ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
মধ্যরাতে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে হাড়–ড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়েছে এক যুবককে। মৃত্যুর আগে সোহাগ মিয়া (২৭) নামে ওই যুবক নিজেই তার হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের নাম বলে যান। স্থানীয়রা জানিয়েছেন বেপরোয়া কিশোর গ্যাংয়ের হাতে খুন হয়েছে ওই যুবক। রোববার ময়মনসিংহের ত্রিশালের বালিপাড়া ইউনিয়নের ধলা বাজারে ঘটেছে ওই ঘটনা।
পুলিশ ও স্থানীয় এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকার ধলা গ্রাম। বালিপাড়া ইউনিয়নের ওই ধলা গ্রামটি কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ট স্থানীয়রা। প্রভাবশালী রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা ওদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পাননা। ছয়মাস আগে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য পলকে মারধর করে ধলা বাজারের বাসিন্দা স্থানীয় শহীদ মিয়ার ছেলে সোহাগ মিয়া।
এ ঘটনায় পল থানায় কোন অভিযোগ না করলেও নিজের ভিতর ক্ষোভ পুষে রাখে পল। পলকে মারধরের পর ওই গ্যাংয়ের ভয়ে সোহাগ বাড়ি ছেড়ে গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর, জয়দেবপুর এলাকায় অবস্থান করে জীবিকা নির্বাহে কাজ করতো। ভীতি কাটিয়ে একমাস আগে নিজ এলাকায় ফিরে সোহাগ। প্রস্তুতি নেয় ব্যবসার।
এলাকায় আসার পর থেকেই পূর্বের ক্ষোভ ঝাড়তে পল সহ তার সহযোগি স্থানীয় আবদুর রহমান বিশ্বাস, রায়হান, জুনায়েদ ওরফে শান্ত ও সাব্বির তাকে টার্গেডে রাখে। অপেক্ষা ছিল শুধু সুযোগের। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী রোববার রাতে তার বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় পল এবং আবদুর রহমান বিশ্বাসের নেতৃত্বে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। পরে ধলা বাজারের মন্দিরের পেছনে নিয়ে গিয়ে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হাত পা ভেঙ্গে দিয়ে পেটে ছুড়িকাঘাত করে। পরে তার পরিবারের সদস্যরা সোহাগকে উদ্ধার করলে গেলে সোহাগকে ফেলে পালিয়ে যায় ওরা। গুরুতর আহত অবস্থায় রাতেই সোহাগকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে তার মৃত্যু হয়। তবে মৃত্যুর আগে সে তার উপর হামলাকারীদের নাম বলে যায়। পরিবারের সদস্যদের কাছে থেকে ওই ভিডিও সংগ্রহ করেছে ত্রিশাল থানা পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে নিহত সোহাগের মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে পুলিশ। সোমবার রাত আটটার দিকে নিজ বাড়িতে তার দাফন সম্পন্ন হয়। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি।
স্থানীয়রা জানান, ধলা গ্রামটি ত্রিশাল, গফরগাও ও নান্দাইল এই উপজেলার সীমান্তবর্তী এলাকা ঘেষা। এখানে উঠতি বয়সের কিশোরদের নানাকান্ডে অতিষ্ট এলাকাবাসী। এমন কোনদিন নেই যে, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে তারা মারামারি, গন্ডগোল, ঝগড়া বিবাদ না করছে। এনিয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে সে হামলার শিকার হন। স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা তাদেরকে শেল্টার দেয় বলে ওদের কোন বিচার হয়না।
নিহত সোহাগের স্ত্রী মুন বলেন, এই নির্মম হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতার ও তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মাইন উদ্দিন জানান, পূর্ব শত্রুতার জেরেই ওই ঘটনা ঘটেছে বলে আমরা প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি। এখনো মামলা করেনি নিহতের স্বজনরা। হয়তো তার দাফনকার্য সম্পন্ন করে মামলা করবে। তবে জড়িতদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান চলছে।
মৃত্যুর আগে সোহাগের দেয়া বক্তব্যের ওই ভিডিওটি হাতে পাওয়া গেছে। ওই ভিডিওতে সোহাগ বলেন, বিশ্বাস, রায়হান ও পল আমার উপর হামলা করেছে। তদেরমধ্যে বিশ্বাস আমাকে বেশি মারধর করেছে।