স্টাফ রিপোর্টার : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক আসামী মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকির’কে গ্রেপ্তার করেছে ময়মনসিংহ র্যাব-১৪।
৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে র্যাব-১৪ একটি দল ময়মনসিংহ শহরের ভাটিকাশর এলাকা তাকে গ্রেফতার করে। পিতা- ময়মনসিংহ ত্রিশাল উপজেলার বিয়ারতা গ্রামের মৃত আসমত আলী ফকিরের পুত্র মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকির।
ব্যাব জানায়, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযোদ্ধা সময় ময়মনসিংহের ত্রিশালের কাকচর গ্রামের ইউনুছ আলী নামক একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা নদী পারাপারে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধাদের সাহায্য করতেন। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা জুন-জুলাইয়ের দিকে ময়মনসিংহের ত্রিশালের আহমেদাবাদে একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। মুক্তিযোদ্ধাদের নদী পারাপারে সহযোগিতার কারণে রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা বীর মুক্তিযুদ্ধা ইউনুছ আলীকে রাজাকারদের ক্যাম্পে ধরে নিয়ে যায় এবং রাজাকার ক্যাম্পের টর্চার সেলে নির্যাতনের পর ১৫ আগস্ট সকালে তাকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।
উক্ত ঘটনায় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ইউনুস আলীর ছেলে ২০১৫ সালের ২৮ ডিসেম্বর ময়মনসিংহের বিচারিক আদালতে মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত বিচারিক কার্যক্রমের জন্য মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রেরণ করেন। এরই প্রেক্ষিতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা নং-০৭/২০১৮ রুজু হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, আটক, নির্যাতন ও লুটপাটসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়।
পরবর্তীতে ২০১৭ সালে বর্ণিত অভিযোগের তদন্ত শেষে তদন্ত সংস্থা মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৯ জনকে অভিযুক্ত করে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার অভিযুক্ত তিনজন আসামী রায়ের পূর্বে স্বাভাবিক মত্যুবরণ করে এবং গত ২৩ জানুয়ারি/২০২৩ তারিখে মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকিরসহ ৬ জনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ প্রদান করেন। ২২/০৮/১৯৭১ইং তারিখে ত্রিশালের কানিহারি গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ হামনকে হত্যার দায়ে অন্যান্য আসামীদের সাথে উক্ত আসামীকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয়।
এছাড়াও ২৩/০৮/১৯৭১ ইং তারিখে বিয়ারতা গ্রামের নিয়ামত আলী (বর্তমানে মৃত), আজিজুর রহমান, আব্দুল মতিন’ কে রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতনের দায়ে ০৭ বছরের কারাদন্ড এবং ১০/১১/১৯৭১ ইং তারিখে কুষ্টিয়া গ্রামের প্রথমখন্ড ও কালী বাজার এলাকায় ৪ সংখ্যালঘু পরিবারের উপর ধর্ষণ ও অমানবিক নির্যাতনে সরাসরি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের দায়ে মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকিরকে পৃথক পৃথকভাবে আরো ১৪ বছরের কারাদন্ড দেওয়া হয়। বর্ণিত মানবতাবিরোধী অপরাধে দন্ডিত পলাতক আসামিকে গ্রেফতারে র্যাব-১৪ ময়মনসিংহ গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টার দিকে র্যাব-১৪ এর একটি চৌকস আভিযানিক দল ময়মনসিংহ শহরের ভাটিকাশর এলাকা হতে ১। মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকির (৭০)কে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকির ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রাজাকার বাহিনীতে যোগ দেয় এবং পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর দোসর হিসেবে তাদের বিভিন্ন কাজে প্রত্যক্ষভাবে সহযোগিতা করে। সে ১৯৭১ সালে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী কর্তৃক ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্থানীয় রাজাকার বাহিনী গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকির মহান মু্ক্িতযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের বিপক্ষে সরাসরি অবস্থান নিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল এলাকায় স্বাধীনতাকামী নিরীহ বাঙ্গালিদের আটক, নির্যাতন, অপহরণ, হত্যা, লুটপাট, ঘরবাড়ি লুন্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও গণহত্যার সাথে জড়িত থেকে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে জানা যায়।
গ্রেফতারকৃত মোঃ সুলতান মাহমুদ ফকির ২০১৫ সালে মামলার তদন্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই পলাতক ছিল। পরবর্তীতে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি হলে সে আত্মগোপনে চলে যায়। এ সময় সে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে নিজ এলাকা ত্যাগ করে ময়মনসিংহ সহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপন করে ছিল। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার এড়াতে সে নিয়মিত অবস্থান পরিবর্তন করতো এবং কোনো মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো না। সে এবং তার ছেলে-মেয়েরা আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হওয়ায় প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য তারা নিয়মিত তাকে অর্থ প্রদান করত। আত্মগোপনে থাকাকালে সে সাধারণত জনসমাগম স্থান, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান ছাড়াও তার ব্যক্তিগত পরিচয় প্রকাশ পায় এমন স্থান এড়িয়ে চলত। গ্রেফতারকৃত আসামীর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন।