মো. রইছ উদ্দিন, গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ১০টি ইউনিয়ন ও পৌরসভার প্রতিটি সড়ক ও আঞ্চলিক মহাসড়কে ভাঙবিদ্যমান।সড়কের দু’পাশে বাঁধ নির্মাণ; পানি নামতে পারছে না। বৃষ্টির পানিতে সড়ক পরিণত হয়েছে নালায়! পুকুরের পাড় নেই, সড়ককে পাড়ে পরিণত করে চলছে মৎস্য চাষ। পানির নিচে বিটুমিনের প্রতিটি সড়কই নষ্ট হচ্ছে। ৫বছরে প্রায় সাড়ে ৩শ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প ক্ষতিগ্রস্থ, ভাঙছে সড়ক! বাড়ছে জনদুর্ভোগ।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার জান্নাত এ হুর জানান, এবার মৎস্য সপ্তাহ উদযাপনের প্রত্যেকটি প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় রাস্তা থেকে নির্ধারিত ১০ফুট দুরত্বে পুকুরের পাড় বাঁধাই করার জন্য বলা হয়েছে। এছাড়াও সারাবছরই এ বিষয়ে কৃষকদের সচেতনতা করা হচ্ছে।
সহকারী মৎস্য অফিসার মোঃ মোজাম্মেল হোসেন ভূঞা জানান, গৌরীপুর উপজেলায় মৎস্যচাষের পুকুর সংখ্যা ৮হাজার ২১৪টি। এরমধ্যে রাস্তার পাশে পুকুরের সংখ্যা ১হাজার ৬শ ৪৩টি। তিনি আরো জানান, রাস্তার পাশের পুকুর ও হ্যাচারী মালিকদের নিয়ে গত বছর ১৫ অক্টোবর একটি বিশেষ বৈঠকও হয়েছিলো । এ বৈঠকে সভাপত্বি করেন ইউএনও হাসান মারুফ রাহাত। উপস্থিত হ্যাচারী মালিক ও মৎস্যচাষীদেরকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে এসব পুকুরের পাড় বাঁধাই করার জন্য সময় বেঁধে দেয়া হয়।
রাস্তার ভাঙন প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকৌশলী আবু সালেহ মোহাম্মদ ওয়াহেদুল হক বলেন, ২০১৮-১৯, ২০১৯-২০, ২০২০-২১ অর্থবছরে নির্মিত সড়কগুলোর অধিকাংশ পুকুরের কারণে ভেঙ্গে যাচ্ছে। চলতি বছরে ভালুকাপুর থেকে বেখৈরহাটি বাজার পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার সড়ক অসংখ্য পুকুর যা রাস্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। সড়ক নির্মাণের চেয়ে এসব পুকুরের পাশে প্যালাস্টাইটিং করলে খরচ দ্বিগুণ। যা সম্ভব নয়। গৌরীপুর-কোনাপাড়া সড়কেও অনুরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। পুকুরের পাড়ের কারণে রাস্তা ধসে যাচ্ছে।
তিনি আরো জানান, শ্যামগঞ্জ-গৌরীপুর সড়কটি শুধুমাত্র পুকরের কারণে ৫বছরে ৩বার মেরামত করার পরেও রাস্তাটি সচল রাখা যাচ্ছে না। দু’পাশের পুকুরের পাড় নেই, সড়ককে পাড় হিসাবে ব্যবহার করছে। আবারও দু’পাশ উচু করে রাখা রাস্তায় পানি জমে পাকা সড়ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
সরজমিনে গৌরীপুর-শ্যামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়ক ৭ কিলোমিটার। দু’পাশে ১৯টি ছোট-বড় আর মাঝারি সাইজের পুকুর। কাউরাট এলাকায় পুকুড়ে ধসে গেছে রাস্তা। নির্মিত গাইডও কাজে আসছে না। মইলাকান্দা এলাকায় মৎস্য হ্যাচারীর মালিকগন রাস্তার দু’পাশে নেট আর সড়কের পাড় ভরাট করে বন্ধ করে দিয়েছেন সড়কের পানি চলাচলের পথ। এ সড়কে গত ৫বছরে ৩বার সংস্কার ও মেরামত করা হয়। তবে কমেনি জনদুর্ভোগ। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর জানায়, এ সড়কটি নির্মাণ কাজ শেষ হয় ২০১৮সালের ৭ মে। ব্যয় হয় ২ কোটি ৭৭লাখ ৯৯হাজার ৪৫৪টাকা। এরপূর্বে দু’বার মেরামত ব্যয় হয় প্রায় ৫ কোটি টাকা।
