ফেরদৌস আলম মুক্তাগাছা (ময়মনসিংহ) :
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক জ্বালানী ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী একেএম মোশাররফ হোসেনের নামাজে জানাযায় হাজারো মানুষের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়।
১৮ অক্টোবার রবিবার মুক্তাগাছা আরকে হাই স্কুল খেলার মাঠে নামাজে জানাযায় বিএনপি, আওয়ামীলীগ, জাতীয় পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী, সমর্থক ও নানা পেশাজীবীর মানুষ অংশ নেয়। মরহুম মোশাররফ হোসেনের করোনা পজিটিভ হওয়ায় রবিবার সকাল থেকে পথে পথে পুলিশি নানা বাধা-বিপত্তির পরও স্থানীয়রা খেলার মাঠের আশপাশ এলাকায় জড়ো হয়।
পুলিশি আতঙ্কে বিকেল অবধি কেউ মাঠে নামেনি। বিকালে মোশাররফ হোসেনের লাশের গাড়ী খেলার মাঠের রাস্তায় পৌছার সাথে সাথে হাজার হাজার মানুষের ঢল নামে জানাযার স্থলে।
এ সময় পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নামাজে জানাযা সংক্ষিপ্ত আকারে করার অনুমতি দেয়। এ অবস্থায় আগত মুসল্লিরা মাঠেই আসরের নামাজ আদয় করে ও পরে সংক্ষিপ্ত আলোচনার পর তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
জানাযায় বক্তব্য রাখেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ডাঃ মাহবুবুর রহমান লিটন, যুগ্ম আহ্বায়ক মরহুমের ছোট ভাই আলহাজ্ব জাকির হোসেন বাবলু, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি, নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনালের পিপি, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এড. বদর উদ্দিন আহমেদ, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, আওয়ামীলীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই আকন্দ, বিএনপি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি এড. আবু রেজা ফজলুল হক বাবলু, জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচিত সাবেক এমপি সালাহ উদ্দিন আহমেদ মুক্তি, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান জাকারিয়া হারুন, পৌর সভার সাবেক মেয়র মোঃ শহীদুল ইসলাম শহীদ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মোঃ আবুল কাশেম, বিএনপি নেতা মাহবুবুল আলম ফরহাদ, গোলাম শাহরিয়ার শরীফ, আক্রাম আলী ভুলু, একেএম জাহাঙ্গীর হাসান, সৈয়দ শাহেদ সারওয়ার উজ্জ্বল প্রমুখ।
পরে মরহুমের জন্মস্থান কান্দিগাঁও এলাকায় নজরুল ইসলাম হাই স্কুল মাঠে তৃতীয় নামাজে জানাযা শেষে পারিবারিক গোরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।
এর আগে ময়মনসিংহ মরহুমের বাসভবনের সামনে প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে শনিবার রাতে উপজেলার বিভিন্ন মসজিদ ও ফেইসবুক থেকে মোশাররফ হোসেনের মৃত্যুর খবর ভাইরাল হলে দলমত নির্বিশেষে সকল পেশাজীবী মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।
সকালে উপজেলার সকল এলাকায় মাইকিং করে বাদ আসর স্থানীয় আরকে হাই স্কুল খেলার মাঠে তাঁর নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর প্রচার করা হয়। এ খবরে সকাল থেকেই মুক্তাগাছা উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী ফুলবাড়ীয়া, জামালপুর সদর ও মধুপুর এলাকা থেকে হাজার হাজার মানুষ শহরে ছুটে আসেন।
অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বেড়ে যায়। মোতায়েন করা হয় অতিরিক্ত পুলিশ। পুলিশের উপস্থিতির কারনে জনমনে তৈরি হয় শঙ্কা।
উল্লেখ্য গত ১৭ অক্টোবর রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ল্যাবএইড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একেএম মোশাররফ হোসেন মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৩ বছর। মৃত্যুকালে ২পুত্র, ভাই-বোন, আত্মীয়-স্বজন, কর্মী-সমর্থকসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
এলাকাবাসীর মতে একেএম মোশাররফ হোসেন ছিলেন মুক্তাগাছা উপজেলা উন্নয়নের রূপকার। ১৯৯৬ সালে জাতীয়পার্টির সরকারের স্পীকার পরবর্তীতে আওয়ামীলীগে যোগ দেয়া জাতীয় নেতা শামছুল হুদা চৌধুরীকে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার ভোটের ব্যবধানে অবসর প্রাপ্ত শিল্প সচিব প্রথম বারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচিত হন।
নির্বাচিত হয়েই দলমত, জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে এ উপজেলার অভিভাবক হয়ে উঠেন। ২০০১ সালে ২য় বারের মতো নির্বাচিত হয়ে ৪দলীয় জোটের জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহন করেন। ১৯৯৬ সালের আগে মুক্তাগাছা উপজেলার জনপদ ছিল একটি অবহেলিত জনপদ। তিনি নির্বাচিত হয়ে ২বারে মাত্র ১০ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়ন, পিচঢালা রাস্তা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাকাকরণ, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ব্রিজ, কালভার্ট, মসজিদ-মন্দিরে অনুদান, উপজেলা শহরে গ্যাস সরবরাহ ও শহরের পাশ্ববর্তী ময়মনসিংহ শারীরিক শিক্ষা কলেজ স্থাপন ছিল তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান।
এছাড়াও তিনি পারিবারিক অর্থায়নে মুক্তাগাছাস্থ হাজী কাশেম আলী মহিলা কলেজ, হামিদা সুলতানা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, গোয়ারী এলাকায় একেএম হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, বিন্নাকুড়ী এলাকায় একেএম মোশাররফ হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়, হাজী কাশেম আলী এতিম খানা, ময়মনসিংহস্থ হাজী কাশেম আলী ডিগ্রী কলেজসহ প্রায় ২২টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন।