মোঃ মনিরুজ্জামান খান, ভালুকা (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধিঃ ভালুকা উপজেলার সীডষ্টোর বাজার হতে বাটাজোর হয়ে পার্শ্ববর্তী সখীপুর সদর পযন্ত শহীদ শমসের সড়কটির ভালুকা উপজেলার ১৪ কিলোমিটার অংশের প্রায় সবটুকুই দীর্ঘদিন যাবত ছোট-বড় অসংখ্য খানাখন্দের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচল অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কটি দিয়ে বর্তমানে যাত্রী ও পণ্যবাহী কোন যান চলাচল না করায় সড়কটি এলাকাবাসির জন্য অভিশাপ ও মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে।
সড়কটি দিয়ে যান চলাচল করতে না পাড়ায় সড়কের দু’পাশে গড়ে উঠা শতাধিক শিল্প উদ্যোক্তারা বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের লক্ষে জমি ক্রয় করলেও শিল্প কারখানা স্থাপনের কাজ করতে পারছেন না। শিল্প কারখানা স্থাপনে প্রয়োজনীয় মালামাল আনা-নেওয়া করতে না পাড়ায় শিল্পায়নে সৃষ্টি হয়েছে বাঁধা। আর যে সব শিল্প প্রতিষ্ঠান ইতি মধ্যেই চলমান রয়েছে সেগুলোর উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত ও সরবরাহ এবং কাঁচামাল আনা নেয়ার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রতিবন্ধকতার সম্মুর্খীন হচ্ছেন।
অপরদিকে উপজেলার হবিরবাড়ী, কাচিনা ও ডাকাতিয়া ইউনিয়নসহ পার্শ্ববতী সখিপুর উপজেলার বেশীর ভাগ কৃষক তাদের উৎপাদিত বিভিন্ন জাতের কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারছেন না। ফলে কৃষকরাও ব্যাপক তির সম্মূর্খীন হচ্ছেন। সড়কটির পরো অংশ জুড়েই অসংখ্য খানাকন্দের সৃষ্টি হয়ে যান চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন যাবত ভূক্তভোগীরা এ গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি মেরামত করার দাবী জানিয়ে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচীর মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপরে দৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করে আসলেও কোন কাজের কাজ হচ্ছে না।
উপজেলা প্রকৌশলৗ অফিস সূত্রে জানা যায়, দুই বছর পূর্বে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতাধীন রাষ্ট্রীয় ও বিশ^ব্যাংক আইডিএ এর অর্থায়নে, ঢাকা-ময়মনসিংহ হাইওয়ে হতে সীডস্টোর- সখিপুর হেড কোয়াটার সড়কের ভালুকা উপজেলাধীন ১৩.৭০ কিঃ মিঃ সড়ক পাকা করণের জন্য ২৪ কোটি ৯৫ ল ৩৩ হাজার ২শত ৩৩ টাকা ব্যয় নির্ধারণ পূর্বক দরপত্র আহবান করা হয়। ওই প্রকল্পের জন্য রাফিয়া কনস্ট্রাকশন লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মনোনিত হয়ে কার্যাদেশ প্রাপ্ত হন। পরে গত ০৮/১০/২০১৯ খ্রিঃ তারিখে কাজ শুরু করেন।
০১/০৩/২০২১ তারিখের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান শুরুতে ৩/৪ মাস নিয়মিত কাজ করে প্রকল্পের মূল কাজের আনুমানিক ২০/২৫ শতাংশ সম্পন্ন করে নির্বাহী প্রকৌশলী, এলজিইডি ময়মনসিংহ বরাবর ১০ কোটি টাকার আংশিক বিল জমা দেন। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কাজের অগ্রগতি যাচাই-বাছাই পূর্বক ১ কোটি টাকার আংশিক বিল প্রদান করেন। বিল নেওয়ার কিছুদিনের মধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান হঠাৎ কাজ বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যায়।
বাটাজোর গ্রামের বাসিন্দা, উপজেলা সিপিবি সভাপতি মোজাম্মেল হক জানান, সীডষ্টোর বাজার হতে বাটাজোর পর্যন্ত রাস্তার বেশীর ভাগ অংশে দীর্ঘদিন থেকেই অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ে। স্থানীয় কাচিনা ইউপি চেয়ারম্যান মুশফিকুর রহমান লিটন জানান, বিভিন্ন সরকারি মিটিং রাস্তাটি মেরামতের জন্য দাবী জানানো হলে অবশেষে ২০১৯ সালের শেষের দিকে রাস্তাটির নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ায় এলাকাবাসীর মাঝে সস্তি ফিরে আসছিল। কিন্ত অজ্ঞাত কারনে বর্তমানে রাস্তার কাজ বন্ধ রয়েছে।
ভালুকা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম পিন্টু জানান, গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কের পাশে ১টি কলেজ, ১টি আলিম ও ৩টি দাখিল মাদরাসা, একটি গার্লস হাই স্কুলসহ বেশ ক’টি হাই স্কুল ও প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র ছাত্রীরা দীর্ঘদিন যাবত ঝুকি নিয়ে কষ্ট করে প্রতিদিন যাতায়াত করতে হচ্ছে। সড়কটি এলাকাবাসির জন্য বর্তমানে অভিশাপ ও মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে।
বর্ষা মৌসুম এলে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে সৃষ্টি হওয়া অসংখ্য খানা-খন্দে পানি জমে যায় এবং এসব গর্তে প্রায়ই যাত্রী বাহী বাস, লেগুনা, সিএনজি, টেম্পুসহ বিভিন্ন যানবাহন দূর্ঘটনায় পতিত হয়।
উপজেলা প্রকৌশলৗ ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, কিছুদিন কাজ করার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃপকে কোনরূপ অবহিত না করেই হঠাৎ সড়ক নির্মাণে কাজ বন্ধ করে দেন। কার্যাদেশের শর্তানুযায়ী কাজ সম্পন্ন করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠানকে মৌখিক ও লিখিত ভাবে বার বার তাগাদা দেওয়ার পরও কাজ শুরু করেননি। অবশেষে গত ০৫/১০/২০২০ খ্রিঃ তারিখে যথাযথ কর্তৃপক্ষ ওই ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিল করেন।
প্রকল্প কর্তৃপক্ষ অতি গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগের লক্ষে গত ডিসেম্বরে নির্বাহী প্রকৌশলী ময়মনসিংহ ও ভালুকা উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের সমন্বয়ে আট সদস্যের ম্যাজারমেন্ট কমিটি গঠন করা হয়। ওই ম্যাজারমেন্ট কমিটি গত ডিসেম্বরে কার্যাদেশ বাতিলকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিসহ একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের উপস্থিতিতে পুনঃরায় ম্যাজারমেন্ট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্তৃপ নির্বাহী প্রকৌশলী, ময়মনসিংহ বরাবর দাখিলের পর ওই প্রকল্পের কাজের জন্য গত তিনমাস পূর্বে পুনঃরায় দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কিন্তু বাতিলকৃত ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে বাস্তবায়নকৃত কাজসহ না
না বিষয়ে চুড়ান্ত নিস্পত্তি ও দাপ্তরিক কাজকর্ম সম্পন্ন না হওয়ায় পরবর্তী ঠিকাদারকে কার্যাদেশ প্রদানে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে।
ইউএনও সালমা খাতুন জানান, পূর্বের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কার্যাদেশ বাতিলের পর দ্রুত ওই রাস্তার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার ল্েয নির্বাহী প্রকৌশলী ময়মনসিংহের সাথে সমন্বয় করে আসছি। আশা করি খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ওই সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হবে।