ফুলপুর সংবাদদাতা : গত এক দশকে মাতৃমৃত্যু ও শিশু মৃত্যু রোধে সরকারের ব্যাপক সফলতা আছে। তার পরও আমাদের দেশে এখনো মা ও নবজাতকের মৃত্যুর হার অনেক বেশী। এর অন্যতম কারণ বাড়ীতে ডেলিভারী করা। এ দেশে এখনো প্রায় ৫০ ভাগ মা বাড়ীতে ঝুঁকিপূর্ন ডেলিভারী করে, যা মাতৃমৃত্যুর প্রধান কারণ । এমতবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারীই পারে মাতৃ ও শিশু মৃত্যু রোধ করতে। এর জন্য প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন।
পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ ইউএসএইড-মামনি এমএনসিএসপি প্রকল্পের সার্বিক কারিগরি সহায়তায় স্থানীয় সরকারের মাধ্যমে অবকাঠামোগত সংস্কার, জন সচেতনতা বৃদ্ধি ও সার্বিক প্রচারনার মাধ্যমে ইতোমধ্যে ফুলপুর উপজেলার ১টি সেবাকেন্দ্রে (বওলা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্র) ২৪ ঘন্টা (২৪/৭) নরমাল ডেলিভারি সহ গর্ভবতী মায়েদের সেবা, শিশু সেবা ও সাধারন সেবা ও বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু হয়। এর ফলে প্রত্যন্ত এই অঞ্চলটিতে মা ও নবজাতক সেবা কার্যক্রম ব্যাপক সাড়া ফেলে যা মা ও নবজাতকের মৃত্যু রোধে ভূমিকা রাখছে। স্থানীয় সরকার এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ এই কার্যক্রমকে গতিশীল রাখার লক্ষ্যে নিয়মিত মনিটরিং, সরকারী ঔষধ সরবরাহ নিশ্চিত করে। বর্তমানে উক্ত সেবাকেন্দ্রটিতে প্রতি মাসে গড়ে ১৮ থেকে ২০ টি ডেলিভারী সম্পন্ন হচ্ছে।
এই সফলতাকে সামনে রেখে ফুলপুর উপজেলার উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ ও স্থানীয় জনগণের সার্বিক অংশগ্রহণ ও পরিকল্পনায় এবং জেলা পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক ও সিভিল সার্জন এর পরামর্শে ইউএসএইড-মামনি এমএনসিএসপি প্রকল্পের সার্বিক সহায়তায় স্থানীয় সরকারকে সাথে নিয়ে বওলা ইউনিয়নকে শতভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী সেবার আওতায়এনে হোম ডেলিভারীমুক্ত ইউনিয়ন ঘোষনার উদ্দ্যোগ গ্রহন করেছেন।
জনগণের অংশগ্রহনের মাধ্যমে ফুলপুর উপজেলার বওলা ইউনিয়নকে শতভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারির আওতায় আনায়ন মাসব্যাপী সমস্ত ইউনিয়নে ক্যাম্পেইন, সচেতনতা মূলক কার্যক্রম, গর্ভবতী মায়েদের তালিকা তৈরী ও সকল প্রাপ্ত বয়স্ক নারী পুরুষের অঙ্গীকার নামায় স্বাক্ষর গ্রহণ করা। জন সমাবেশের মাধ্যমে অঙ্গীকারনামা পাঠ ও শতভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারীর আওতাধীন উপজেলা হিসাবে ঘোষনা প্রদান। ইউনিয়নের প্রবেশ মুখে “শতভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী আওতাধীন ইউনিয়ন ” লিখা সম্বলিত তোরণ নির্মান করা। ইউনিয়নের প্রতিটি ওয়ার্ডে, হাটবাজার ও গুরুত্বপূর্ন স্থানে প্রতিষ্ঠানিক ডেলিভারী বিষয়ক সাইনবোর্ড স্থাপন করে জনগণের অংশগ্রহণে সামাজিক এই আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে তুলে ধরা।
বছরব্যাপী স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভোগের মাধ্যমে মনিটরিং করা ও বছর শেষে মূল্যায়ন করা এবং জাতীয় পর্যায়ে শতভাগ প্রাতিষ্ঠানিক ডেলিভারী মুভমেন্ট কার্যক্রমকে তুলে ধরা। আলোচোনা সভার প্রতিবেদন ৩১ জানুয়ারি ইউএসএআইডির মা-মনি এমএনসিএস প্রকল্পের সহায়তায় শতভাগ প্রাতিষ্টানিক ডেলিভারী নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ৩১ জানুযারি ময়মনসিংহ জেলার ফুলপুর উপজেলা পরিষদ হল রুমে এক আলোচনা সভা অনুষ্টিত হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাজ্জাদুল হাসান এরসভাপতিত্বে অনুষ্টিত উক্ত সভায় প্রধান অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোহম্মদ আবদুল আওয়াল, বিভাগীয় পরিচালক, পরিবার পরিকল্পনা, ময়মনসিংহ বিভাগ।
এ ছাড়া বিশেষ অতিথী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন মোঃ নজরুল ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক কাজী মাহফুজুল করিম, উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ আতাউল করিম, সহকারী পরিচালক স্বাস্থ্য ডাঃ ইসরাত জাহান, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্ত ডাঃ মোহাম্মদ হুমায়ূন কবীর।
উক্ত সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন মেডিকেল অফিসার এমসিএইচএফপি, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা, উপজেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। অংশগ্রহনকারী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সকল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও সচিবগন, স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ইউনিয়ন পর্যায়ে সকল সুপারভাইজারগন,এনজিও প্রতিনিধি,ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ। সভায় উপস্থিত অতিথী ও অংশগ্রহনকারীগন আলোচনায় অংশ গ্রহন করে ফুলপুর উপজেলায় শতভাগ প্রাতিষ্টানিক ডেলিভারীর এই উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং বওলা ইউনিয়নে মামনি এমএনসিএস প্রকল্পের কাজের প্রসংশা করেন। আলোচনায়অংশগ্রহন করে ময়মনসিংহ জেলার সিভিল সার্জন ও উপপরিচালক ,পরিবার পরিকল্পনা গর্ভবতী মায়েদের পরিবহনের ক্ষেত্রে এম্বুলেন্স ভাড়া ফ্রি করে দেওয়ার ঘোষনা দেন যাতে শতভাগ প্রাতিষ্টানিক প্রসব নিশ্চিত হয়। আলোচনায় অংশগ্রহন করে সভার প্রধান মোহম্মদ আবদুল আওয়াল বওলা ইউনিয়নকে” জিরো হোম ডেলিভারী ইউনিয়ন হিসেবে ঘোষনা করেন এবং পর্যায়ক্রমে সকল ইউনিয়নকে জিরো হোম ডেলিভারী চালুর পরামর্শ দেন যাতে উক্ত উপজেলায় শতভাগ প্রাতিষ্টানিক প্রসব সেবা নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলায় শতভাগ প্রাতিষ্টানিক প্রসব সেবা নিশ্চিত করার জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগীতা করার প্রতিশ্রুতি দেন।