সাইফুল ইসলাম তালুকদার, ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) :
১৯৭১ সালের ৯ ডিসেম্বর পাক হানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয়েছিলো ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ থানা। নিজ থানাকে শত্রু মুক্ত করতে দামাল ছেলেরা দীপ্ত শপথ নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকহানাদার বাহিনীর উপর।
১৩ অক্টোবর বড় আকারে হামলা চালানোর পূর্বে উপজেলার মাইজবাগ এলাকার আ. রহিম মৌলভীর বাড়িতে বসে আক্রমনের পরিকল্পনা করা হয়। পরে কাজী আলম কোম্পানীর প্লাটুন কমান্ডার হাবিবুর রহমান হলুদ, আলতাব কোম্পানীর প্লাটুন কমান্ডার কাজী হাসানুজ্জামান হীরু ও হাবিবুল্লাহ খান কোম্পানীর প্লাটুন কমান্ডার মতিউর রহমানের নেতৃত্বে আক্রমন চালানো হয়।
৩টি কমান্ডের প্রায় ৩০জন মুক্তিযোদ্ধা মাইজগা রেলওয়ে ব্রীজ ও টেলিফোন লাইন বিছিন্ন করে। পরে ময়মনসিংহ- কিশোরগঞ্জ মহাসড়কের উপর কটিয়াপুরী ব্রীজটি বিধ্বস্ত করার সময় প্রভাত হয়ে যায় কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা অসীম সাহসিকতায় ৩ ভাগে বিভক্ত হয়ে তিন দিক থেকে থানায় আক্রমন করলেও সে আক্রমন ব্যর্থ হয়। এই যুদ্ধে ৭জন বীর মুক্তিযোদ্ধা মতিউর রহমান, সামছু, আনোয়ার, মান্নান, তাহের, আ. খালেক ও হাতেম আলী শহীদ হন । ব্যর্থ হবার পর এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা দেশমাতাকে পাকবাহিনীর হাত থেকে মুক্ত করার লক্ষ্যে ৮ ডিসেম্বর রাতে আক্রমন চালায়। কিন্তু একযোগে থানা আক্রমনের ভয়াবহতায় ভীত হয়ে পাকবাহিনী ও তাদের দোসররা সুকৌশলে থানা থেকে পালিয়ে যায়। সেই থেকে ৯ ডিসেম্বর দিনটি ঈশ্বরগঞ্জ বাসীর গর্বের দিন।
ওই যুদ্ধ সম্পর্কে যুদ্ধকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান হলুদ বলেন, আমরা ৩ কোম্পানীর ৩ প্লাটুন মুক্তিযোদ্ধা ঈশ্বরগঞ্জকে শত্রুমুক্ত করার অঙ্গীকারের ফলে ঈশ্বরগঞ্জ শত্রুমুক্ত হয়। আর এখন এ ইতিহাস ভবিষ্যত প্রজন্মকে জানাতে হবে। এই দিনে দেশ স্বাধীন না হওয়ার পরও ঈশ্বরগঞ্জ মুক্ত হওয়ায় আপামর জনতার মাঝে দেখা দিয়েছিলো আনন্দের বন্যা উঠেছিলো লাল সবুজের পতাকা।
৯ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের স্মরণে সরকারী উদ্যোগে থানার সাথে এবছর একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করা হয়েছে। এদিনটিকে যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের লক্ষে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে।