মতিউর রহমান সেলিম, ত্রিশাল :
দিনমজুর (কুলির) বাবার উপার্জিত আয়ে লেখাপড়ার পাশাপাশি অল্প বয়সেই পরিবারের হাল ধরতে মোদকপট্রিতে ইজারাঘরের একটি ভিট ভাড়া নিয়ে মালমাল তুলে ব্যবসা শুরু করেন সোহেল। অষ্টম শ্রেণির গন্ডি পেরোনোর আগেই বন্ধ হয় তার লেখাপড়া। বাবা উপার্জনে অক্ষম হলেও সোহেলের ক্ষুদ্র ব্যবসার আয়ের অর্থে তিন বোনের বিয়েও সম্পন্ন হয়। বর্তমানে পরিবারের ৭ সদস্যের একমাত্র উপার্জনক্ষম সোহেল স্বচ্ছলতা বা আলোর মুখ দেখতে না দেখতেই আগুনে পুড়ে ছাই হলো তার জীবনের সব উপার্জন।
শুক্রবার মধ্যরাতে ত্রিশাল পৌরশহরের মধ্য বাজারের মোদকপট্রি এলাকায় ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের চাল, ডাল, চিনি ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দোকানে অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আগুনের লেলিহান শিখায় যখন তার দোকান দাউদাউ করে জ্বলছিল, তখন তার পাশেই দাঁড়িয়ে হাউমাউ করে কাঁদছিলো সোহেল। কারো কোন শান্তনার বানী থামাতে পারেনি তার আহাজারি। দ্রুত আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়লে অল্পসময়ের ব্যবধানে পুড়ে ছাই হয়ে যায় সোহেল ছাড়াও ইজারা ঘরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের ২৬ দোকানসহ ৩০টি দোকান।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত সোয়া দুইটার দিকে ত্রিশাল পৌরশহরের মধ্যবাজারের মোদকপট্রি এলাকায় ইজারাঘরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়িদের চাল, ডাল, চিনি ও তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের কোন এক দোকানে আগুন লাগে। গভীর রাতে সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন থাকাবস্থায় অগ্নিকান্ডের ফলে স্থানীয়রা টের পেতে পেতে আগুনের লেলিহান শিখা দ্রুত চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের ৩ টি ইউনিটের কর্মীরা আগুন নেভাতে সক্ষম হলেও অল্পসময়ের ব্যবধানে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ইজারা ঘরের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ি সোহেল, রফিকুল ইসলাম, নাঈম, মিরাজুল ইসলাম, কাজল, আবদুল আজিজ, মলয় মোদক, বাতেন, বিপ্লব, নজরুল, আলম, রাসেল, কাউসার, শহীদ, নজরুল ইসলামসহ ২৬ দোকানসহ ৩০টি দোকান। এছাড়া ঘটনাস্থলে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ভালুকা ফায়ার সার্ভিসের আরো দুটি ইউনিট এলেও ততক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রনে চলে আসে। তবে কিভাবে আগুনের সূত্রপাত তা জানা যায়নি। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আক্তারুজ্জামান। বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসক মো. মোস্তাফিজার রহমানকে অবগত করলে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্থদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রত্যেককে ৬ হাজার টাকা ও দুই বান টিন প্রদানের আশ্বাস দেয়া হয়।
ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের ভারপ্রাপ্ত স্টেশন অফিসার রিয়াজ উদ্দিন জানান, ক্ষতির পরিমান নিরুপণ এবং কিভাবে আগুনের সূত্রপাত তা এখনো জানা যায়নি। তদন্ত কার্যক্রম শেষে হয়তো বলা যাবে।
ইউএনও মো. আক্তারুজ্জামান জানান, আজ রোববার জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়িদের মাঝে আর্থিক সহায়তা হিসেবে প্রত্যেককে ৬ হাজার টাকা ও দুই বান টিন প্রদান করা হবে।