গফরগাঁও (ময়মনসিংহ) সংবাদদাতা :
বেশি বেতনে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর গ্রামের দুই বোনকে ( স্ত্রী ও শ্যালিকাকে) ভারতে নিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগে স্বামী ইউসুফ ও তার সহযোগী রাব্বিল শেখ গ্রেফতার করেছে র্যাব ১৪।
শুক্রবার ( ১১ জুন ) র্যাব ১৪ এর আভিযানিক দলের সদস্যরা ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বালিহাটা থেকে ইউসুফ এবং গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে রাব্বিল শেখকে গ্রেফতার করে। শনিবার দুপুরে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব ১৪ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু নাঈম মোঃ তালাত এসব তথ্য জানান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা মানব পাচারে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। প্রেমের ফাঁদে ফেলে স্বামী ইউসুফ স্ত্রী কুলসুমা আক্তার (২২) ও শ্যালিকা সুমাইয়া আক্তারকে (১৯) মানবপাচারকারীদের সহায়তায় ভারতে বিক্রি করে দেয় বলে জানায় সে।।
গফরগাঁও উপজেলার রসুলপুর গ্রামের হতদরিদ্র পরিবারের দুই তরুণী বোন কুলছুমা আক্তার (২২) এবং মোছাঃ সুমাইয়া আক্তার( ১৮ )। তারা দুই বছর আগে চাকুরী নেয় শ্রীপুর উপজেলার জৈনা বাজার এলাকায় রিদিশা ফুট এ্যান্ড বেভারেজের একটি বিস্কুট কোম্পানীতে। নারী পাচারকারী দলের সদস্য মোঃ ইউসুফ ও তার সহযোগি এই দুই বোনের সাথে সখ্যতা গড়ে তোলে। এরপর বন্ধুত্ব ও বিশ্বাস অর্জন। এক সময় নারী পাচারকারী ইউসুফ বড় বোন কুলছুমার সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং পরিবারের কাউকে না জানিয়ে কুলছুমাকে বিয়ে করে।
এই অসহায় দুই নারী শ্রমিক নারী পাচারকারীদের হাতের মুঠোয় চলে আসে। এরপর তাদের জীবনে নেমে আসে দুর্দশা। প্রেম করে বিয়ের দুইমাস পর গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে কুলছুমা ও সুমাইয়া ভারতের পাচারের শিকার হন ।
নারী পাচারকারী দলের সদস্য ইইসুফ ও তার সহযোগি ভাল চাকুরীর মাধ্যমে মাসে কুলছুমা আক্তার এবং মোছাঃ সুমাইয়া আক্তারকে মাসে ৪০/৫০ হাজার আয়ের লোভ দেখিয়ে চোরাপথে জীবননগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে নিয়ে যায়। এরপর এই দুই বোনকে তিন লাখ টাকায় ভারতের রানাঘাট এলাকায় নিয়ে নারী ব্যবসায়ী বাবলু/রাহুলের কাছে বিক্রি করে দেয়।
শুরু হয় তাদের যন্ত্রণাদগ্ধ কাহিনী। তাদেরকে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা এলাকার বিভিন্ন বাসায় ও হোটেলে রেখে দেহ ব্যবসা করানো হত। দুই বোনকে আলাদা আলাদা জায়গায় রাখা হতো। নারী ব্যবসায়ীদের কথা না শুনলেই দেওয়া হতো ইলেকট্রিক শক। কঠোর নজরদারিতে এদের রাখা হতো।
পশ্চিবঙ্গের করোনার প্রার্দুভাবে ১৬ মে থেকে লকডাউন শুরু হলে তাদের উপর নারী পাচারকারীদের নজরদারী শিথিল হয়। এই সুযোগে দুই বোন নারী পাচারকারীদের নরক থেকে পালিয়ে আসে। গত ১৭ মে আঁিখ হাওড়া ষ্টেশন এলাকায় পুলিশের হাতে আটক হয়।
পুলিশ তাকে উদ্ধার করে কলিকাতার শিয়ালদহ এলাকায় ভারতীয় সরকার পরিচালিত সেফ হোম পার্টিসিপেটরি সিসার্চ এ্যান্ড একশন নেটওয়ার্ক এর হাতে ন্যস্ত করে । কুলছুমা গত ২১ মে ভারতের বোঝাপড়া সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টাকালে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ এর হাতে গ্রেফতার হয়। বিএসএফ তাকে ভারতীয় পুলিশের হাতে তুলে দেয়।
র্যাব জানায়, এ সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণালঙ্কার ও ২ লাখ চব্বিশ হাজার চারশত পাঁচ টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পাচারকারীদের অন্যতম মূলহোতা রব্বিল শেখের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিপুল পরিমান অর্থ লেনদেনের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। উদ্ধারকৃত অর্থ এই মানব পাচারের সাথে সম্পৃক্ত। ভিকটিমদ্বয়কে ভারত থেকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে র্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সরকারী সংস্থার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।