এক মাসেও গ্রেফতার হয়নি হত্যা মামলার আসামী সুরুজ চৌকিদার : বাদির বাড়ীতে হামলা

সাংবাদিক সম্মেলনে নিহত বাবুলের পরিবারের দাবী

প্রকাশিত: ৮:৪৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২৩, ২০২১

স্টাফ রিপোর্টার : হত্যাকান্ডের একমাস হলেও কোতোয়ালী থানা পুলিশ আসামীদের গ্রেফতার না করায় বাদীর পরিবারকে ভয়ভীতিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে ঘাতকচক্র।

গতকাল শনিবার সকালে ময়মনসিংহ প্রেসকাবের এক জরাঝীর্ন সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এমন অভিযোগ করেন, ময়মনসিংহ সদরের খাগডহর ইউনিয়নের কল্যানপুর গ্রামের নিহত পঙ্গু মোজাম্মেল হোসেন বাবুলের স্ত্রী হত্যা মামলার বাদী শিউলি আক্তার।


লিখিত বক্তব্যে জানানো হয় কল্যাণপুর গ্রামের গরীব রিক্সা চালক মোজাম্মেল হোসেন বাবুল ঢাকা শহরে রিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতো। সড়ক দুর্ঘটনায় এক পা কেটে ফেললেও এক পা দিয়েই রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতেন। মাঝে মধ্যে গ্রামের বাড়ীতে এসে জমিজমা গাছপালা দেখাশোনা করে আবার ঢাকায় কর্মে চলে যেত।

মোজাম্মেল হোসেনের পঙ্গুত্ব ও দুর্বলতার সুযোগে পার্শ্ববতী সুরুজ আলী চৌকিদার, তার ভাই চান মিয়া এবং তার পরিবারের লোকজন মিলে বাবুলের ১৬ শতাংশ জমির মধ্যে ৩ শতাংশ জমি জবর দখল করে নেয়। বাকী ১৩ শতাংশ জমিও জবর দখল করে নেওয়ার জন্য বাবুল ও তার পরিবারের উপর নানা রকম অত্যাচার শুরু করে।

সুরুজ চৌকীদার ও তার পরিবারের লোকজনের অত্যাচার নির্যাতনে অতিষ্ট হয়ে বাবুল বিগত সময়ে আদালতে মোকদ্দমা দায়ের করেন। এছাড়াও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও খগডহর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। এ ব্যাপারে গত ১১/১২/২০১৪ ইং তারিখে কোতোয়ালী মডেল থানার ৬১৭ নং জিডি করেন। এসব কারনে সুরুজ চৌকীদার তার পরিবারের লোকজন বাবুলের উপর আরো প্তি ও মারমুখী হয়ে উঠে।

গত ৪/৩/২০১৮ইং তারিখে এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এক সালিশ বৈঠকে উভয় পরে মাঝে লিখিতভাবে আপোষ মীমাংসা করে দেয়। কিন্তু চৌকিদার হওয়ায় সুরুজ আপোষ মীমাংসা উপাে করে বাবুলের জমি জবর দখলের অপচেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে।

অভিযোগে প্রকাশ, এমন অবস্থায় গত ২৫/১২/২০২০ইং তারিখে বাবুল তার নিজ বসত ঘরের উত্তর পাশে নদীর তীরে লাউ গাছে মাচা দেয়ার সময় সুরুজ ও তার ভাই চান মিয়াসহ তাদের পরিবারের লোকজন বাবুলের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে বেদম মারধর করে। এতে বাবুল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। বাবুলকে বাচাঁতে তার ভাই মোবারক হোসেন এগিয়ে গেলে তাকেও মারধর করে ও হত্যার হুমকি দিয়ে বাবুলকে টেনে হিচড়ে বাদল মেম্বারের বাড়ীতে নিয়ে যায়।

বাবুলের অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় বাদল মেম্বার বাবুলকে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার কথা বললেও সুরুজরা তাতে বাধা দেয়। পরে এলাকাবাসীর সহযোগীতায় বাবুলকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করালে ঐ দিনই বাবুল মারা যায়।

এ ঘটনায় বাবুলের স্ত্রী শিউলি আক্তার বাদী হয়ে কোতোয়ালী মডেল থানায় সুরুজ আলী চৌকীদার ও তার ভাই চান মিয়াসহ অন্যান্যদের আসামী করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ৯৬(১২/২০)। হত্যা মামলা দায়েরের একমাস হলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন আসামী গ্রেফতার করেনি।

পুলিশের দায়িত্বহীনতায় হত্যা মামলার আসামী চৌকিদার সুরুজ আলী তার কর্মে বহাল তবিয়তে রয়েছে। এই সুযোগে চৌকিদার সুরুজ ও তার পরিবারের লোকজন নিহত বাবুলের পরিবারকে বসত ভিটা থেকে উচ্ছেদের জন্য নানা ধরনের অত্যাচার নির্যাতনসহ তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে।

বিষয়টি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাকে জানালেও কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় সুরুজরা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেছে বলে সাংবাদিক সম্মেলনে দাবী করা হয়েছে।

এদিকে গত ১০ জানুয়ারী বাবুল হত্যা মামলার আসামী সুরুজ চৌকিদারসহ অন্যান্যরা নিহত বাবুলের বাড়ীতে ঢুকে মামলার বাদী নিহত বাবুলের স্ত্রী শিউলি আক্তারের উপর আক্রমন চালিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে শিউলি আক্তার বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট সদর আদালতে ১০৭/১১৭ ধারায় ৫৪/২১ মোকদ্দমা দায়ের করেছেন। হত্যা মামলার আসামী চৌকিদার সুরুজ আলীসহ অন্যান্য আসামীরা গ্রেফতার না হওয়ায় নিহত বাবুলের অসহায় দরিদ্র পারিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আসামীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের জন্য কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ সুপারের জরুরী হস্তপে কামনা করেছেন নিহতের পরিবার ও এলাকাবাসী।