ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
রোগি ও স্বজনদের অভিযোগে অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কর্মচারীদের হামলার স্বিকার হয়েছেন চার সাংবাদিক। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার নির্দেশে পরিকল্পিতভাবে ওই হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ আহত সাংবাদিকদের। ওই ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
হামলায় আহতরা হলেন দৈনিক আজকের পত্রিকার ত্রিশাল উপজেলা প্রতিনিধি সাইফুল আলম তুহিন, নয়া শতাব্দীর রাকিবুল হাসান সুমন, দেশ সংবাদের রিয়াদুল হাসান এবং গণমুক্তির মাসুদ রানা।
জানা যায়, গত ২৮ আগস্ট ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্যসহ উপজেলা স্বাস্থ্য ও প.প. কর্মকর্তার অসৌজন্যমূলক আচরন তুলে ধরে সংবাদ প্রচার করেন সাংবাদিকরা। এতে সাংবাদিকদের ওপর চরমভাবে ক্ষিপ্ত ছিলেন টিএইচও। ধারাবাহিক প্রতিবেদনের অংশ হিসেবে শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রোগিদের জন্য সরবরাহকৃত খাবারের মানের খোঁজ নিতে হাসপাতালের রান্নাঘরে যান সাংবাদিকরা। এ সময় বাবুর্চী সোহরাব হোসেন, ওয়ার্ডবয় জয়নাল আবেদিন ও জুনিয়র মেকানিক সোহরাব আলী নামে তিন কর্মচারীসহ কয়েকজন মিলে সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায়। মারধরের সময় হামলাকারীদের একজন বলতে থাকেন টিএস স্যার কইছে, সাংবাদিকদের আটকাইয়া দরজা বন্ধ কইরা পিটাইতে। মারধর শেষে রান্নাঘরের দরজা বন্ধ করে সাংবাদিকদেরকে ভেতরে আটকে রাখলে ৯৯৯ ফোন দিলে থানা পুলিশ তাদের উদ্ধার করে। সাংবাদিকদের দুটি ক্যামেরাও ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা। ওই ঘটনায় বিকেলে দৈনিক আজকের পত্রিকার প্রতিনিধি সাইফুল আলম তুহিন বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।
এদিকে ওই ঘটনায় মেডিকেল অফিসার ড. মনোয়ার সাদাতকে সভাপতি, স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আবু বকর সিদ্দিককে সদস্য সচিব ও সিনিয়র স্টাফ নার্স কামরুন নাহারকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পাঁছ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
আহত সাংবাদিক সাইফুল আলম তুহিন বলেন, হাসপাতালের নানা অব্যবস্থাপনা নিয়ে আমরা ধারাবাহিক সংবাদ প্রচার করে আসছি। রোগি এবং তাদের স্বজনদের অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সকালে হাসপাতালের খাবারের মানের খোঁজ নিতে গেলে বাবুর্চি সোহরাব হোসেনসহ অন্যরা আমাদের ওপর হামলা চালায় এবং আটকে রাখে। পরে ৯৯৯ কল দিলে পুলিশ এসে আমাদের উদ্ধার করে।
নয়া শতাব্দীর রাকিবুল হাসান সুমন বলেন, হাসপাতালের কর্মচারীরাই রোগি দেখা থেকে শুরু করে অনেককিছু করেন। এনিয়ে আমার একটি ভিডিও রিপোর্ট ভাইরাল হয়। এরপর থেকে টিএইচও নজরুল ইসলামসহ কিছু কর্মচারী আমাদের প্রতি ক্ষিপ্ত ছিল। টিএইচও’র নির্দেশে আমাদের উপর হামলা হয়েছে।
ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, ঘটনার সময় আমি একটু বাহিরে ছিলাম। ওই ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইন উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকদের উপর হামলা হয়েছে এমন সংবাদে তাৎক্ষণিক ভাবে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। সাংবাদিক সাইফুল আলম তুহিন বাদী হয়ে ত্রিশাল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।