বিভ্রান্ত হচ্ছি।

গ্রামের কয়েকজন বয়স্ক লোক জানান, আমরা তাঁকে দেখে চিনতে পেরেছি।