এ দিকে গৌরীপুর-বেখৈরহাটি সড়কেও রয়েছে ৮টি পুকুর। গৌরীপুর-রামগোপালপুর সড়কে একটি মৎস্য হ্যাচারী ও ৭টি পুকুর। এরমধ্যে সরকারের নিয়ন্ত্রাধীন রামগোপালপুর গুচ্ছ গ্রামের পুকুর প্রতিবছর লীজ দেয়া হলেও স্বাধীনতার পরে এ পুকুরের কোন পাড় সংস্কার করা হয়নি। ফলে সড়কের উন্নয়ন বারবার গিলে খাচ্ছে। সহনাটী ইউনিয়নের শাহগঞ্জ থেকে পাছার বাজার পর্যন্ত সড়কে ৪টি, ভালুকাপুর মোড়ের বাজার থেকে ভূইয়ারবাজার পর্যন্ত সড়কে ১৮টি, ভূইয়ার বাজার থেকে নজরুল ইসলাম সরকারের বাড়িগামী সড়কে ৪টি, ভুইয়ারবাজার থেকে পাছার বাজার সড়কে ১১টি, ভূইয়ার বাজার থেকে পাছার বাজার পর্যন্ত ৬টি পুকুর রয়েছে। যা সড়কের জন্য অত্যন্ত বিপদজ্জক।
অপরদিকে বোকাইনগর ইউনিয়নের রামগোলাপুর ইউনিয়নের পুম্বাইল সড়ক, বিশ্বনাথপুর সড়ক, তেরশিরা সড়ক, রামগোপালপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গাঁওগৌরীপুর সড়কে রাস্তার পাশে রয়েছে ৩১টি পুকুর। ডৌহাখলা ইউনিয়নের গাজীপুর-উচাখিলা আঞ্চলিক মহাসড়কে ১১টি পুকুর। এরমধ্যে গাজীপুরের ৩টি পুকুর সড়কের জন্য মহাবিপদ ও যাত্রীদের জন্য মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে। রামগোপালপুর-শ্যামগঞ্জ সড়কের বালুয়াপাড়া ৭টি পুকুর, সিধলা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হাসানপুর বাজার সড়কে ৭টি, তাঁতকুড়া-চান্দের সাটিয়া উচ্চ বিদ্যালয় সড়কে ২টি, রামগোপালপুর থেকে ধুরুয়া বাজার সড়কে ৪টি, শ্যামগঞ্জ-লামাপাড়া সড়কে ৩টি, বিসকা ইউপি থেকে ডৌহাখলা-কলতাপাড়া সড়কে ৬টি, বিশউড়াগামী-শাহগঞ্জ বাজার সড়কে ৫টি, শাহগঞ্জ-ভূইয়ার বাজার সড়কে ৯টি, সিধলা ইউনিয়নের মনাটি-তারাকান্দা সড়কে ৮টি, ডেঙ্গামোড় থেকে মনাটি বাজার পর্যন্ত ৪টি, গাছতলা থেকে মনাটি বাজার সড়কে ৭টি পুকুর, বিসকা-কলতাপাড়া সড়কে ৪টি পুকুর রাস্তার জন্য বিপদজ্জনক।
এদিকে গৌরীপুর পৌরসভার সতিশা থেকে রামগোপালপুরে ৩টি পুকুর, সতিশা মোড় থেকে খালপাড় পর্যন্ত ৫টি পুকুর, গৌরীপুর ধানমহাল থেকে পাছারকান্দা সড়কে ১১টি পুকুর, ভালুকায় ৫টি পুকুর, কলাবাগান এলাকায় পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পুকুর, থানার সরকারী ও বেসরকারি ৬টি পুকুর, পুর্বদাপুনিয়ায় ৩টি পুকুর, সরকারপাড়ায় ১টি পুকুর, গোলকপুরে ২টি পুকুরে বারবার রাস্তা ধসে যাচ্ছে। এছাড়াও মইলাকান্দা ইউনিয়নের কাউরাট থেকে কাউরাট নতুন বাজারে ২টি পুকুর যানবাহন চলাচলসহ পথচারীদের জন্য মৃত্যুকুপে পরিণত হয়েছে।
রাস্তার বেহালদশা প্রতিরোধ কল্পে এবার নোটিশ জারী করেছেন উপজেলা প্রশাসন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ রাহাত বলেন, রাস্তার পাশের পুকুর মালিকদেরকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রাস্তার দুরত্ব রেখে পুকুরের পাড় তৈরি করতে বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩জন পুকুর মালিককে জরিমানা করা হয়েছে। গণসচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রমও অব্যাহত রয়েছে।