কেন্দুয়া (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি :
এরশাদ পাগলা। একজন প্রতিবন্ধী মানুষ। ৫ সদস্যের সংসার তাঁর। নিজের এক শতাংশ ভূমি নেই। থাকেন অন্যের বাড়িতে। শারীরিক অক্ষমতা কারণে কোন কাজ করতে পারেন না। গান গেয়ে জীবিকা নির্বাহ করেন তিনি। জীবনে শেষ প্রান্তে এসেও পারলেন একটু মাথাগোঁজা ঠাঁই করে নিতে। নিজ গ্রামের হাওড়ের পাশে একটি সরকারি মাঠের একাংশে মুজিব জন্মশতবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রী উপহারের ২৩ টি ঘর বরাদ্ধ দেয়া হয়েছে। ওইখানে তিনি দুই শতাংশ ভূমিসহ একটি ঘর পেয়েছেন। হটাৎ করে এই প্রকল্পের বিরোধীতা করেছেন বলাইশিমুল গ্রামের একাংশ মানুষ। শনিবার বিকালে সুবিধাভোগীদের মাঝে নির্মাণাধীন ঘরের নাম্বার সংবলিত কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন ইউএনও মাহমুদা বেগম। এসময় নিজের একটি ভিটাবাড়ি পেয়ে আবেগে আপ্লুত হন এরশাদ । একটি পক্ষ বিরোধীতা করায় শঙ্কাও প্রকাশ তিনি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাকে একটি ঘরসহ বাড়ি দেওয়ায় আজ আমার একটি ঠিকানা হয়েছে। অনেকেই আমাদের ঘর নির্মাণ নিয়ে বিরোধীতা করছেন। দয়া করে আমাদের ঘর নির্মাণকাজ নিয়ে বিরোধীতা করবেনা। এটা সবার কাছে অনুরোধ।
এরশাদ পাগলের মতো অন্যান্য উপকারভোগীরাও আন্দোলনকারীদের প্রতি একই দাবী রাখেন। সুত্র জানায়, কেন্দুয়া উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী উপহারের বরাদ্ধ পাওয়া ১৯৭ টি ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। তন্মধ্যে ২৩টি ঘরের কাজ হচ্ছে বলাইশিমুল গ্রামে। বলাইশিমুল গ্রামে যেখানে ২৩টি ঘরে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে সেটি একটি মাঠ ছিল। ১ একর ৮৭ শতাংশের মাঠটি চারদিক দখল করে কৃষি জমিতে রূপান্তরিত করছে পাশ্ববর্তী জমির মালিকগণ। মাঠের জায়গা দখলমুক্তকরণসহ দুই পাশে ৪৬ শতাংশ জায়গার ওপর আশ্রায়ন প্রকল্প গ্রহণ করে উপজেলা প্রশাসন। মাঠ দখলমুক্তকরণ ও প্রকল্প গ্রহণকালে কেউ বিরোধীতা না করলেও কাজ শুরুর সময় গ্রামের কিছু লোক বিরোধীতা
শুরু করছেন। তারা মাঠে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করলে পরদিন প্রশাসনের মাঠেই উপজেলা প্রশাসন তাদের সাথে সমঝোতার বৈঠক করে ঘর নির্মাণ শুরু করেন। সমঝোতার পরের দিন আবার জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ ৪ জনকে বিবাদী করে
আদালতে মামলা দায়ের করেন তারা। সেই মামলাটি খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। এরই মাঝে রাতের আধাঁরে ৩টি ঘরের স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলায় প্রশাসন ১৯ জনের বিরুদ্ধে দ্রুতবিচার আইনে মামলা দায়ের করেন। পরে মাঠের একাংশে আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ ও মাঠ সংস্কার নিয়ে প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ফের বৈঠক হয়।
ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- নেত্রকোনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. মনির হোসেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, মাঠে খেলাধুলাও চলবে এবং একাংশে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণও হবে। এরই প্রেক্ষিতে রোববার বিকালে আশ্রয়ণ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে ২৩ ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের হাতে ঘরের নাম্বার সংবলিত কাগজপত্র বুঝিয়ে দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে আরো জানায়, ওই মাঠটিতে এক সময়ে ফুটবল খেলা হতো। মাঠের আশেপাশে কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। ওই গ্রামসহ ইউনিয়নের অন্যান্য গ্রামে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বড় মাঠ হওয়ায় এখন আর এ মাঠে তেমন খেলাধুলা হয় না। বর্তমানে মাঠটি গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে মাঠে জায়গা বেদখল হয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন মৌসুমে কৃষকরা ওই মাঠে ধান-ন্যাড়া শুকিয়ে থাকেন।
ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের
সভাপতি ও বলাইশিমুল গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান,এক সময় এই মাঠে ভালই খেলাধুলা হতো। এলাকায় আরো উপযুক্ত মাঠ থাকায় বর্তমানে এই মাঠে আগের জৌলুশ নেই। খেলাধুলাও তেমন হয় না। মাঠে এখন মৌসুমে ধান-খড় শোকানোসহ গরু চড়ানো হয়। নিজেদের সুবিধার্থে গ্রামের একটি অংশের লোকজন মাঠ রক্ষার দাবি তুলে মানববন্ধন ও আদালতে মামলা করেছিল। আমরা চাই প্রধানমন্ত্রী মহতী উদ্যোগও বাস্তবায়ন হোক,দখলমুক্ত করে মাঠটিও সংস্কার হোক।
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ফজলুর রহমান জানান,
মাঠের জন্য রয়েছে এক একর ৪১ শতাংশ ভূমি রেখেই ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। যাদের জন্য ঘর নির্মাণ হচ্ছে তারাও আমাদের সমাজের মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদা বেগম জানান, এই প্রকল্পের আওতায় উপজেলায় ১৯৭ টি ঘরের নির্মাণকাজ চলছে। তন্মধ্যে বলাইশিমুল গ্রামে ২৩ পরিবারের ২৩টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। এখানে
পানীয় জলের সুবিধার জন্য ৪টি সাব মারজিবল স্থাপন করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রতি ঘরেই আলাদা আলাদা বিদ্যুতের মিটার থাকছে। মাঠের জায়গা দখলমুক্ত করা হয়েছে। খেলাধুলার উপযুক্ত ভূমি রেখেই প্রধানমন্ত্রী বিষেশ উদ্যোগ ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণকাজের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। মাঠ দখলমুক্তকরণ ও প্রকল্প গ্রহণকালে কেউ বিরোধীতা করেনি। তারা না বুঝে কাজ শুরুর সময় কিছু লোক বিরোধীতা শুরু করছেন। মাঠ সংস্কার ও আশ্রয়ণ প্রকল্পে যাতায়াতের জন্য একটি রাস্তা সংস্কারের মাধ্যমে পাকা করা হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম জানান, এলাকাবাসীর সুবিধার্থে মাঠের জন্য ১৪ কাটা ( এক একর ৪১ শতাংশ) জায়গা রেখে গরিব অসহায় মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরে নির্মাণ করা হচ্ছে। মাঠের জন্য যে জায়গা রাখা হয়েছে এত বড় মাঠের জায়গা কেন্দুয়ায় দ্বিতীয়টি নেই। সমঝোতায় এসেও তারা কোন স্বার্থে বিরোধীতা করছে বুঝতেছি না। এখানে আশ্রায়ন প্রকল্পটি হওয়ায় মাঠসহ এলাকার অবকাঠামো উন্নয়ন হচ্ছে বলে জানান তিনি।