সাইফুল ইসলাম তালুকদার, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) :
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে এই প্রথম চাষ হয়েছে ভ্যালেন্টিনা ও ক্যারোটিনা জাতের নীল হলুদ রঙের ফুলকপি। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের আওতায় উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নে এই রঙিন ফুলকপির চাষ হয়েছে। নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের শুরুতেই ফলন ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। স্বাদ ও পুষ্টিগুণে ভরপুর এই রঙ্গিন ফুলকপি চাষ করে কৃষক মোজাম্মেল এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছেন। আগামী মৌসুমে চাষ এর পরিমাণ বৃদ্ধি করে ভাগ্য বদলের আশা করছেন তিনি।
সরেজমিন উপজেলার বড়হিত গ্রামে গিয়ে দেখা যায় কৃষক মোজাম্মেল তার ২০ শতক জমিতে ভ্যালেন্টিনা জাতের নীল ও ক্যারোটিনা জাতের হলুদ রঙের ফুলকপি চাষ করেছেন।
চারদিকে সবুজ বোর ফসলের ভিড়ে ২০ শতক জমির নীল হলুদ রঙের ফুলকপির আবাদ দৃষ্টি কাড়ছে মানুষের। প্রতিদিন দৃষ্টিনন্দন রঙ্গিন ফুলকপির আবাদ দেখতে ও ফুলকপি কিনে নিতে অনেক মানুষ যাচ্ছেন কৃষক মোজাম্মেলের ক্ষেতে।
কৃষক মোজাম্মেল জানান, উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের পরামর্শে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই হাজার চারা কিনে এনে রোপণ করেন তিনি। তারপর উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আখছার খানের সার্বিক সহযোগিতায় জমিতে নিজের উৎপাদিত ভার্মি কম্পোস্ট জৈব সার ব্যবহার করে রঙিন ফুলকপির বাম্পার ফলন পেয়েছেন তিনি। এই কপি খেতে খুব সুস্বাদু। বিষমুক্ত হওয়ায় সাধারণ ক্রেতা ও পাইকাররা ক্ষেত থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।
কৃষক মোজাম্মেল আরো জানান, খুচরা এক একটি ফুলকপি ৭০ টাকা এবং পাইকারি প্রতিটি ৬০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। পাইকারি ৬০ টাকা দরে ২হাজার কপি ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বিক্রি করতে পারবেন বলে আশা করছেন তিনি। জমি প্রস্তুত, চারা ক্রয়, সার ও সেচ বাবদ তার ব্যয় হয়েছে ২২ হাজার টাকা। ব্যয় বাদে চলতি শীত মৌসুমে রঙ্গিন ফুলকপিতে তাঁর লাভ হবে ৯৮ হাজার টাকা। মোজাম্মেলের ফুলকপির চাষ দেখে অনেকেই আবাদ করার আগ্রহ পোষণ করেছেন বলে জানান উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আলী আখছার খান।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান জানান, রঙ্গিন ফুলকপি খুবই সুস্বাদু ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ। রঙ্গিন ফুলকপিতে রয়েছে সালফোরাফেন। যা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষ ধ্বংস করে। মহিলাদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, হজমশক্তি বাড়ায়। ফুলকপিতে প্রচুর আয়রন রয়েছে যা শরীরে রক্ত তৈরিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। কৃষক মোজাম্মেল একজন সৌখিন কৃষক। তাই তাঁকে রঙ্গিন ফুলকপির প্রকল্পটি দেয়া হয়েছে। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন করে তিনি লাভবান হয়েছেন। আগামীতে তিনি ৪০ শতক জমিতে রঙ্গিন ফুলকপি চাষের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। মোজাম্মেলের মত যারা শাক-সবজি চাষে এগিয়ে আসবে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সকলকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করা হবে। রঙিন ফুলকপির নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্পের সাফল্য দেখতে গত ১৯ জানুয়ারি বড়হিত গ্রামে আসেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সুষমা সুলতানা, ময়মনসিংহ জেলার উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মতিউজ্জামান, বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিকরণ প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান।