গৌরীপুরে গেটম্যানবিহীন শ্যামগঞ্জ লেভেলক্রসিং মৃত্যুকূপ!
রিকশা চালকের চিৎকারে বাঁচলো প্রাইভেটকারের ৬যাত্রী
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি ঃ
শ্যামগঞ্জ লেভেলক্রসিংয়ে রিকশা চালকের চিৎকারে বাঁচলো প্রাইভেটকারে থাকা ৬যাত্রী ও চালক। এ ঘটনা ঘটে বৃহস্পতিবার (১০জুন/২০২১)। শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে জংশন থেকে দুপুর ২টা ৩ মিনিটে মোহনগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া মহুয়া কমিউটার ট্রেনটি লেভেল ক্রসিং অতিক্রম করার সময় গেইটম্যানবিহীন ক্রসিংয়ে উঠেপড়ে প্রাইভেটকারটিও। প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনামতে, মাত্র দুই সেকেন্ডের ব্যবধানে বাঁচলো তাজা ৭টি প্রাণ।
গৌরীপুর রেলওয়ে জংশনের কেবিন মাস্টার মো. রফিকুল ইসলাম জানান, মহুয়া কমিউটার ট্রেনটি শ্যামগঞ্জ স্টেশনে ২টায় পৌঁছে। ৩মিনিট যাত্রী বিরতি শেষে মোহনগঞ্জের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়।
রিকশা চালক আব্দুর রশিদ (৪০) জানান, ট্রেনটি যখন আসছিলো তখন প্রাইভেটকারটি রেললাইনের উপরে চলে আসে। চিৎকার দেয়ায় দ্রুত পিছনে চলে যাওয়ায় দুর্ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরো জানান, ২টি রেললাইনের মাঝে দোকানপাট থাকায় প্রাইভেটকারের চালকও ট্রেনটি দেখতে পায়নি। প্রাইভেটকারের চালক হুমায়ন আহমেদ (৩৮) জানান, তিনি কিশোরগঞ্জ যাচ্ছেন। ট্রেনের হর্ণও শোনা যায়নি। এদিক-সেদিক তাকালেও দোকানের কারণে ট্রেন দেখা যায়নি।
জানা যায়, ময়মনসিংহের শ্যামগঞ্জ জংশনে গৌরীপুর-নেত্রকোণা সড়কের শ্যামগঞ্জ লেভেলক্রসিং এখন মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। রেললাইনের মাঝে ও দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা কারণে ট্রেন আসলেও সড়কপথের যানবাহন চালকরা তা দেখতে পারছেন না। অপরদিকে গেইটম্যান না থাকায় সিএনজি ও হ্যান্ডট্রলি’র সঙ্গে ট্রেনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটচ্ছে। এই রেলক্রসিংয়ে এ বছর এক সিএনজি চালক ও এক বৃদ্ধার মৃত্যুও হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, শ্যামগঞ্জ রেলওয়ে জংশন থেকে মোহনগঞ্জগামী ও জারিয়াগামী দু’টি রেলপথের ডবল লেভেলক্রসিং শ্যামগঞ্জ বাজার। এ সড়ক পথে নেত্রকোণা, বিরিশিরি থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জ দুরপাল্লার বাস, দুর্গাপুর থেকে বালিবাহী ট্রাকসহ গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ রোডের শতাধিক সিএনজি, গৌরীপুর-নেত্রকোণা সড়কের ৫০টি সিএনজি নিয়মিত চলাচল করে। শ্যামগঞ্জ লেভেলক্রসিং পয়েন্টে ৪টি ব্যারিয়েল আছে। নেই কোন গেইটম্যান। ফলে প্রায়শঃ ঘটচ্ছে দূর্ঘটনা। সাংবাদিক তিলক রায় টুলু বলেন, গেইটম্যান ও ব্যারিয়েল (লোহার দন্ড) ব্যবহার না হওয়ায় ট্রেনের সঙ্গে সড়কপথের যানবাহনের দূর্ঘটনা বাড়চ্ছে। গত ১১ সেপ্টেম্বরে ২৬১নং ময়মনসিংহগামী ট্রেনের নিচে পড়ে অজ্ঞাত মহিলার (৩৫) এর মৃত্যু হয়েছে। ট্রেনের ধাক্কায় একই স্থানে নিহত হন একজন সিএনজি চালক।
অটোচালক রফিকুল ইসলাম জানান, রেললাইনের মাঝে ও দু’পাশেই দোকানপাট গড়ে উঠায় ট্রেন আসলেও দেখা যায় না। ফলে এ দূর্ঘটনার মাত্রা আরো বেড়েই চলেছে। দু’টি রেলপথের মাঝে ও দু’পাশে প্রভাবশালীদের মদদে গড়ে উঠেছে দোকানপাট। পথচারী মইলাকান্দার আবুল কাসেমের পুত্র ইমাম হোসেন (২৭) জানান, এই গেইট আকাশের দিকে উঠে আছে, নিচে নামতে কেউ দেখেনি। রেলওয়ের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের জন্য কয়েক দফা অভিযান চালালেও পুনরায় সেখানেই দোকান বসছে বলে জানান আব্দুল করিম (৫২)। যেসব লেভেলক্রসিং নষ্ট আছে সেগুলো মেরামত করা হচ্ছে উল্লেখ করে গৌরীপুর রেলওয়ের উধ্বর্তন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওয়াহেদুল ইসলাম জানান, জনবল সংকট রয়েছে। নতুন নিয়োগে গেইটম্যান প্রদান করা হবে।