স্টাফ রিপোর্টার :
ময়মনসিংহে পৃথক ক্লুলেস হত্যাকান্ডে তিন ঘাতককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মাঝে তানজিল মিয়া হত্যাকান্ডের ৪৮ ঘন্টার মধ্যে মুলহোতা শরীফ মিয়াকে নরসিংদির শিবপুর থেকে গ্রেফতার করে কোতোয়ালি পুলিশ এবং পরকিয়ার জেরে তারাকান্দার বাবুল মিয়া হত্যায় সখিনা বেগম ও তার স্বামী শাহজাহানকে গ্রেফতার করে তারাকান্দা থানা পুলিশ। পুলিশ সুপার মাছুম আহাম্মদ ভুঞা বৃহস্পতিবার দুপুরে তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার আরো বলেন, গত ৪ সেপ্টেম্বর কোতোয়ালী থানার চকনজু গ্রামের মির্জা পার্কের পূর্ব পাশে মির্জা মঞ্জুরুল হকের পুকুরে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ পাওয়া যায়। এ লক্ষে জিডি নং-৩৫৮ তারিখ-০৪/০৯/২০২৩ হয়। পরবর্তীতে লাশের নাম-ঠিকানা সনাক্ত করে। পরে ওসি শাহ কামাল আকন্দের পরিকল্পনায় থানার এসআই নিরুপম নাগ, এসআই আনোয়ার হোসেন, এএসআই সুজন চন্দ্র সাহাসহ পুলিশের একটি চৌকষ দল অনুসন্ধান শুরু করেন।
স্থানীয়ভাবে প্রাপ্ত তথ্যাদি ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ফুলপুরে মোঃ শরীফ মিয়াকে নরসিংদীর শিবপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত শরীফ জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, নিহত তানজিল মিয়া ও গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ শরীফ মিয়াসহ একত্রে বিভিন্ন সময়ে একসাথে বিভিন্ন ধরনের চুরি করত। চোরাই মালের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে তাদের মধ্যে কলহ ছিল। এরই জের ধরে গত ৩ সেপ্টেম্বর ভালুকার সীডষ্টোর এলাকা থেকে আসামী শরিফসহ আরো একজন পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে তানজিলকে হত্যার উদ্দেশ্যে রাত আটটারদিকে চুরখাই এলাকায় নিয়ে আসে। এরপর তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে একত্রে মাদক সেবন করার এক পর্যায়ে আসামী শরীফ মিয়ার পরিহিত কোমরের বেল্ট দিয়ে গলা পেচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ মির্জা মঞ্জুরুল হকের পুকুরে ফেলে রেখে চলে যায়। এ ব্যাপারে কোতোয়ালী মডেল থানায় মামলা নং-২৫, তারিখ-০৭/০৬/২০২৩ হয়।
অপরদিকে তারাকান্দায় পরকিয়া প্রেমের জের ধরে নিহত বাবুল মিয়া হত্যায় পরকিয়া প্রেমিকা সখিনা বেগম ও শাহজাহান মিয়া নামে দুইজনকে গ্রেফতার করে। তিনি বলেন, গত ২৪ আগষ্ট সিদলা বিল এলাকার একটি পুকুর পাড় থেকে মাটি খুড়ে পানের আড়তের কর্মচারী ভিকটিম বাবুল মিয়ার লাশ উদ্ধার করে। এদিকে বাবুল মিয়া নিখোজের জিডি হলে এসআই শাহাদত আলম খান তদন্তকালে গাজীপুর মেট্রোপলিটনের টঙ্গী পশ্চিম থানার বাদাম নামক স্থানে অভিযান পরিচালনা করে ভিকটিম বাবুল মিয়ার নিখোজ হওয়ার ঘটনায় জড়িত আসামী মোছাঃ সখিনা বেগম (৪০) ও তার স্বামী রাজমিস্ত্রী মোঃ শাহজাহান মিয়াকে আটক করে। পুলিশ সুপার আরো বলেন, মোছাঃ সখিনা বেগমের সাথে বাবুল মিয়ার পরকিয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিল। সখিনার স্বামী শাহজাহান মিয়া জানতে পেরে ক্ষিপ্ত হয়ে বাবুল মিয়াকে হত্যার চাপ দিলে পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ২৪ আগস্ট সখিনা বেগম ঢাকা থেকে এসে তারাকান্দার বিসকা ইউনিয়নের খিচা নামক স্থানে অবস্থান করে। আসামী মোঃ শাহজাহান মিয়া নেত্রকোনার পূর্বধলার মহিষবেড় এলাকায় অবস্থান করে। সখিনা বাবুল মিয়াকে ফোন করে ডেকে এনে মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে অপহরণ করে অজ্ঞাতনামা সিএনজি যোগে পূর্বধলর মহিষবেড় এলাকায় তার বাড়ির কাছে একটি জঙ্গলে নিয়ে যায। মোঃ শাহজাহান মিয়া ও তার আত্মীয় অপর একজন আসামী সখিনা বেগমকে বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়ে বাবুল মিয়াকে নেত্রকোনার পূর্বধলা মহিষবেড় এলাকায় জয়নাল আবেদীন মাস্টারের পুকুরের দক্ষিণ পাশে নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং লাশ গুম করার উদ্দেশ্যে সিদলা বিলের মাঝখানে সরকারি পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে মাটি নিচে পুতে রাখে। পরবর্তীতে আসামীদের দেওয়া তথ্য মতে গত ৬ সেপ্টেম্বর গ্রেফতারকৃতদের তথ্য মতে, অভিযান পরিচালনা করে মাটি খুড়ে ভিকটিম বাবুল মিয়ার অর্ধগলিত মৃতদেহ উদ্ধার করেন। এই ঘটনায় তারাকান্দা থানার মামলা নং-০৬ দায়ের করে।