শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল থেকে:
ময়মনসিংহের নান্দাইলে সরিষার হলুদ ফুলে সজ্জিত বিস্তির্ণ মাঠ। যেদিকে চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। ক্ষেতের পর ক্ষেতে সরিষা ফুলের এমনই নয়নাভিরাম দৃশ্য। দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। মন চায় সেই হলুদের মাঝে হারিয়ে যেতে। প্রকৃতি যেন নতুন রূপে হলদে শাড়ি পরে আছে।
সরিষার ক্ষেতে ছবি তুলতে দলবেঁধে ছুটে আসছে স্কুলের ছাত্র, তরুন, শিশু এমনকি
বয়স্করাও। নিজেদের পছন্দমত ছবি তুলছে মোবাইলে। কেউ কেউ তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করছে।
পৌষের সকালের মিষ্টি রোদে ঝলমল করা সরিষা ফুলের অবারিত সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। গাঢ হলুদে সোনালি রোদ মিলেমিশে এ এক অনিন্দ্য সৌন্দর্য। চোখ জুড়ানো হলুদের মেলা প্রকৃতিকে সাজিয়েছে অপরূপ সাজে। মাঠের পর মাঠ যেন শুধু সর্ষে ফুলের হলুদ হাঁসিতে রাঙিয়ে দিয়েছে পুরো উপজেলাকে।
উপজেলার যে কোনো এলাকায় প্রবেশ করলেই চোখে পড়বে সরিষার হলুদ ফুলের সীমাহীন বাগান। চির সবুজের বুকে এ যেনো কাঁচা হলুদের আলপনা। দুর থেকে ভেসে আসছে সরিষা ফুলের মৌ মৌ গন্ধ। মধু সংগ্রহে ফুলে ফুলে ঘুরে বেড়াচ্ছে মৌ মাছির দল।তাদের গুনগুন সুরে বিমোহিত চারদিক।
মাঠ জুড়ে সরিষা ফুলের অপরুপ সৌন্দর্যে কৃষকের চোখে মুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের হাঁসি। প্রতিটি সরিষার ফুলে দুলছে কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। হলুদের মাঠে কৃষকের স্বপ্ন খেলা করছে এখন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় সরিষার চাষে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষকরা। কৃষকের চোখে এখন লাভের হাতছানি।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর কৃষি বিভাগের উদ্যোগে সরিষা চাষে কৃষকরা দারুণ অনুপ্রাণিত হয়েছেন। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৬৭ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ।এ পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি অর্জিত হয়ে ১৮০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ হয়েছে।
বারি সরিষা ১৪. বারি সরিষা ১৭, বিনা সরিষা ৯ এবং টরি-৭ জাতের সরিষা আবাদ করা হয়েছে। হেক্টরপ্রতি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১ দশমিক ২৫ মেট্রিকটন। ফলে এ বছর উপজেলায় সরিষার চাষ বেড়েছে।
চলতি রবিশস্য মৌসুমে আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সরিষা ক্ষেতে রোগবালাই কম হওয়ায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমাতে আগামীতে আরও সরিষার আবাদ বৃদ্ধির চিন্তা-ভাবনা করছে উপজেলা কৃষি অফিস।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন সরিষাক্ষেত ঘুরে দেখা যায়,হলুদ ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। দিগন্ত জুড়ে শুধু হলুদের সমারোহ। মাঠের পর মাঠ যেন হলুদের গালিচা।সরিষার ফুলে ফুলে মৌঁমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌঁমাছির গুনগুনানিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে সরিষার মাঠ।
উপজেলার বীরকামট খালী গ্রামের বাপ্পী পল্লী চিকিৎসক মো.গোলাম মোস্তফা, এডভোকেট মতিউর রহমান তার কয়েক বন্ধুদের নিয়ে বীরকামট খালী গ্রামের মাহতাবের সরিষার ক্ষেতে ছবি তুলতে এসেছেন।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আতিকুর রহমান তার দুই ছেলেকে নিয়ে সরিষা ক্ষেতে ছবি তুলছেন। আতিকুর রহমান বলেন,সরিষা ফুলের অপরুপ দৃশ্য দেখার জন্য দুই ছেলেকে নিয়ে এসেছি, ছবি তুলেছে। অনেক ভালো লেগেছে।
উপজেলার বীরকামট খালী গ্রামের কৃষক মাহতাব উদ্দিন বলেন,আমন ধান কাটার পর কৃষি অফিসের পরামর্শে ৩০ শতক(৩ কাঠা)জমিতে সরিষার আবাদ করেছি। সরিষা ভালো হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
একই গ্রামের কৃষক মুনজুল বলেন,আমি ৪কাঠা (৪০ শতক) জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষা চাষ করছি। এ জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। ফুলে ফুলে ক্ষেত ভরে গেছে। ভালো ফলনের আশা করছি।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো.আজিজুর রহমান বলেন,এবছর উপজেলায় সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে।ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে মাঠ।কৃষি অফিসের সার্বিক নির্দেশনায় কৃষক যেন সরিষার ভালো ফলন পায় সেইজন্য আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করছি। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান বলেন, ভোজ্য তেলের আমদানি কমাতে সরকার একটি মহাপরিকল্পনা নিয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই নান্দাইলে সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২ হাজার প্রান্তিক পর্যায়ের কৃষককে সরিষার বীজ ও সার প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। ভালো ফলনের লক্ষে কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে।