স্টাফ রিপোর্টার ঃ কয়লা, গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ পৃথিবী নিশ্চিত করন নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে একটি সময়-নির্দিষ্ট বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়ন কর বিডাবলুজিইডি (বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ইকোলোজি এন্ড ডেভেলপমেন্ট, ক্লীন (কোষ্টাললাইভলিহুড এন্ড এনভার্মেন্টাল একশন নেটওয়ার্ক), ক্লাইমেট চেঞ্জ নেটওয়ার্ক ইন গ্রেটার ময়মনসিংহ (সিসিএনজিএম) এবং মাটি বাংলাদেশ-এর যৌথ আয়োজনে গতকাল বুধবার ২৯ নভেম্বর-২০২৩ বেলতলি ব্রীজ সংলগ্ন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহা সড়কে এক প্রতীকী দাবী-প্রদর্শনী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
৩০ নভেম্বর থেকে ১২ ডিসেম্বর দুবাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৮) কয়লা, গ্যাসসহ জীবাশ্ম জ্বালানিতে বিনিয়োগ নিষিদ্ধ করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিরাপদ বিশ্ব নিশ্চিত করার জন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বৈশ্বিক বিনিয়োগ বৃদ্ধির দাবিতে এই দাবী-প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়। এজন্য নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে একটি সময়-নির্দিষ্ট বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য
এই প্রদর্শনী সমাবেশ থেকে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি উদাত্ত্ব আহবান জানানো হয়। প্রদর্শনী-সমাবেশ থেকে বিতরণকৃত লিফলেটে বলা হয়, পৃথিবীর অধিকাংশ সরকার প্রধান, বৈশ্বিক সংস্থাগুলোর প্রধান, বিজ্ঞানী, জলবায়ু-অধিকারকর্মী, সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তাবৃন্দ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য প্রতিবছর কপ সম্মেলনে মিলিত হন। এবার দুবাইয়ে ২৮তম কপ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে চলা এসব সম্মেলনে কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ কিংবা গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশ ও সংস্থা সমূহের কার্যকর পদক্ষেপ খুব বেশি দেখা যায়না। অথচ বৈশ্বিক উষ্ণতা বেড়েই চলেছে এবং তার অভিঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বাংলাদেশের মত ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলো। লিফলেটের ভাষ্য অনুসারে ২০১৫ সালে সম্পাদিত প্যারিস চুক্তি অনুসারে ২০৫০ সাল নাগাদ পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার শিল্প বিপ্লব পূর্ব তাপমাত্রার ১.৫ ডিগ্রির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছিল। অথচ জাতিসংঘের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক আন্তসরকারি প্যানেল আইপিসিসির গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান হারে নির্গমন কমালে ২০৫০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধির হার ৩.৬ ডিগ্রি পর্যন্ত বেড়ে যেতে পারে যা এই পৃথিবীতে মানুষসহ সকল প্রাণির অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তুলবে। সুতরাং, শিল্পোন্নত দেশগুলোর নির্গমন ব্যাপক হারে কমানোর কোন বিকল্প নেই। কিন্তু তা না করে কেবল বাণিজ্যিক স্বার্থ রক্ষার্থে সকলে কালক্ষেপন করছে যা গোটা বিশ্বকেই বিপন্ন করে তুলছে। পক্ষান্তরে, কপ সম্মেলনে যা কিছু সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তা বাস্তবায়নে আইনি বাধ্যবাধকতা না থাকায় অধিকাংশ সিদ্ধান্তই যথাসময়ে ও কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন হয় না। এ কারণেই জলবায়ু-কর্মীগণ দাবি তুলে আসছেন, “অযথা বকবক না করে কাজ করো” কিংবা “ঐচ্ছিক সমঝোতা নয়, আইনগত চুক্তি চাই”। লিফলেটে আরও বলা হয়, বর্তমানে জ্বালানি খাত (বিদ্যুৎ, পরিবহন ও শিল্প) থেকেই সবথেকে বেশি পরিমাণ কার্বন নির্গমন হয় যার পরিমাণ মোট নির্গমনের ৩০ শতাংশ। জ্বালানি খাতের মোট নির্গমনের ৩৯ শতাংশ কয়লা, ৩৪ শতাংশ পেট্রোলিয়াম ও ২১ শতাংশ জীবাশ্ম গ্যাস ব্যবহারের মাধ্যমে ঘটে থাকে। সুতরাং, কয়লা, জীবাশ্ম গ্যাস ও পেট্রোলিয়ামের ব্যবহার বন্ধ করে শতভাগ নবায়নযোগ্য জ্বালানি প্রবর্তন করাই ধরিত্রী বাঁচানোর যথাযথ উপায়। সে কারণেই বিশ্বব্যাপী জলবায়ু-যোদ্ধাদের আন্দোলন-সংগ্রামের ফলশ্রুতিতে ২০২২ সালের সম্মেলনে ২০৩০ সাল নাগাদ কয়লার ব্যবহার বন্ধ করার ব্যাপারে প্রায় সব দেশ একমত হয়। কিন্তু দুঃখজনক ভাবে চূড়ান্ত ঘোষণা স্বাক্ষরের পূর্ব মুহূর্তে ভারত ও চীনের বাধার মুখে কয়লা ব্যবহার বন্ধ করার বদলে ্কমিয়ে আনার কথা লেখা হয়। কাজেই এ বছরের জলবায়ু সম্মেলনে কয়লা ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের জন্য সময়সীমা নির্দিষ্ট করে চুক্তি সম্পাদন করার জন্য সর্বমহল থেকে জোর দাবী তুলতে হবে। তাই আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য অপেক্ষা না করে আমাদের দেশেরও কার্বন নির্গমন হ্রাসে উদ্যোগ গ্রহণ করা দরকার। কারণ, অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কার্বন নির্গমন কমানোয় প্রতিশ্রুতি বদ্ধ। তাছাড়া, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে তার প্রথম শিকার হবে বাংলাদেশের মতো উপকূলীয় উন্নয়নশীল দেশগুলো।
ইতোমধ্যেই বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছাস, নদী ভাঙন এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দিনদিন বেড়েই চলেছে। আগামী ২০৫০ সালনাগাদ বাংলাদেশের মত উষ্ণম-লীয় দেশগুলোর দানা শস্যের (ধান-গম) উৎপাদন ১২ থেকে ৩২ শতাংশ কমে যেতে পারে। একই সঙ্গে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে গিয়ে উপকূলীয় নিচু এলাকাগুলো তলিয়ে যেতে পারে যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় ১৭ শতাংশ। এছাড়া তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পতঙ্গবাহী রোগব্যাধির প্রকোপ বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছে। আশঙ্কা করা হয় যে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে দুই থেকে তিন কোটি মানুষ জলবায়ু-উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জন্য সম্মান জনক জীবিকা ও নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত দুরূহ হয়ে পড়বে।