ত্রিশালে ঘুমের মধ্যেই যেন সব পুড়ে ছারখার

প্রকাশিত: ৭:৫০ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৩, ২০২১

ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
কনকনে শীতের গভীর রাত। বাড়ির নারী-শিশুসহ প্রায় সকল সদস্যই নিদ্রাচ্ছন্ন। নাকে আসে পোড়া গন্ধ। ঘুম ভেঙে, চোখ মেলে তাকাতেই দেখতে পান দাউদাউ আগুনের লেলিহান শিখা।

তিনটি পরিবারের ১৩ জন সদস্য কোন রকমে প্রাণ নিয়ে ঘর থেকে বের হতে পারলেও রক্ষা করতে পারেননি কোন আসবাবপত্র, ধান-চাল কিংবা গবাদিপশু। মুহুর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যায় সবকিছু। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে ময়মনসিংহের ত্রিশালের বইলর ইউনিয়নের মঠবাড়ী গ্রামে।

উপজেলার বইলর ইউনিয়নের মাঠবাড়ী গ্রামের ট্রাক চালক হাফিজুল ইসলাম, বর্গাচাষি হামিদুল ইসলাম ও আমিরুল ইসলাম নামে তিন ভাই একই বাড়িতে স্ত্রী-সন্তানসহ ১৩ সদস্য নিয়ে পাশাপাশি ঘর তুলে বসবাস করেন। পৈতৃক সম্পত্তি বলতে বাড়িভিটে ছাড়া ফসলের কোন জমিজমা নেই তাদের। কঠুর পরিশ্রমে যা আয় তাই নিয়ে সুখের সংসার ছিল। আকস্মিকভাবে মঙ্গলবার রাত সোয়া ১২টার দিকে তাদের বসতঘরে ভযাবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে।

আগুনের পোড়া গন্ধে ঘুম ভাঙার পর ছোট ছোট শিশুদের নিয়ে প্রাণে বাঁচতে পারলেও ঘরের কোন আসবাবপত্র, ধান-চাল কিংবা গবাদিপশু রক্ষা করতে পারেননি। নারী-শিশুসহ সকলের আর্ত চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ত্রিশাল ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয়রা দুইঘন্টা প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। তবে আগুনের লেলিহান শিখায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় সবকিছু।

বুধবার দুপুরে সরেজমিন বাড়িটিতে প্রবেশ করতেই বাতাসে নাকে ভেসে আসে পোড়া গন্ধ। পুড়ে ছাই হয়ে যাওয়া তিনটি বসতঘরের ঘরসহ যাবতীয় আসবাবপত্র ও একটি খাদ্যশস্য আর গবাদিপশুর ঘরটি চোখে পড়ে। সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল আগুনে পুড়ে আঙ্গার হওয়া কয়েকটি ছাগল ও হাঁস-মুরগি। হাবিবা, হামীমসহ অন্য শিশুদের আতঙ্ক যেন তখনও কাটেনি।

প্রথম শ্রেণিতে পড়–য়া ৬ বছর বয়সি অবুঝ হামীম কেঁদে কেঁদে বলছিলো, স্যার আমার নতুন বইগুলাও পুইড়া গেছে। রাইতে আব্বা আমারে যহন ঘর থেইক্যা বার করছে, হুদা আগুন আর আগুন দেকছি।

৪র্থ শ্রেণির হাবিবা বলেন, প্রতিবেশীরা সকাল-দুপুরের খাবার দিয়া গেছে। সব ঘর ত পুইড়া গেছে, রাইতে থাহুম কই।
ফায়ার সার্ভিসের ষ্টেশন অফিসার মুনিম সারোয়ার জানান, দুইঘন্টা প্রচেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রনে আসে। ধারনা করা হচ্ছে বৈদ্যতিক শর্টসার্কিটে আগুনের সূত্রপাত ঘটেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন বলেন, অগ্নিকান্ডের বিষয়টি তিনি জানেন না। তবে খোঁজ নিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ তিনটি পরিবারকে সহায়তা প্রদান করা হবে।