গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়ক বেহাল!

প্রকাশিত: ৯:৪৩ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২৩

গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা সদরের সঙ্গে জেলা সদরের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়ক। সড়কটি বেহালদশার কারণে পাশ্ববর্তী কেন্দুয়া উপজেলা ও নেত্রকোণা উপজেলার একাংশের জনগণও দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। মাত্র চার কিলোমিটার সড়কের শিক্ষা, সুচিকিৎসা, কৃষি আর ব্যবসা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এলাকাবাসী।


এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব জানান, গৌরীপুর-কলতাপাড়া সড়কের টেন্ডার হয়ে গেছে। ইতোমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোও টেন্ডার ড্রপিং করেছেন। এখন শুধুমাত্র ঠিকাদার বাছাই হলেও দ্রুত কার্যাদেশ দিয়ে মেরামত কাজ শুরু করা হবে।
উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ জানায়, ২০২০সনে মেসার্স ইসতিয়াজ আহমেদ সড়কটির সংস্কার ও মেরামত কাজ করে ৩হাজার ৮৩০মিটার রাস্তা সংস্কার ও মেরামতে ৩ কোটি ২০ লাখ ১৫ হাজার ৪৩৬ টাকা ব্যয় হয়। সংস্কারকালীন সময়ে নিম্নমানের ইটের সুরকী, পাথর-বিটুমিন ব্যবহার ও কাপের্টিং ছাড়াই কাজ করাসহ একাধিক অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে দৈনিক যুগান্তরসহ একাধিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়। মেরামতের সময় পুরাতন কার্পেটিং এর উপর করা হয়েছে মেকাডমের কাজ। মেকাডমে ১নং ইটের খোয়া ব্যবহার করার বিধান থাকলেও ব্যবহৃত হয়েছে ২নং ও ৩নং ইটের কোয়ার সাথে ইটভাটার রাবিস। অত্যন্ত নিন্মমানের সুরকী ব্যবহার করার কারণে রোলার দেয়ার পর এসব সুরকী পাউডারে পরিণত হয়। বাতাসের সঙ্গে উড়ে রাবিশের পাউডার। প্রকল্প এলাকায় প্রকল্পের তথ্য সংবলিত প্রোফাইল প্রজেক্ট সাইনবোর্ড লাগানোর বিধান থাকলেও নির্মাণ কাজ শেষ হলেও তা টাঙানো হয়নি। তদারকিতে নিয়োজিত স্থানীয় প্রকৌশল বিভাগকে ম্যানেজ করেই নির্মাণ ও মেরামত কাজে এ অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, রাস্তাটি নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার পরে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আরও একবছর রাস্তাটির তদারকির দায়িত্বে থাকেন। এ সময় সিকিউরিটির অর্থ জামানত থাকে প্রকৌশল অধিদপ্তরে। কলতাপাড়ার আবুল হাসিম এ প্রসঙ্গে বলেন, রাস্তাটি মেরামতের মাত্র দু’বছরও যায়নি, ভেঙে তছনছ হয়ে গেছে। একই এলাকার মোজাম্মেল হক জানান, গতবছরও কিছু সুরকী, পাথর ও বিটুমিন দিয়ে গর্তগুলো মেরামত করতে দেখা গেছে। মেরামতের নামে তখন লুটপাট হয়েছে।
এদিকে কলতাপাড়া ডেল্টা মিলস্ ও তাল্লু স্পিনিং মিলের মধ্যকার সড়কে দু’দিকে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টিতে পুরো সড়কটি জলাশয়ে পরিণত হয়। কলতাপাড়া মোড় থেকে একটু সামনে এগুলো ভাঙা সড়ক তখন যাত্রীদের মহাবিপদে পরিণত হয়। তাঁতকুড়া গ্রামের জয়নাল আবেদিন জানান, প্রতিদিন গর্তে যানবাহন আটকে দুর্ঘটনা শিকার হচ্ছেন যাত্রীরা। প্রতিদিন কমপক্ষে ৮-১০জন যাত্রী আহত হচ্ছেন। জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটির এমন দশায় ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন কেন্দুয়ায় উপজেলার বেখৈরহাটি গ্রামের নওয়াব আলী। তিনি জানান, ছোট বোনকে নিয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে যাচ্ছি। গর্ভবর্তী বোনের শারীরিক অবস্থা ভালো না। তার চেয়েও খারাপ অবস্থা সড়কে। ঝাঁকিতে গর্ভের সন্তান ও মায়ের মৃত্যু ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
পরিবহন শ্রমিকরা জানান, জেলা সদরে যোগাযোগের জন্য এটিই একমাত্র সড়ক। এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন মালবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহি বাস ছাড়াও পিকআপ ভ্যান, অটোরিকশা, সিএনজি, লেগুনা, ইজিবাইকসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। এ বছর বর্ষার শুরুতে বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সিএনজি চালক মোবারক হোসেন জানান, গাড়িতো চলে হেলে-দুলে, যাত্রীরা চিৎকার ও ছেচামেচি করে। রোগীদের নিয়ে এ সড়কে যাওয়া অত্যন্ত কষ্টকর।
গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান ফকির বলেন, সরকারি কোষাগারের অর্থের অপচয় হচ্ছে। সুপরিকল্পিত ও টেকসই উন্নয়ন না হওয়ায় জনগণ বারবার দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, একই সড়ক কেন বারবার ভাঙছে; তা নিরুপণ করে প্রতিরোধ ব্যবস্থাসহ সড়ক সংস্কার ও উন্নয়র করা প্রয়োজন। এতে অর্থ সাশ্রয় ও জনগণের সেবা বেশি পাবে।