ইভটিজিং এর নিরাপত্তা চেয়ে ধর্ষণের শিকার কলেজ ছাত্রী : গৌরীপুর যুবলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে অন্তঃসত্ত্বার মামলা
গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. সানাউল হকের বিরুদ্ধে সন্তানের পিতৃপরিচয়ের দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন ৭মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক কলেজ ছাত্রী। ময়মনসিংহ জেলা শিশু ও নারী নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে গত ১৬জুন এ অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়।
আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভিস্টিগেশনকে (পিবিআই) কে তদন্তের দায়িত্ব প্রদান করেন। শুক্রবার (২ জুলাই/২০২১) পিবিআই পরিদর্শক মো. ফিরোজ হোসেন মামলা বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, ওই কলেজ ছাত্রী গর্ভধারণের বিষয়ে ডাক্তারি ও হাসপাতালের পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র জমা দিয়েছেন। আমিও ডাক্তারী পরীক্ষা রোববার করবো। তদন্ত কাজও শুরু হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বিজ্ঞ আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।
ভিকটিম ও অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, তিনি গৌরীপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী। রাস্তায় আসা-যাওয়ার পথে একটি ছেলে তাকে উত্যক্ত (ইভটিজিং) করে আসছিলো। এ থেকে পরিত্রাণের জন্য ২০১৭সালের ২১ ডিসেম্বর তারিখে গৌরীপুর থানায় সাধারণ ডায়রী করতে থানার ভিতরের গোলঘরে যান।
সেখানে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মো. সানাউল হকের সঙ্গে দেখা হয় এবং তিনি জিডি করার কাজেও সহযোগিতা করেন, মুঠোফোনের নাম্বার নেন। তার ৮দিন পর ২৯ডিসেম্বর সানাউল হক আমাকে মুঠোফোনে জানায়, জিডি ময়মনসিংহ ডিবি অফিসে তদন্ত চলছে। এখনি ডিবি অফিসে আমাকে যেতে বলেন। সেখানে যাওয়ার পর অফিসে সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে ভিতরে যান সানাউল হক। ডিবি অফিস থেকে বের হয়ে বলেন, অফিসার নেই, চলো খেয়ে আসি।
এই বলে নদীর পাড়ের একটি রেস্টুরেন্টে নিয়ে দুপুরের খাবারের পর একটি কক্ষে নিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। এরপর তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক করেন।
আমি ২মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়লে দ্রুত সময়ে মধ্যে বিয়ে ও দ্বিতীয় সন্তান নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি আমার গর্ভের সন্তান নষ্ট করে। এরপর ২০১৮সালের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে নিকাহ রেজিস্ট্রি অফিসের সিলমোহরযুক্ত ৫লাখ টাকা দেনমোহরে রেজিস্ট্রিকৃত কাবিনের কাবিননামা হাতে তুলে দেন এবং গাজীপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে শারীরিক সম্পর্ক চালিয়ে আসছে।
ওই কলেজ ছাত্রী গত ১২মার্চ গৌরীপুরের বাসায় গেলে সানাউল হক তার সঙ্গে সকল সম্পর্ক এবং অন্তঃসত্ত্বা সন্তানও অস্বীকার করে। ওইদিন কলেজ ছাত্রী কাবিননামা ও গর্ভের সন্তানের বিষয়টি তার বড় ভাই মো. নজরুল ইসলামকে জানালে তিনিও অপমান-অপদস্থ করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
এদিকে কলেজ ছাত্রী কাবিননামার সত্যতা যাছাই করতে ময়মনসিংহ নিকাহ ও তালাক রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে আবেদন করেন। নিকাহ রেজিস্ট্রার ও কাজী আব্দুল মান্নান গত ২৪জুন দেয়া প্রত্যয়নপত্রে উল্লেখ করেন পৃষ্ঠা নং ৫৩, বহি নং ০২/১৯, তারিখ ১০/০৯/২০২১৮ইং তারিখে কোন প্রকার বিবাহ রেজিস্ট্রি হয় নাই। কাবিনানামাটি বানোয়াট, ভুল ও মিথ্যা। এ উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মো. সানাউল হক জানান, আনিত অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যে ও বানোয়াট। আমাকে হেয় করার জন্যই এই মামলা করা হয়েছে।