শাহ্ আলম ভূঁইয়া, নিজস্ব প্রতিবেদক, নান্দাইল :
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরউত্তরবন্দ গ্রামের দরিদ্র সিদ্দিক মিয়ার পুত্র মো. বাদল মিয়া(৪২)।দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত ছিলেন তিনি। কোনভাবেই ঘুরছিলনা তার সংসারের চাকা।প্রতিনিয়ত তিনি দারিদ্র্যের সাথে যুদ্ধ করছিলেন। কিন্তু দারিদ্র্য তার পিছু ছাড় ছিলনা।
সুখ নামক সোনার হরিণ ধরতে একদিন তিনি বাড়ী ছাড়েন। ঢাকায় একটি টেক্সটাইল মিলে শ্রমিকের কাজ শুরু করেন। কিন্তু সেখানে ভাগ্য খোলেনি।কোমরের হাড় ক্ষয়রোগে আক্রান্ত হন তিনি। চলে আসেন বাড়ীতে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে কিছুটা ভাল হন তিনি।
স্ত্রী সহ২ছেলে এবং ১ মেয়ে নিয়ে অভাবের তাড়নায় তিনি হয়ে পড়েন দিশেহারা। ভারী কোন কাজ তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। তাই সংসারের হাল ধরতে ধার দেনা ও কষ্টে জমানো ১৭ হাজার টাকা দিয়ে তিন বছর পূর্বে তিনি আখ মাড়াই করা মেশিন এবং ব্যাটারি চালিত একটি ভ্যান ক্রয় করেন। আর শুরু করেন আখের রস বিক্রি। এখন আখের রস বিক্রির অর্থেই চলছে তার ৫ সদস্যের পরিবার। আখের রসে ভাগ্য বদলেছে বাদল মিয়ার।
এখন প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত স্থানীয় বিভিন্ন হাট-বাজার এবং বিদ্যালয়ে সামনে আখের রস বিক্রি করেন বাদল মিয়া। মেশিন চালু করতে না করতেই শেষ হয়ে যাচ্ছে তার আখের রস। প্রতি গ্লাস বিক্রি করেন ১০ টাকায়।
শীত বা গরমে প্রতিদিন গড়ে ২ হাজার টাকার রস বিক্রি হয়। খরচ বাদ দিয়ে প্রতিদিন আয় হয় ৯০০-১০০০ টাকা। মাসে আয় হয় প্রায় ২৭ হাজার টাকা। এ দিয়ে ভালোভাবেই চলে তার সংসার।
এখন সংসারে নেই কোনো ঋণের বোঝা। নিজের ভাগ্য নিজেই বদলে ফেলেছেন। সংসারে এসেছে স্বচ্ছলতা। বাদল মিয়া এখন অনেক ভালো আছেন।
বাদল মিয়া জানান, ময়মনসিংহের ভালুকার মল্লিকবাড়ির আবু তাহেরের নিকট থেকে তিনি পাইকারী দরে আখ কিনে আনেন। প্রতিদিন বাড়ি থেকে তিনি আখের চামড়া ছড়িয়ে বাজারে নিয়ে যান। চাকা ঘুরানো মেশিনের মাধ্যমে তা রস করে জনগণের কাছে বিক্রি করেন। একটা আখ থেকে ৩/৪ গ্লাস রস হয়ে থাকে। পরিশ্রম কম, তাই এটাকে পেশা হিসেবেই বেছে নিয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, সারা বছরই আখ পাওয়া যায়। সারা বছরই তিনি রস বিক্রি করেন।স্থানীয় বাজারগুলোতে তিনি আখের রস বিক্রি করেন। তবে চৈত্র-বৈশাখ মাসে রসের চাহিদা বেশি থাকে। রমজান মাসে রোজাদারদের কাছে এ রসের চাহিদা থাকে খুবই বেশি।
সরেজমিন দেখা যায়,শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ভ্যানে বাদল মিয়া বীরকামট খালী দক্ষিণ বাজারে আখের রস বিক্রি করছেন। ভ্যানেই বসিয়েছেন আখ মাড়াই মেশিন। ইঞ্জিন চালিত ভ্যানের এক পাশে রয়েছে আখ। রয়েছে বালতি ভর্তি পানি,গ্লাস,রস ছাকার ছাঁকুনি ও আনুসাঙ্গিক জিনিসপত্র।
আখের রস খেতে স্থানীয় কিছু মানুষ তার ভ্যানের কাছে ভিড় করেছেন। বাদল মিয়া
প্রত্যেকের হাতে কাঁচের গ্লাস ভর্তি আখের রস তুলে দিচ্ছেন। আখের রস খেয়ে সবাই তৃপ্তি পাচ্ছেন। কেউ কেউ আবার একের অধিকও খাচ্ছেন।অনেকেই আবার বোতল ভরে আখের রস পরিবারের জন্য বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। শুধু বড়রা নয়, বাজারের কিন্ডারগার্টেনের ছোট শিক্ষার্থীরা ও তাদের অভিভাবকরাও আখের রস পান করতে ছুটে আসছেন।
আখের রস খাচ্ছিলেন রাজাপুর ফাযিল মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো.হাদিউর রজমান। তিনি বলেন, আমি আখের রস খুব পছন্দ করি।রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম উনি আখের রস বিক্রি করছেন। আমি রস খেলাম এবং খু্ব তৃপ্ত হলাম।
স্থানীয় যুবক দুলাল মিয়া বলেন,আখের রস খুবই ভাল। আমার খু্ব পছন্দ। আমি প্রায়ই এই ভাইয়ের কাছ থেকে রস খাই। রসের মানও খুব ভালো।
মো.বাদল মিয়া তৃপ্তির হাঁসি হেসে বলেন,আখের রস বিক্রি করে আমি বেশ লাভবান। আমার সংসারে এখন অভাব নেই। স্বচ্ছলতা ফিরে এসেছে। সংসারের খরচ মিটিয়ে প্রতিমাসে অনেক আয় হচ্ছে। আমি এখন অনেক সুখী।