গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি :
‘মৃত মিটার’ আসছে জীবিত ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল! সেই বিল থেকে মুক্তির জন্যে ময়মনসিংহের গৌরীপুর উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম ঘুরছেন এ দপ্তর থেকে ওই দপ্তরের টেবিলে। মৃত মিটারে ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড গৌরীপুর বিদ্যুৎ সরবরাহের কার্যালয় থেকে দেয়া হয়েছে ৮লাখ ৮৮হাজার ৫৩৩টাকা বিল। উৎকন্ঠায় পুরো পরিবার!
এ দপ্তর এর আগেও উপজেলার ২নং গৌরীপুর ইউনিয়নের কোনাপাড়া গ্রামের আলাল উদ্দিনের পুত্র মুদি দোকানী মো. হেলাল উদ্দিনকে ২০২০সালের নভেম্বর মাসে ৯লাখ ২৪হাজার ৩২৭টাকার বিদ্যুৎ বিল প্রদান করে। এ ঘটনাটি দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশের পর দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তদন্ত আর নানা ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই মুদি দোকানী রেহাই পেতে না পেতেই এবার খড়গ কৃষকের ঘাড়ে।
সরজমিন ও দালিখিক কাগজপত্রে দেখায় যায়, বেকারকান্দা গ্রামের মৃত মীর হোসেনের পুত্র মো. সাইফুল ইসলাম একজন কৃষক। তিনি নিজের জমিতে পানি উত্তোলনের জন্য সেচ লাইন গ্রহণ করেন। তার সেচ মিটার নং ই-২৮৬৯৪০, গ্রাহক নং ৭৫৭৪৪৫৩৮, হিসাব নং ৩১৩/৪২৯৪। তার এ মিটারের নামে ২০১৯সনের ১৯ ফেব্রুয়ারি তারিখে ৩৫হাজার ২৪টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তৎকালীন আবাসিক প্রকৌশলী (সহঃপ্রকৌ) মো. তহুর উদ্দিন। এ কর্মকর্তাই ওই বছরের ময়মনসিংহের বিদ্যুৎ আদালতের বিজ্ঞ অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ কৃষকের নামে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরেও অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ ব্যবহার করে সেচ পাম্প দিয়ে পানি উত্তোলনের ঘটনায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলার প্রেক্ষিতে কৃষক মো. সাইফুল ইসলামকে ২২হাজার ৫০৪ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করার পরেও বিদ্যুৎ বিভাগের দেয়া ২৩হাজার ২০০ইউনিটের বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের ৩৫হাজার ৮৭টাকা ৪মার্চ এবং আদালতের ধার্য্যকৃত জরিমানা ১হাজার ৮টাকা ও বিদ্যুৎ লাইন বিচ্ছিন্নের আরসি/ডিসির জন্য ৬শ টাকা ওই বছরের ১১মার্চ জমা দেন। বিদ্যুৎ ব্যবহার না করেও ৭৯৫ইউনিট বিদ্যুতের অতিরিক্ত বিল প্রদানে বাধ্য হন এই কৃষক। এরপর থেকেই ওই বিদ্যুৎ মিটারটি তারবিহীন অবস্থায় বিদ্যুতের খুঁটিতে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকে। বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন মিটারটিতে জং ধরছে। খুঁটিতে থাকা কাঠও পচে গেছে।
দেয়া বিদ্যুৎ বিল পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২১সালের এপ্রিল মাসে ২২হাজার ২৫০টাকা, মে মাসে ২হাজার ৬৮৪টাকা, জুন মাসে ২হাজার ৬৮৪টাকা, জুলাই মাসে ৪লাখ ১৬হাজার ১৮৭ টাকা, আগস্টে ২৩হাজার ৩৫৯টাকা, সেপ্টেম্বরে ১লাখ ৩৭হাজার ৩০৮টাকা, অক্টোবরে ১লাখ ৩৯হাজার ১৭৯টাকা, নভেম্বরে ১লাখ ৩৯হাজার ৮৩৯টাকা এবং ডিসেম্বর মাসে ১হাজার ৭২৪টাকা। এ প্রসঙ্গে কৃষক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী বরাবরে ভৌতিক বিদ্যুৎ থেকে মুক্তির জন্য আবেদন করেছি। কোনো সমাধান দেননি। তার স্ত্রী মোছা. রওশনারা আক্তার বলেন, এই বিলের জন্যে ঘুরতে ঘুরতে আমার স্বামী অসুস্থ্য হয়ে পড়েছেন। রাতে ঘুমাতে পারেনা, শুধু টেনশন, আর বলে এই বিলের কী হবে! আমার ছেলের লেখাপড়াও বন্ধ হয়ে গেছে। এ প্রসঙ্গে গৌরীপুর আবাসিক প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, কৃষকের আবেদন নেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যেই বিলটি সংশোধনের ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গ্রাহক হয়রাণি ও ভৌতিক বিদ্যুৎ বিল তৈরি সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন গৌরীপুর উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মো. শফিকুল ইসলাম মিন্টু। তিনি বলেন, এ ধরনের কর্মকা-ের কারণে সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুন্ন হচ্ছে। বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন গৌরীপুর শাখার সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল কালাম মুহাম্মদ আজাদ বলেন, ভৌতিক বিলের এসব ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। এতে গ্রাহকরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। গ্রাহকদেরকে হয়রানির সঙ্গে জড়িত বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের চাকুরিচ্যুতসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ অতীব প্রয়োজন।