কলিহাসান, দুর্গাপুর (নেত্রকোণা) প্রতিনিধি:
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বর্ষণের প্রভাবে সোমেশ্বরী নদীর পানি উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নেয়ার সময় গিয়াস উদ্দিন(৫৫) নামের এক ব্যক্তি মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তি চন্ডিগর ইউনিয়নের চারিকেল গ্রামের। তিনি সকালে দুই ভাই একসাথে প্রতিবেশীর বাড়িতে কোমর পানি ভেঙে নিরাপদ আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিল। পরে প্রচন্ড ঠান্ডায় তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান। শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন ঘুরে এমন ভাঙন দৃশ্য দেখা গেছে।
প্রতি ঘণ্টায় সোমেশ্বরী নদীর পানি দেড় সেন্টিমিটার করে পানি বাড়ছে। এটি অব্যাহত থাকলে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে সোমেশ্বরী ও নেতাই নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করে আরো কঠিন অবস্থার তৈরী হতে পারে। বর্তমানে সোমেশ্বরী নদীর পানি বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চর ও নিম্নাঞ্চল এবং ঘর-বাড়ি বন্যার পানিতে প্লাবিত হচ্ছে। তলিয়ে যাচ্ছে আবাদি জমির ফসল। পাশাপাশি ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি, আবাদি জমি,শস্য ফসলি জমি, বীজতলা সহ বিভিন্ন স্থাপনা। বন্যার পানি বৃদ্ধি পেতে থাকায় আতঙ্কে ভুগছে চরাঞ্চলের মানুষ সহ উপজেলার প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ।
উপজেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক দিশা আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৭টা থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ১২টা পর্যন্ত ১৭ ঘণ্টায় সোমেশ্বরী নদীর পানি ১৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে শহর রক্ষা বাঁধের বিভিন্ন পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেভাবে পানি বাড়ছে তাতে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে বিপৎসীমা আরো অতিক্রম করার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে নদীতীরবর্তী আশ পাশ এলাকায় বন্যায় পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে স্থানীয় লোকজন।
কাকৈরগড়া ইউনিয়নের কৃষ্ণেরচর গ্রামের আব্দুল হান্নান জানান, বন্যার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় কৃষ্ণেরচর এলাকায় প্রায় শতাধিক পরিবারে রান্না নেই। ঘাঠের উপর বসে আছে। একটি নৌকার জন্য ঘর থেকে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাধী সরানোও যাচ্ছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও)মোহাম্মদ রাজীব উল আহসান ইতিমধ্যে নদীভাঙন এলাকা পরিদর্শন করে ভাঙল কবলিত এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধকল্পে ব্যবস্থা নিচ্ছেন। হঠাৎ করে সোমেশ্বরী নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় পৌর সদর সহ সবক’টি ইউনিয়নের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। বানভাসীদের মাঝে খাদ্য ও গোখাদ্য বিতরণ করা হবে।
নেত্রকোণা জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডে নির্বাহী প্রকৌশলী মোহল লাল সৈকত জানান, নদীতে পানি বৃদ্ধির ফলে দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর সদর, কাকৈরগড়া, গাঁওকান্দিয়া,বাকলজোড়া,বিরিশিরি,চন্ডিগর সহ পৌর সদরের বাজারের সবক’টি গলিতে হাঁটুর উপরে পানি চলমান রয়েছে। দুর্গাপুর সদর ইউনিয়নের ফারংপাড়া এলাকার নদীতীরবর্তী ভাঙন দেখা দিয়েছে। ওইসব এলাকায় ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।