গফরগাঁওয়ে টাকা ছাড়া মিলে না সেচযন্ত্রের অনুমোদন, বিপাকে চাষী

ঘুষ ছাড়া সেচযন্ত্র অনুমোদনের দাবীতে কৃষকের মানববন্ধন

প্রকাশিত: ৬:৩৭ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৮, ২০২১

গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা : ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে উপজেলায় কর্মরত কৃষি উন্নয়ন কর্পোশেনের (বিএডিসি) কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জটিলতা ও ঘুষ,দুর্নীতির কারনে চলতি বোরো মৌসুমে অসংখ্য কৃষকের সেচযন্ত্রের অনুমোদন মিলছে না।

এতে বোরো মৌসুমে জমিতে সেচ দিতে পারছে না হাজারো কৃষক। উপজেলায় কয়েক হাজার একয় জমি অনাবাদি থাকতে পারে দাবী ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের। ঘুষ ও হয়রানি ছাড়া সেচযন্ত্রের অনুমোদনের দাবীতে কৃষকরা মানববন্ধন করেছে।


উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি মৌসুমে ২১ হাজার ২’শ ৯০ হেক্টর অর্থ্যাৎ ৫২হাজর ৬’শ ৮ একর জমিতে বোরো ধান রোপণ করার লক্ষ্যমাত্রা নিধারণ করা হয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে জমিতে ধান রোপন করা হয়েছে, চলবে আগামী ফেব্রুয়ারী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।

জমিতে ধান রোপনের এক মাসেরও বেশি সময় অতিবাহিত হয়ে গেলেও উপজেলার হাজার হাজার কৃষক বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগ তো দুরের কথা উপজেলা সেচ কমিটি থেকে সেচযন্ত্রের অনুমোদনই পায়নি।

সেচযন্ত্রের অনুমোদনপত্রের (লাইসেন্স) জন্য গত দেড়মাস ধরে বিএডিসির উপসহকারি প্রকৌশলীর কার্যালয়ে ধর্না দিয়ে লাইসেন্স না পেয়ে উপজেলার দীঘা গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার দুইশতাধিক অসহায় কৃষক ঘুষ ও হয়রানি ছাড়া সেচযন্ত্রের অনুমোদনের দাবীতে বৃহস্পতিবার (২৮ জানুয়ারি) সকালে দীঘা মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে শিবগঞ্জ-গয়েশপুর সড়কে ঘন্টাব্যাপি মানববন্ধন করে।

দীঘা মধ্যপাড়া গ্রামের কৃষক মুসলেন উদ্দিন (৬৫), জয়নাল আবেদীন (৬১), খোকন মিয়া (৫৫) জানায়, তাদের এই সেচ স্কীমের আওতায় দুইশ কৃষকের ১৫০ একর জমিতে সেচ দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত তারা সেচ যন্ত্রের অনুমোদন না পাওয়ায় জমি তৈরী ও জমিতে ধান রোপন করতে পারছেন না। প্রায় ১৫০ একর জমি অনাবাদি হয়ে পড়তে পারে।

এতে এই এলাকার দুই শতাধিক কৃষক ১২ হাজার মন ধান উৎপাদন থেকে বঞ্চিত হবে। দীঘা মধ্যপাড়া ৫ কিউসেক সেচ স্কীমের ম্যানেজার ই¯্রাফিল জাঙ্গাগীর অভিযোগ করে বলেন, গফরগাঁওয়ে কর্মরত বিএডিসির উপ সহকারি প্রকৌশলী তানভীর হাসান এই সেচ প্রকল্পের সেচযন্ত্রে লাইসেন্স নবায়নের জন্য অতিরিক্ত ৪০ হাজার টাকা দাবী করেন। চাহিদামত তাকে টাকা না দেওয়ায় সিজন প্রায় শেষ হওয়ার সময় হয়ে গেলেও সেচযন্ত্রের অনুমোদন িিমলছে না।

বাসুটিয়া গ্রামের খালেকুজ্জামান (৬৫) অভিযোগ করে বলেন, বিএডিসিএই উপসহকারি প্রকৌশলী ও তার অফিসের কর্মচারীরা ঘুষের দোকান খুলে বসেছেন। ৭ হাজার থেকে ৪০/৪৫ হাজার টাকা না দিলে সেচযন্ত্রের অনুমোদন মিলছে ।

আমি ঘুষ না দেওয়ায় গত এক মাস ধরে তদ্বির করেও এই অফিস থেকে সেচযন্ত্রের অনুমোদন নিতে পারি নাই । একই ধরনের অভিযোগ ঘাগড়া গ্রামের শাহজাহান ও এমদাদ মিয়ার। চরআলগী ইউনিয়নের চরমছলন্দ হাতিমার সেচ প্রকল্পের মজিবুর রহমান ৭৫ হাজার টাকা খরচ করেও ওই সেচ প্রকল্পের জমিতে বিএডিসি কর্মকর্তাদের গাফিলতি ও ভুল সিদ্ধান্তের কারতে সেচের ব্যবস্থা করতে পারেননি। ফলে ওই সেচ প্রকল্পের প্রায় ২০০ একর জমি অনাবাদি হয়ে রয়েছে।

্এ ব্যাপারে বিএিডিসি গফরগাঁওয়ের উপসহকারি প্রকৌশলী তানভীর হাসান বলেন, এই দপ্তরে জনবল কম । সেজন্য তদন্তের জন্য সময় ব্যয় হতে পারে। এই দপ্তরে টাকা পয়সার কোন লেনদেন হয় না।
উপজেলা সেচ কমিটির সভাপতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, যাদের আবেদন সেচ কমিটিতে এসেছে তারাই অনুমোদন পেয়েছে। কোন অনিয়ম থাকলে তদন্ত হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।