৯ ডিসেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত দিবস

প্রকাশিত: ৮:৫৪ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ৮, ২০২০

সাইফুল ইসলাম তালুকদার ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ)  :
১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর এই দিনে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানা পাক হানাদার মুক্ত হয়েছিল। রক্ত ঝরা সেই উত্তাল দিনে দামাল ছেলেরা দেশকে শত্রুমুক্ত করার দীপ্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মহান মুক্তিযোদ্ধে।

নিজ থানাকে শত্রুমুক্ত করতে একাত্তরের ১৬ অক্টোবর রাতে কাজী আলম, আলতাব ও হাবিবুল্লাহ খান ওই তিন কোম্পানির মুক্তিসেনারা ময়মনসিংহ, ভৈরব রেল-লাইনে মাইজহাটি ব্রীজটি ডিনামাইট ছুঁড়ে বিধস্তসহ টেলিফোন লাইন বিচ্ছিন্ন করার পর ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের রামগোপালপুরের কটিয়াপুরি ব্রীজটি বিধস্ত করতেই ভোর হয়ে যায়।

প্রর্ত্যুষে মুক্তিসেনারা নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিলেও মুক্তিযোদ্ধা সংগঠক হাসিম উদ্দিন আহাম্মদের পরামর্শে থানা আক্রমনণের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই তিন কোম্পানির মুক্তিসেনারা সড়ক পথে অগ্রসর হয়ে ঈশ্বরগঞ্জের দওপাড়া শ্বশান ঘাটে এসে তিন ভাবে বিভক্ত হয়ে পড়ে।

পরিকল্পনা অনুযায়ী প্লাটুন কমান্ডার কাজী হাসানুজ্জামান হীরুর গ্রুপ সোনালি ব্যাংক সম্মুখে, হাবিবুর রহমান হলুদের গ্রুপ চরহোসেনপুর নলুয়া পাড়া মসজিদের পাশ থেকে, আব্দুস ছাওার ও মতিউর রহমানের গ্রুপ থানার পেছন থেকে থানা আক্রমন করেন। পাকহানাদারদের সাথে শুরু হয় তুমুলযুদ্ধ।

মুক্তিযোদ্ধাদের পরিকল্পনায় ত্রুটির কারণে ভেঙে পড়ে চেইন অব কমান্ড। ফলে তাদের অভিযান ব্যার্থতায় পর্যবসিত হয়। এ সময় সম্মুখযুদ্ধে পাকহানাদার ও রাজাকারদের হাতে শহীদ হন ৭ মুক্তিযোদ্ধা। শহীদ মুক্তিযোদ্ধারা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুল হক, আব্দুল মান্নান, আব্দুল খালেক, দুলাল, মতিউর রহমান, আবু তাহের ও হাতেম আলী। শহীদদের রক্তের বদলা নিতে মুক্তিযোদ্ধারা ৮ ডিসেম্বর পুনরায় সুসংগঠিত হয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানা আক্রমণের সিদ্ধান্ত নেন।

ভয়াবহ আক্রমণের মুখে পাকহানাদাররা ভীত হয়ে গভীর রাতে থানা ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। যুদ্ধ ছাড়াই ৯ ডিসেম্বর ঈশ্বরগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। ওই দিনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড কার্যালয়ে উত্তোলন করা হয় স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা। তাই ঈশ্বরগঞ্জ বাসীর কাছে এ দিনটি অত্যন্ত গর্বের ও আনন্দের। দিবসটি পালন উপলে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ ও মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন স্বাস্থ্যবিধি মেনে দিন ব্যাপি কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আতশবাজি, আনন্দ শোভাযাত্রা, শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় মিলাদ মাহফিল, কবর জিয়ারত, পতাকা উত্তোলন ও আলোচনা সভা।